Bengal Boy Ankit in deaf olympics: বয়স মাত্র ১১। এই বয়সেই তার ঝুলিতে তাকলাগানো সাফল্য। ভারতীয় দলে সুযোগ পেল বেহালার অঙ্কিত গাঙ্গুলি। আগামী ২ থেকে ১২ মার্চ, তুরস্কের এরজুরুমে বসছে ২০তম উইন্টার ডে অলিম্পিকের আসর। সেখানেই অংশ নিতে চলেছে বড়িশা হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র। বেহালা শীলপাড়ার বাড়িতে এই খবরে যখন খুশির হাওয়া ভাসছে, তখন রীতিমতো চিন্তায় অঙ্কিতের মা চাঁদনি চক্রবর্তী।
পরিবারের কাউকে ছাড়া অঙ্কিত কোনওদিনও বাইরে কোথাও থাকেনি। তুরস্কে তাই অঙ্কিতের সঙ্গে যেতে হবে পরিবারের কাউকে। কিন্তু, তার খরচা প্রচুর। এটাই ভাবাচ্ছে অঙ্কিতের পরিবারকে। অঙ্কিতের মা পেশায় কলেজের পার্টটাইমার। বাবা বেসরকারি চাকুরে। বিদেশ সফরের খরচের জন্য বিপুল অর্থ তাঁরা কোথা থেকে জোগাড় করবেন, এই নিয়ে এখন রীতিমতো ধন্দে অঙ্কিতের পরিবারের লোকজন।
অঙ্কিতের মা জানান, তাঁর ছেলে ৯৫ শতাংশ শ্রবণ প্রতিবন্ধী। প্রথমে তাঁরা সেটা বুঝতে পারেননি। কিন্তু, ছেলের বয়স যখন তিন বছর, সেই সময় কথা না-শেখায় অঙ্কিতের ঠাকুমা ইন্দ্রাণী গাঙ্গুলির সন্দেহ হয়। তাঁর কথায় অঙ্কিতের মা-বাবা যোগাযোগ করেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। কিন্তু, চিকিৎসকরা ভালো কিছুর আশ্বাস দিতে পারেননি। এরপরই অঙ্কিতের ঠাকুমা নাতিকে লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি অন্য কোনও বিষয়ে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তার মা-বাবাকে। সেই মত অঙ্কিতের মা তাকে ভর্তি করেন বেহালা পাঠকপাড়ার প্রিমিয়ার চেস অ্যাকাডেমিতে এনকে চন্দ্রশেখর স্যারের কাছে। সব জানার পর অঙ্কিতকে দাবা শেখানো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষক। তখন থেকেই অঙ্কিতের মাকে চন্দ্রশেখর স্যার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন, 'এই ছেলে ভবিষ্যতে ভারতীয় দলে সুযোগও পেতে পারে।'
সেই কথাই যেন ধীরে ধীরে ফলতে শুরু করেছে। একের পর এক সাফল্য আসতে শুরু করে অঙ্কিতের ঝুলিতে। কলকাতা জেলা দাবা টুর্নামেন্টে অঙ্কিত চতুর্থ হয়েছে। টাটা স্টিল অনূর্ধ্ব ১২ টুর্নামেন্টে হয়েছে সপ্তম। কর্নাটকের টুমকুরে আয়োজিত তৃতীয় ন্যাশনাল ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে হয়েছে প্রথম। অল বেঙ্গল হ্যান্ডিক্যাপড ওপেন চেস টুর্নামেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এরপরই ডাক পেয়েছে উইন্টার ডেজ অলিম্পিকের ইন্ডিয়া টিম সিলেকশন টুর্নামেন্ট। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এই টুর্নামেন্টের আসর বসেছিল গতবছর ২৮-২৯ নভেম্বর। সেখানে অঙ্কিতই ছিল সবচেয়ে কমবয়সি। ষষ্ঠ হয়েছিল।
অল ইন্ডিয়া স্পোর্টস কাউন্সিল, অফ দ্য ডেফ এবার উইন্টার অলিম্পিকে ছয় জনেরই দল পাঠাবে। অঙ্কিত ষষ্ঠ হওয়ায় তাই তার সুযোগ পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ইতিমধ্যে তার ফিডে ব়্যাঙ্কিং-ও চলে এসেছে। ইতিমধ্যে অল ইন্ডিয়া স্পোর্টস কাউন্সিল, অফ দ্য ডেফ অঙ্কিতের পাসপোর্ট বানাতে দিয়েছে। তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে নিয়েছে পরিবারের থেকে। কিন্তু, এই খুশির খবরগুলোর মধ্যেও জাতীয়স্তরের দাবাড়ুর পরিবারকে দুশ্চিন্তায় রাখছে, বিদেশযাত্রার খরচ। কারণ, অঙ্কিতের খরচ কাউন্সিল দিলেও, পরিবারের কারও খরচ দেবে না। সেক্ষেত্রে পরিবারের কোনও সদস্যের বিদেশযাত্রার খরচ কীভাবে তাঁরা জোগাড় করবেন, তা-ই নিয়েই দুশ্চিন্তায় অঙ্কিতের পরিবার।