গত নভেম্বরের কথা। ডেকার্স লেনে রাজ্য হকি সংস্থার অফিসে আচমকাই ঝুলিয়ে দেওয়া হলো তালা। বরখাস্ত হলেন পাঁচজন কর্মী। ১১০ বছরের ইতিহাসে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএ) এই ছবি দেখেনি। অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে। রয়েছেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিং, প্রাক্তন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সহ-সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। আশা একটাই, বঙ্গজ হকিতে ফিরবে সুদিন। নির্বাচনের অপেক্ষায় সবাই।
রাজ্য হকি এখন চূড়ান্ত ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে চলছে। আর এসবের মধ্যেই আসন্ন বেটন কাপের প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিএইচএ। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফিল্ড হকি টুর্নামেন্টের কথা ভেবেই ফের সবাই হাতে হাত দিয়ে কাজ শুরু করছেন। গত সোমবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে বেটন কাপের দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বিএইচএ। আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ১২২ তম বেটন কাপ। চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৬ দলীয় টুর্নামেন্ট হবে এবার। ১৫ দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আরেকটি দলের নাম জানা যাবে কিছু পরে। এদিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে পাওয়া গেল প্রাক্তন জাতীয় দলের ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যকে।
আরও পড়ুন: ডার্বির পর বিস্ফোরক সুব্রত, ছাড়লেন না ইস্ট-মোহন কোনও পক্ষকেই
গতবছর বেটন কাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ সালের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বেটন বন্ধ হয়েছিল। গুরুবক্স সিং বলছেন, "সাইয়ের মাঠে গতবার টার্ফ ঠিক ছিল না। আমাদের হকি ইন্ডিয়া জানিয়ে দিয়েছিল যে, ঘাসের মাঠে কোনওভাবেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যাবে না। এবার সল্টলেকে নীল রঙের নতুন অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলা হবে। দারুণ হয়েছে টার্ফটা। নতুন টার্ফে এটাই প্রথম টুর্নামেন্ট। আশা করছি সবাই উপভোগ করবেন।"
বেটন কাপে ধ্যানচাঁদের মতো কিংবদন্তিরা খেলে গিয়েছেন একসময়। টুর্নামেন্ট সাক্ষী থেকেছে বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই বেটন কাপ জৌলুস হারিয়েছে। বিএইচএ এখনও বলতে পারেনি যে, এই টুর্নামেন্টে কোন কোন অলিম্পিয়ানদের দেখা যাবে। কিন্তু তারা জানিয়েছে, ইন্ডিয়ান অয়েল ও ভারত অলিম্পিয়ানের হয়ে বেশ কিছু অলিম্পিয়ান খেলতে পারেন। দেশের প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান দিলীপ টিরকে থাকছেন টুর্নামেন্টে। সম্ভবত উদ্বোধনের দিনই পাওয়া যাবে তাঁকে। এটা তারা নিশ্চিত করেছে। তবে আয়োজকরা এটা বলতে পারেননি যে, সদ্যসমাপ্ত হকি বিশ্বকাপে খেলা কোনও প্লেয়ার অংশ নিচ্ছেন কি না।
ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, আর্মি একাদশ ও সাউথ সেন্ট্রাল রেলের মতো দেশের হেভিওয়েট দলগুলির সঙ্গেই খেলবে গতবারের কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন ইআরএসএ ও পাঞ্জাব স্পোর্টসের মতো স্থানীয় সাতটি টিম। খেলার ফর্ম্যাট নিয়ে আয়োজকরা যা বললেন, তার সারমর্ম অনেকটা এরকম। প্রাক কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে চারটি ক্লাব ও ভিন রাজ্যের আটটি দল খেলবে নক আউট। এবার স্পনসরের সমস্যাও মিটেছে। জেআইএস গ্রুপ স্পনসর করছে এই টুর্নামেন্ট। বিজয়ী দলের জন্য় থাকবে ২ লক্ষ টাকা, রানার্স পাবে ১.৫ লক্ষ টাকা। সেরা খেলোয়াড় পাবেন নগদ ১০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: দেশে সুযোগ মিলল না, ভুটানের হয়ে খেলতে কলম্বো যাচ্ছে জলপাইগুড়ির ছেলে
দেখতে গেলে মোট আঠারোজন হকি অলিম্পিয়ান জড়িয়ে আছেন এই রাজ্যের সঙ্গে। প্রয়াত লেসলি ক্লডিয়াস, কেশব দত্ত, গুরবক্স সিংহ, বীরবাহাদুর ছেত্রী, ভরত ছেত্রীর মতো আন্তর্জাতিক তারকারা একটা সময় এখানে দাপটের সঙ্গে হকি খেলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হকির কোনও অ্যাস্ট্রোটার্ফ নেই এই রাজ্যে। আগামী দিনে এই আক্ষেপ ঘুচতে চলেছে। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে অ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানো হতে পারে। ওই স্টেডিয়ামটা হকিকেই দিতে চায় তারা। এ প্রসঙ্গে গুরুবক্স বললেন, "রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারপরেই আমি স্টেডিয়াম দেখে এসেছি। স্টেডিয়ামে কিছুটা পরিবর্তন এনে ওখানেই অ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানো যেতে পারে। ওখানেই হতে পারে আন্তর্জাতিক মানের হকি স্টেডিয়াম। বিষয়টা কথাবার্তার পর্যায় রয়েছে।”
বিএইচএ-র সাধারণ সচিব বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বাংলার হকিপ্রেমীদের অত্যন্ত সুখবর শোনালেন। বললেন যে, অ্যাস্ট্রোটার্ফ পেলেই হকির ময়দানে নামবে নামবে তিন ফুটবল প্রধান। বাবুনবাবু বললেন, "ইস্ট বেঙ্গলের নীতু দা’র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মহামেডানের কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। মোহন বাগানও খেলতে ইচ্ছুক। সকলেই বলছে যে, অ্যাস্ট্রোটার্ফ হলেই তারা হকি খেলবে।"