Advertisment

EXCLUSIVE: মারাদোনার সঙ্গে একটাও ছবি নেই! আক্ষেপ নিয়েই কফিনবন্দি দিয়েগোর 'শিক্ষক'

মারাদোনার ফুটবল শিক্ষক ছিলেন তিনি। খেলা দেখতে ছুটে যেতেন নাপোলির মাঠে। তাঁর আক্ষেপ, পুত্রের বিষাদ একাকার হয়ে যাচ্ছে বুধবারের পর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বেখেয়ালি, বেহিসেবি রাজপুত্তুর। চলতেন আপন মর্জিতে। মেসি হোক বা পেলে- খ্যাতির তোয়াক্কা না করেই বিশ্বের নক্ষত্রপ্রতিম ফুটবলারদের বিঁধতেন মতের অমিল হলেই। তবে দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার সম্মানের সিংহাসন সবসময়ে বরাদ্দ ছিল একজনের জন্যই- আলসেদিস এডগার্ডো ঘিঘিয়া। মারাদোনা যদি ফুটবল পর্দার ব্লকবাস্টার অমিতাভ হন, রাজেশ খান্না নিঃসন্দেহে উরুগুয়ান কিংবদন্তি। ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করে যিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকেই গুরুপ্রণাম করতেন আকাশের নক্ষত্র হয়ে যাওয়া রাজপুত্র।

Advertisment

Alcedes Ghiggia আলসেদিস ঘিঘিয়া

ঘিঘিয়া চলে গিয়েছেন প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। ঘিঘিয়ার গন্তব্যেই পাড়ি দিলেন আদরের মারাদোনা। কত কম বয়সে! পুত্র আর্কাদিও ঘিঘিয়া বুধবারের পর পিতৃবিয়োগের শোক অনুভব করছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলে সরাসরি বলে দিলেন, "কিস্যু ভাল লাগছে না। স্রেফ ভাল লাগছে না। মারাদোনা আমার কাছে, আমার পরিবারের কাছে সাক্ষাৎ ঈশ্বর। আমার ফুটবল প্রেম শুরুটা হয় বাবাকে দেখে। পরে মারাদোনার প্রেমিক হয়ে উঠেছি, যত দিন গিয়েছে।"

আরো পড়ুন: মাদারের কলকাতা এখনও হৃদয়ে, সাক্ষাৎকারে অকপট মেসি-মারাদোনার আদরের ‘বুরু’ l

মারাদোনা আসলে মিথ। তাঁর সঙ্গে কল্পকথারা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে! অন্যদিকে পেলে, মারাদোনা কিংবা বেকেনবাওয়ারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের সরণিতে না হেঁটেও আপন খেয়ালে কিংবদন্তি ঘিঘিয়াও।

Alcedes Ghiggia বিশ্বকাপের ফাইনালের সেই গোল

১৯৫০-এর ১৬ জুলাইয়ের রাত এক লহমায় তাঁর জার্সিতে বসিয়ে দিয়েছিল সুপারস্টারের তকমা। বিশ্বকাপের ফাইনালে উরুগুয়ের হয়ে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মাত্র ১টি গোল-ই ঘিঘিয়াকে বিশ্বফুটবল চিরকালীন আসন দেয় । বলা হয়, পেলে ও মারাদোনা যদি ফুটবল জগতের বিষ্ণু ও মহেশ্বর হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি সাক্ষাৎ ব্রহ্মা! আর ফুটবল বিশ্বের মিথ হয়ে যাওয়া সেই উক্তি, "মারাকানাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে তিনজন- ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, পোপ জন পল এবং আমি ঘিঘিয়া।"

