Advertisment

বাড়ি পোড়ানো হল রেনেডির ছাত্র, টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেনের! কোনওরকমে প্রাণ বাঁচল তারকা ফুটবলারের

হিংসায় বিধ্বস্ত দেশকে চ্যাম্পিয়ন করা তারকা মিডফিল্ডারের

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
renedy-india

কেরিয়ারে চরম অনিশ্চয়তা হাজির মণিপুর সন্ত্রাসে (টুইটার)

গৃহযুদ্ধে দীর্ণ মণিপুর। ইমফলের খংসাই ভেংয়ে যখন আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক বাড়িতে, সেই সময় কাকার বাড়িতে ছিল গামগৌহু মেতে। ব্যাগে স্রেফ ফুটবলের বুট এবং শংসাপত্র ফেলে দ্রুত চম্পট দেন সে। ভুটানে কয়েকদিন আগেই অনুর্দ্ধ-১৬ যুব দলের হয়ে জাতীয় দলের হয়ে সাফ কাপে খেলে এসেছেন। ভুটানের মাঠে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ক্যাপ্টেন হিসাবে। দেশে ফিরে তিনি ভাবতেই পারেননি এভাবে বাকি জীবন অনিশ্চয়তার যাঁতাকলে বন্দি হয়ে যাবে।

Advertisment

পূর্ব ইমফলের খোনসাই ভেং কুকি অধ্যুষিত এলাকা। সেই জায়গাই আপাতত হিংসায় ছারখার। নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক স্কুলে আশ্রয় নেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর জাতীয় মহিলা যুব দলের ক্যাপ্টেন গামগৌহু মেতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানায়, "আমার কাকার বাড়ি পুরো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। যে স্কুটি করে অনুশীলনে যেতাম, সেটাও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কয়েকটা ফুটবল বুট এবং শংসাপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। যে জায়গা থেকে আমার ফুটবল কেরিয়ার শুরু হয়েছিল, সেটাই আর নেই।"

জাতীয় দলের হয়ে ভুটান থেকে ফেরার পর আপাতত কাংপোপকি জেলায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটছে গামগৌহু মেতের। সেখানেই স্থানীয় মাঠ এবং জিমে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে সে কোনওরকমে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর থিমফু-তে সাফ কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন হয়েও বাড়ির জন্য কু ডাক দিত। সেমিফাইনালে মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে নামার সকালে গামগৌহু মেতের ফোন টেক্সট মেসেজে জানতে পারেন টেগনুপাল জেলায় পালেলে তাঁর নিজের বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। সম্প্রতি খবরেও জানা গিয়েছে, পালেলে গত সপ্তাহে নতুন করে হিংসা শুরু হয়েছে।

গামগৌহু মেতে জানিয়েছে, "ম্যাচ শেষে পরেই বাড়িতে ফোন করেছিলাম। বাবা-মা ঠিক আছে কিনা জানার জন্য উদগ্রীব ছিলাম।" মেতে আপাতত অপেক্ষায় কবে এলাকায় শান্তি ফিরলে সে বাড়ি ফিরবে। পদক জয় সেলিব্রেট করতে পারবে পরিবারের সঙ্গে। "ভেবেছিলাম বাড়িতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে এই জয়ের আনন্দ ভাগ করে নেব। তিন দিদি রয়েছে বাড়িতে। সকলেই দারুণ রান্না করেন। আমার জন্য ওঁরা পর্ক এবং চিকেন রান্না করত। তবে ওখানে পরিস্থিতি এখনও অশান্ত। তাই এখানেই থাকতে হচ্ছে।" জানাচ্ছে গামগৌহু মেতে।

ইমফলের ক্ল্যাসিক ফুটবল একাডেমিতে ট্রেনিং করার জন্য প্রতিভাবান এই মিডফিল্ডার চলে এসেছিলেন কাকার বাড়িতে। যেখানে তাঁকে মেন্টরশিপ করছেন স্বয়ং রেনেডি সিং। জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা ক্ল্যাসিক ফুটবল একাডেমির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। গত জুনে জাতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের আগেও রেনেডি নিজে শিলিগুড়িতে মেতেইয়ের জন্য থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন।

মেতে এবং তাঁর কাকা এখনও মনে করতে পারেন, ৪ মে-র ঘটনা। যখন তাঁদের পালিয়ে আসতে হয়েছিল। স্থানীয় স্কুলে সাহায্যের জন্য নিরাশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল হিংসা কবলিত এলাকায়। মেতের কাকা লুংখসেই জানাচ্ছিলেন, "মাঝরাতে ইন্ডিয়ান আর্মি এসে আমাদের উদ্ধার করে। তারপর কাছাকাছি নাগা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের। আমরা পালিয়ে আসার পর ১৫০০ উন্মত্ত জনতা স্কুল জ্বালিয়ে দেয়। সমস্ত গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। একজন ছবি পাঠিয়েছিল। সেই ছবিতে দেখেছি সমস্ত কিছুই কেমন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।"

৩ কিমি দূরে নাগা এলাকায় হেঁটে যাওয়ার সেই স্মৃতি এখনও মেতের কাছে দগদগে, "হাঁটার সময় আমরা রীতিমতো ভীতিপ্রদ ছিলাম। জানতে পারি, আমাদের সমস্ত জায়গা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের আসাম রাইফেলস-এর দ্বিতীয় ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে বেশ কয়েক দিন ছিলাম।"

শৈশব থেকেই বড় হয়েছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলেমিশে। চলতি সন্ত্রাস নিয়ে এখনও যেন বিশ্বাস হয় না মেতের। "ক্লাবেও মেইতেই সম্প্রদায়ের বন্ধু রয়েছে। আমরা এখনও নিয়মিত কথাবার্তা বলি। তবে সংঘাত নিয়ে আলোচনা করি না। আমরা স্রেফ জিজ্ঞাসা করি, কী খাবার খেয়েছ? যা হচ্ছে, তা দেখে ভীষণ খারাপ লাগছে।" বলছে জাতীয় দলের তারকা।

Manipur Manipur Violence
Advertisment