ডুরান্ড কাপ অতীত। আপাতত এটিকে মোহনবাগানের পাখির চোখ এএফসিতে। ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগান বুধবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে মুখোমুখি হচ্ছে কুয়ালালামপুর সিটি এফসির বিরুদ্ধে।
গত বছর এএফসির ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালেই এফসি নাসাফের কাছে পরাস্ত হয়ে টুর্নামেন্ট অভিযান শেষ করে সবুজ মেরুন শিবির। হাবাস জমানা তারপরে খতম হয়েছে। কোচ হুয়ান ফেরান্দোর দায়িত্ব আপাতত সবুজ মেরুন শিবিরকে উপমহাদেশীয় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন করার দিকে আরও এগিয়ে দেওয়া।
তবে সেই লক্ষ্য মোটেই সহজ নয়। কুয়ালালাম সিটি এফসি বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ। ২৮ বছর পর মালয়েশিয়ান হেভিওয়েট দলটি এশীয় পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করতে নামছে।
আরও পড়ুন: বাগানের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী কুয়ালালামপুর সিটি, AFC-র হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ কোথায়, কোন চ্যানেলে দেখবেন
তবে ইন্টার-জোনাল সেমিফাইনালে ওঠার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না কুয়ালালামপুরের। গ্রুপ পর্বে ইন্দোনেশিয়ার পিএসএম মাক্কাসারের পরে রানার্স হয়েছিল কুয়ালালামপুরের দলটি। পরে গ্রুপ জি, এইচ এবং আই-য়ের শ্রেষ্ঠ রানার্স আপ দল হিসেবে পরবর্তী রাউন্ডে খেলার ছাত্রপত্র পায় কুয়ালালামপুর সিটি।
এশিয়ান জোনে এরপরে ভিয়েতনামের ভিটেল এফসি এবং ইন্দোনেশিয়ার সেই মাকাসার এফসিকে পিছনে ফেলে পৌঁছয় ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে।
মালয়েশিয়ান সুপার লিগে গত মরশুমে ষষ্ঠ স্থানে ফিনিশ করলেও মালয়েশিয়ান কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এএফসিতে খেলার টিকিট অর্জন করেছে।
এই প্ৰথমবার মালয়েশিয়ান ক্লাবটি মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগানের। কোচ ফেরান্দোর রণকৌশল ঘেঁটে দিতে পারেন কুয়ালালামপুরের তিন বিদেশি তারকা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, এই তিন তারকা পাওলো জসু, রোমেল মোরালেস, কেভিন রে মেনডোজা।
আরও পড়ুন: ইস্ট-মোহনের আইলিগ চ্যাম্পিয়ন বাঙালি এবার গোকুলামে! ডুরান্ডের মাঝেই বিরাট দলবদল
মালয়েশিয়ান লিগে এই মুহূর্তে যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে কুয়ালালামপুর সিটি। দলের নিউক্লিয়াস তিন বিদেশি। এর মধ্যে ফিলিপিন্সের জাতীয় দলে খেলা গোলরক্ষক কেভিন রে মেনডোজা দলের অন্যতম সম্পদ। তবে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তেকাঠির নিচে সম্ভবত ফিলিপিন্সের তারকাকে রাখার ঝুঁকি নেবেন না কোচ বজান হাদিক। এএফসি-র ৩+১ বিদেশি চয়নের নিয়ম মেনে কুয়ালালামপুরের দুর্গ সামলানোর দায়িত্ব থাকবে তরুণ আজারি ঘানির ওপর। তবে ডেনমার্কে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা কেভিন রে-কেও গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে নামিয়ে দিতে পারেন কোচ।
সন্দেশ জিংঘান, প্রবীর দাসরা সবুজ মেরুন শিবির ছেড়ে যাওয়ায় এটিকে মোহনবাগান রক্ষণ এখনও পরীক্ষিত নয় সেভাবে। ডুরান্ডে রাজস্থানের বিরুদ্ধেও ভেঙে পড়েছিল পোগবা, কার্ল ম্যাকহিউদের রক্ষণ। এবার সবুজ মেরুন শিবিরের রক্ষণকে শক্ত পরীক্ষায় ফেলতে পারেন কুয়ালালামপুর সিটির কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার রোমেল মোরালেস। এই নিয়ে দ্বিতীয় সিজন খেলছেন তিনি মালয়েশিয়ান ক্লাবটিতে। ৪০ ম্যাচে ১৮ গোল করে দলের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন তিনি। গত বছর মালয়েশিয়ান কাপের সর্বোচ্চ স্কোরারও ছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে বাড়তি সতর্ক হতেই হবে ফেরান্দোকে।
দলের অন্যতম সেরা তারকা আবার দলের ক্যাপ্টেন পাওলো জোসু। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে থাকায় স্কোয়াডের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে দারুন অবহিত তিনি। ব্রাজিলিয়ান এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কুয়ালালামপুর সিটি এফসির হয়ে ১০০-র বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। গোল করেছেন ৩৭টি। বড় ম্যাচে গোল করা কার্যত অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। দুই স্ট্রাইকারের কিছুটা পিছন থেকে অপারেট করেন তিনি। গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়াতে সিদ্ধহস্ত তিনি। কুয়ালালামপুরকে আটকাতে হলে জোসুকে আটকে সাপ্লাই লাইন কাটতেই হবে সবুজ মেরুন মিডফিল্ডারদের।
কোচ বোজান হাদিক ৪-৪-২ অথবা ৪-৩-২-১ ফর্মেশনে খেলান দলকে। এই ফর্মেশনের প্রতিষেধক হিসাবে কোচ ফেরান্দোর ভাবনায় নতুন স্ট্র্যাটেজি রয়েছে কিনা, তা দেখা যাবে বুধবারের সন্ধ্যাতেই।