Paris Olympics 2024: হঠাৎ করেই দুনিয়া যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে দেউলপুরের বিখ্যাত শিউলি বাড়ির কাছে। বছর দুয়েক আগে বার্মিংহ্যামে যে বাঙালি গোটা রাজ্যকে সম্মানের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন, সেই অচিন্ত্য শিউলি (Achinta Sheuli) আচমকা অন্ধকার আবর্তে যেন সেঁধিয়ে গিয়েছেন। শনিবার রাত থেকেই পাতিয়ালা ক্যাম্প থেকে যে খবর বেরিয়ে আসে, তা সঙ্গেসঙ্গেই জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সৌজন্যে ট্রেন্ডিং!
সংবাদসংস্থা পিটিআই-য়ের খবর তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল আইপিএল-এর অপেক্ষায় থাকা তামাম ক্রীড়াজগৎকে। মহিলা হোস্টেলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে নাকি ধরা পড়ে যান। এবং পত্রপাঠ অলিম্পিকের প্রস্তুতি ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার!
শনিবার রাতের সেই খবর বিমর্ষ করে দিয়েছে গোটা দেউলপুরকেই। প্রিয় অচিন্ত্যের এহেন বহিষ্কার যে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। রবিবার সাত সকালে থমথমে পরিস্থিতি দেউলপুর হাইস্কুলের ঠিক বিপরীতে শিউলি বাড়ির সামনে।
ঝড় বয়ে গিয়েছে পরিবারের সকলের ওপর দিয়েই। আলুথালু বেশে অচিন্ত্যের দাদা অলোক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলে দিলেন, "শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে। তাই শাস্তি মিলেছে। গতকাল (শনিবার) রাতেই কথা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে ও।"
জাতীয় সংবাদসংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রস্তুতি ক্যাম্প থেকে বহিষ্কারের পরে নাকি প্যারিস অলিম্পিকের দরজাই বন্ধ হয়ে গেল। ফুকেটে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভারোত্তলন ওয়ার্ল্ডকাপের আসর বসছে। সেখানে পদক জিতেই অলিম্পিকের বিমান নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল বঙ্গসন্তানের কাছে।
আরও পড়ুন: সোনার ছেলে অচিন্ত্য সেভাবে চিনতে পারছেন কই! অভিমানে ঘরবন্দি দেউলপুরের মহাগুরু অষ্টম দাস
অলোক বলছেন, এই ঘটনার জন্য নয়, অনেক আগে থেকেই অচিন্ত্যের অলিম্পিক অভিযান স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে? দাদা অলোকের বক্তব্য, "অচিন্ত্য যে প্যারিস অলিম্পিক থেকে যে ছিটকে গিয়েছে এই ঘটনার প্রভাবে, তা ঠিক নয়। কমনওয়েলথ গেমসের পর ভাইয়ের ক্যাটাগরি বদলে গিয়েছিল। অন্য ক্যাটাগরিতে ওঁকে নামতে হত। সেই বিভাগের আবার কোয়ালিফিকেশন-ই নেই। তাই অচিন্ত্য যে অলিম্পিক খেলতে পারবে না, তা আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।"
ভাইয়ের জন্য আচমকা টেনশনের স্রোত তাঁকেও যেন কিছুটা কাবু করে ফেলেছে। কিছুটা ভেঙে পড়েছেন নিজেও। তবে অলোকের আসল দুশ্চিন্তা মাকে নিয়ে। সোজাসুজি বলছিলেন, "মা হার্টের রোগী। বেশ কয়েক বছর ধরেই হৃদযন্ত্রে গোলযোগ রয়েছে। মাকে এসব খবর কিছু বলা হয়নি। খারাপ খবরে যদি হিতে বিপরীত হয়!"
বেনিয়মের শিকার হওয়া ভাই এবং অসুস্থ মা- দুজনকেই আগলে রাখছেন অলোক। কঠিন সময়ে পরিবার তাকিয়ে অলোকের দিকেই। ভাই যে এসব দুঃসময় সরিয়ে স্বমহিমায় কামব্যাক করবে, তা নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী অলোক নিজেও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অলোক জানাচ্ছিলেন, "গতকাল ভাইকে বলেছি, এসব ঘটনা মন থেকে সরিয়ে খেলায় ফোকাস করতে। ভালো সময়ের মত খারাপ সময় আসবেই। সেই সময় শক্ত থাকাই আসল। সামনেই কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসছে। ওখান থেকে পদক জিতে পুনরায় যেন ও নিজেকে প্রমাণ করবে। আমরা আশাবাদী।"
অন্ধকার মুছে আবার কি আলো ফুটবে? দেউলপুরের গর্ব আবার কি বিশ্বমঞ্চে গ্রাম, বাংলা-র মুখ উজ্জ্বল করবেন, সময়ই তার উত্তর দেবে।