Igor Stimac: অনেক আশা নিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপে (AFC Asian Cup) খেলতে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া। তবে তিন ম্যাচেই দুর্বলভাবে আত্মসমর্পণ করে গ্রুপ পর্বেই ছুটি হয়ে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুই গোলের পর, উজবেকিস্তানের কাছে তিন এবং সিরিয়ার কাছে এক গোল হজম করে বাড়ি ফিরছে টিম ইন্ডিয়া।
আর এএফসি এশিয়ান কাপে হাফডজন গোল হজম করে দেশে ফেরার মধ্যেই হঠাৎ করেই ইগর স্টিম্যাচের কোচের আসন নড়ে গিয়েছে। গত অগাস্টেই একপ্রস্থ নাটকের পর ক্রোয়েশিয়ান কোচের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা।
দুই বছরের চুক্তি বর্ধিত করলেও হঠাৎ করেই স্টিম্যাচের প্রস্থানের জল্পনা তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রথমত, এশিয়ান গেমসে কোচের স্ট্র্যাটেজিতে খুশি নয় ফুটবল মহল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক ফুটবল যেভাবে কার্যত আটকে দিয়েছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে, তাতে সমাদৃত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। তবে উজবেকিস্তান এবং সিরিয়া ম্যাচের শোচনীয় পারফরম্যান্স কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে স্টিম্যাচকে। বিশেষ করে সিরিয়া ম্যাচ। শারীরিকভাবে শক্তিশালী সিরিয়া ম্যাচে কোচ দলের সেরা অস্ত্রদের একসঙ্গে না নামিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে নামিয়ে চমকে দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই করেছিলেন। তবে তাতে ফলাফল নেতিবাচক হওয়া থেকে আটকাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ত, হঠাৎ করেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে, স্টিম্যাচ দলের প্রভাবশালী ফুটবলারদের ঘাঁটাতে চান না। তাই তারকা ফুটবলারদের কথামতোই দল নির্বাচন করেন। টিম ইন্ডিয়ার অন্দরমহলের এই প্রভাবশালী লবিই দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন-এ স্পষ্ট বলা হয়েছে, দলের এমন লবিং ফেডারেশন মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ট্যাগ করে বড় বার্তা স্টিম্যাচের! নড়ে গেল দেশের ফুটবল
তৃতীয়ত, এশিয়ান কাপের আগে স্টিম্যাচ জোড়া পরামর্শ দিয়েছিলেন। গোলকিপিং কোচ এবং সেট পিস স্পেশ্যালিস্টের নিয়োগ। গোলকিপার কোচ নিয়োগ করার পথে ফেডারেশন না হাঁটলেও ওয়েস্ট হ্যামের প্রাক্তন ফুটবলার ট্রেভর সিনক্লেয়ারকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে মাত্র তিন ম্যাচের জন্য স্টিম্যাচের প্রাক্তন ক্লাব সতীর্থকে দিতে হয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অতীতে কোচিংয়ের তো বটেই সেট পিস বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকা সিনক্লেয়ারকে এই বিশাল অর্থ খরচ করে নিয়োগ করা নিয়ে প্ৰশ্ন উঠে গিয়েছে ভারতের হতাশাজনক বিদায়ের পরেই।
চতুর্থত, ফেডারেশনের সঙ্গে স্টিম্যাচের টানা বিদ্রোহ ভালোভাবে নেয়নি কর্তারা। এশিয়ান গেমসের ঠিক আগে ইগর স্টিম্যাচ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেগি বার্তা রেখেছিলেন দল পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে। এরপর একাধিক ইস্যুতে ফেডারেশনের বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি নিজের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডলে। এতে ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের কাছে নিজের 'মসিহা' ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সমর্থ হলেও ফেডারেশন মোটেই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি জাতীয় দলে ক্রমাগত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলার খেলানোর পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন। যা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব নীতির বিরোধী।
এই সব ইস্যুতেই ফেডারেশন বেশ ক্ষিপ্ত ক্রোয়েশিয়ার কোচের ওপর। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে ফেডারেশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, "স্টিম্যাচের বক্তব্য আমাদের কাছে অস্বস্তির হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এমনকি সংস্থার নীতি, ভিশন, পরিকল্পনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। কারণ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ফান্ড পেয়ে থাকি।" আপাতত স্টিম্যাচ যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'চুপ' থাকেন, সেই কারণে তাঁকে লিখিত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে স্টিম্যাচকে নিয়ে এখনই তাড়াহুড়ো করার পক্ষপাতী নয় ফেডারেশন। ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারের খেলা রয়েছে শীঘ্রই। বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছনোর ভালো সম্ভবনা রয়েছে ভারতের। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে রয়েছে কাতার, কুয়েত এবং আফগানিস্তান। মার্চে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হোম-এওয়ে ম্যাচে খেলতে হবে। তারপর কাতারের মোকাবিলা করার আগে কুয়েতের মুখোমুখি হবে ভারত জুনে।
এই কোয়ালিফাইং রাউন্ডের সদর্থক ফলাফল বাঁচিয়ে দিতে পারে স্টিম্যাচের চাকরি। তবে সেখানেও ব্যর্থ হলে স্টিম্যাচের প্রস্থান কার্যত পাকা। এমনিতেই এশিয়ান গেমসে ভারতের ব্যর্থতার পর ক্রোয়েশিয়ান মিডিয়ায় চাওর হয়ে যায় বিখ্যাত ডায়নামো জাগ্রেবের কোচ হতে চলেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে ঘটনার প্রবাহ কোন দিকে গড়ায় তা জানার জন্য আর কয়েক মাস অপেক্ষা করতেই হবে।