শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর দিল্লি পুলিশ WFI সভাপতি ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। ২৩শে এপ্রিল থেকে যন্তর-মন্তরে WFI প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বসেছেন কুস্তিগীররা। এখন এফআইআর দায়ের হওয়ার পরও কুস্তিগীররা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তাঁরা বলেছেন শুধুমাত্র এফআইআর নয়, ব্রিজ ভূষণ সিংকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান চালিয়ে যাব। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক বিজয়ী ভিনেশ ফোগাট, যন্তর-মন্তরে আন্দোলনের অন্যতম মুখ, একটি প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন যে “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লি পুলিশের আশ্বাসের পরে লড়াই শেষ হয়নি। “এই লড়াই শুধু এফআইআর দায়ের করা নয়। এই লড়াই ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য, তাকে (সিং) শাস্তি দেওয়ার জন্য, তাকে জেলে পাঠানো এবং WFI সভাপতি পদ থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব”।
ফোগাট এদিন আরও বলেন, ‘প্রতিবাদী কুস্তিগীররা দিল্লি পুলিশের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। “আমরা শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রমাণ পেশ করব, কোনও কমিটি বা দিল্লি পুলিশের সামনে নয়। আমরা দিল্লি পুলিশকে বিশ্বাস করি না। আমরা ছয় দিন ধরে এখানে বসে আছি এবং দিল্লি পুলিশ সব জানার পরও এফআইআরও দায়ের করেনি’।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দিল্লি পুলিশ ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এরপরও প্রতিবাদী কুস্তিগীররা ক্রমাগত সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে সামিল রয়েছেন। দিল্লি পুলিশ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান এবং বিজেপি নেতা ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে দুটি এফআইআর দায়ের করেছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, পকসো আইন এবং প্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগীরদের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় এফআইআর করা হয়েছে। দুটি এফআইআরেই তদন্ত চলছে। আগের দিন, দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভকারী কুস্তিগীরদের আবেদনের ভিত্তিতে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। আদালতে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছিল যে শীঘ্রই যৌন হেনস্থার ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের করা হবে।
কুস্তিগীরদের চাহিদা কী?
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পরে, প্রবীণ কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট বলেছিলেন যে ব্রিজ ভূষণকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ব্রিজভূষণকে তার সকল পদ থেকে অপসারণের দাবিও তারা তুলেছেন। অন্যথায় তিনি তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে মহিলা কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক যন্তর মন্তরে বলেছেন যে এটি জয়ের প্রথম পদক্ষেপ, তবে ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে আমাদের বক্তব্য রেকর্ড করব।
গত কয়েকদিন ধরে যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ করছেন দেশের তাবড় কুস্তিগীররা। কুস্তিগীররাও দাবি করেছেন যে সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ তদন্তকারী কমিটির রিপোর্ট সামনে আনার। উল্লেখ্য গত জানুয়ারিতে কুস্তিগীররা যন্তর মন্তরে তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পর ক্রীড়া মন্ত্রক এই কমিটি গঠন করেছিল।
ব্রজভূষণ শরণ সিং-এর বক্তব্য
এর পরে, বিজেপি সাংসদ এবং ডব্লিউএফআই প্রধান ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং বলেছেন যে আমি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তে খুশি। তদন্তে নেমেছে দিল্লি পুলিশ। এমন অবস্থায় আমার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি তার জন্য প্রস্তুত।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কুস্তিগীরদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেস, টিএমসি, আম আদমি পার্টি এবং বাম সহ বেশ কয়েকটি দলের একাধিক নেতা যন্তর-মন্তরে তাদের আন্দোলনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। TMC সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টুইটবার্তায় লিখেছেন, “আমাদের সকলের উচিত প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের খেলোয়াড়রা দেশের গর্ব। তারা চ্যাম্পিয়ন। অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিচার হওয়া উচিত। সত্যের জয় হবেই”।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) কংগ্রেস সাংসদ দীপেন্দর হুডা বলেছেন যে রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তার তদন্ত হওয়া উচিত।