কমনওয়েলথ গেমসে সেরার সেরা বঙ্গসন্তান অচিন্ত্য। তাঁর হাত ধরেই ভারতের ঝুলিতে এসেছে সোনার পদক। চলতি কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের পদক সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬। ২০ বছর বয়সি অচিন্ত্য শিউলি পুরুষদের ৭৩ কিলোগ্রাম ভারোত্তলন বিভাগে সোনার পদক জয় করলেন। অচিন্ত্য স্ন্যাচ বিভাগে ১৪৩ কেজি ওজন তুলেছেন। পাশাপাশি ক্লিন অ্যান্ড জার্ক বিভাগে তিনি ১৭০ কিলোগ্রাম ওজন তুলে দেশের হয়ে এক নয়া রেকর্ড গড়লেন। মোট ৩১৩ কেজি ওজন তোলার সঙ্গেই বঙ্গ সন্তানের হাত ধরেই তৈরি হল ইতিহাসের। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতে বাংলা তথা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন অচিন্ত্য শিউলি। তরুণ ওয়েটলিফটারের সংগ্রামের কথা শোনালেন তাঁর ছোটবেলার কোচ অষ্টম দাস। ঠিক কী বলেছেন অচিন্ত্যর কোচ?
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় অচিন্ত্যর ছোট বেলার কোচ অষ্টম দাস বলেন, '২০১০ সালেই প্রথম ভারোত্তলনে হাতেখড়ি অচিন্ত্যর। দাদার হাত ধরেই এখানে আসা। ছোট থেকে অসম্ভব পরিশ্রমী স্বভাবের ছিল অচিন্ত্য। ২০১৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসার সামলাতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় দুই ভাইকে। তার মধ্যেই অচিন্ত্যর প্র্যাকটিস জারি থাকে। তিন বেলা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করত ও। ওর লক্ষ্য ছিল পদক জয়, তবে কমনওয়েলথ নয় সেই সঙ্গে অলিম্পিকেও পদক জয় ওর লক্ষ্য। অসম্ভব গতি ছিল ওর মধ্যে। আমি নিজেও ওর সোনা জয়ের ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি জানতাম ওর শরীর যদি ঠিক থাকে তাহলে ও সোনা জিতবেই। ওর সোনা জেতাই আমরা খুবই খুশি'।
প্রবল আর্থিক সমস্যা সত্বেও নিজের প্র্যাকটিসে কখনও খামতি রাখেননি অচিন্ত্য। জল মুড়ি খেয়েও কখনও কখনও প্র্যাকটিসে নামতেন। গ্রামের ছেলের সোনা জয়ের খবর গ্রামে এসে পৌঁছাতেই দেওলপুর গ্রাম জুড়েই খুশির হাওয়া। বাবা ছিলেন পেশায় ভ্যান চালক। বেশ কয়েকবছর আগেই মারা গিয়েছেন। তারপরই সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। ভাইকে আগামীর পথ দেখাতে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দেন দাদা। সোনা জিতেই অচিন্ত্য এই পদক দাদা ও কোচকে উৎসর্গ করেছেন।
সোনার ছেলের পদক জয়ের পরই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক টুইট বার্তায় লেখেন, “আমাদের সবার কাছে গর্বের মুহূর্ত যে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ অচিন্ত্য শিউলি কমনওয়েলথ গেমসে তৃতীয় সোনা জিতেছে। ওঁকে আন্তরিক অভিনন্দন। তোমার সাফল্য দেশের অগুনতি তরুণের কাছে অনুপ্রেরণার কাজ করবে। ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।”
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও শেয়ার করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, গেমসে অংশগ্রহণের আগেই অচিন্ত্যর সঙ্গে আমার কথা হয়, ও জানায় কীভাবে ওর দাদা-মার থেকে ও সাপোর্ট পেয়েছে।পাশাপাশি অচিন্ত্য শিউলিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি এই টুইট বার্তায় লেখেন ভারতকে গর্বিত করে আপনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আন্তরিক অভিনন্দন!