Alcedes Ghiggia সযত্নে বিশ্বকাপে হাত ঘিঘিয়ার

তিন দশক, একটা প্রজন্মের ব্যবধান ছিল মারাদোনা, ঘিঘিয়ার। তবু সম্মান প্রদর্শনে কমতি ছিল না। মারাদোনার চোখে সিনিয়র ঘিঘিয়া ছিলেন ফুটবল বিশ্বের প্রথম সুপারস্টার। তাই দেখা হলেই আলিঙ্গন, নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরা। বাবার সঙ্গে মারাদোনার সম্পর্ক বলতে গিয়ে গলা যেন বুজে আসে পুত্র আর্কাদিও ঘিঘিয়ার। বর্তমানে মন্তেভিডিও-র স্থানীয় এক ক্লাবের ফুটবল প্রশিক্ষক তিনি। নিভে আসা গলায় জুনিয়র ঘিঘিয়া বলে চলেছিলেন, "মারাদোনা মানে আমাদের কাছে গোটা ফুটবল জগৎ। বিশ্ব ফুটবলের চিরকালীন প্রতীক। পেলে নন, বাবা সবসময় মারাদোনাকে হৃদয়ের কাছে রাখতেন। মাঠে ওঁকে দেখে বাবা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতেন। মারাদোনাও বাবাকে সম্মান জানাতেন।" তিনি বলে চলেছিলেন, "আমাদের সঙ্গে খুব কমবারই সাক্ষাৎ হয়েছে ওঁর। তবে বাবাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন উনি। বাবা প্রয়াত হওয়ার পর ফোন করেছিলেন। ফেসবুকে লেখেন, ঘিঘিয়া আমার ফুটবল প্রশিক্ষক।"

Ghiggia পুঁচকে আর্কাদিও ও সিনিয়র ঘিঘিয়া

Ghiggia ঘিঘিয়াদের দুই প্রজন্ম

মন্তেভিডিওর ঘিঘিয়ারা আসলে ইতালি থেকে এসেছিলেন। ঘিঘিয়া নিজেও ইতালির জার্সিতে পরে খেলেন। আর ইতালির নাপোলি থেকেই উত্থান মারাদোনার। সেই মনমাতানো ড্রিবলিং আর হরিণের মতো ক্ষিপ্র গতির দৌড়- পাগল করে দেয় সিনিয়র ঘিঘিয়াকে। ইতালিতে থাকাকালীন নাপোলির খেলা হলেই মারাদোনার আকর্ষণে স্টেডিয়ামে হাজির হতেন। চোখ ভরে দেখতেন জিনিয়াসের ম্যাজিক। ইতালি থেকেই সেই সরাসরি আলাপ প্রজন্মের ব্যবধান পেরিয়ে পারিবারিক সম্পর্কে এসে দাঁড়ায়।

Ghiggia and Oscar Tabarez জাতীয় দলের কোচ অস্কার তাবারেজের সঙ্গে ঘিঘিয়া

ষাটোর্ধ্ব আর্কাদিও সেই স্মৃতি আঁকড়েই বেঁচে থাকতে চান, "বাবা বহুবার ওঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আমি ওঁকে প্রথমবার দেখি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে লাজিও বনাম নাপোলি ম্যাচে। সেই ম্যাচের প্রতি মুহূর্ত এখনো ঘোর ধরিয়ে দেয়। বাবা আমাদের বারবার বলতেন মারাদোনা ক্ষণজন্মা প্রতিভা। সুপার হিউম্যান ফুটবলার। সম্পূর্ণ অন্য গ্রহের।"

কখনো বুয়েনস আয়ার্স, কখনো দুবাই থেকে সেই নম্বরের ফোন আর আসবে না ঘিঘিয়াদের ঠিকানায়। বুধবারের পর সব অতীত হয়ে যাচ্ছে। কফিনবন্দি হয়ে পড়ছে সিনিয়র ঘিঘিয়ার আক্ষেপ ও। আর্কাদিও মন খারাপ করা গলায় বলে দেন, "বাবার শেষদিনে আক্ষেপ করেছিলেন, মারাদোনার সঙ্গে একটা ছবিও তোলা হয়নি কোনোদিন। এটা ভয়ঙ্কর পাপ।" সেই 'অনুশোচনা' নিয়েই চলে গিয়েছেন ঘিঘিয়া। মারাদোনাও পাড়ি দিয়েছেন প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে, অনন্তের ওপারে।

Read the full article in ENGLISH

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Football Argentina Diego Maradona
Advertisment