ইস্টবেঙ্গল মিলিয়ে দিয়েছিল দুজনকে। কয়েক বছরের ব্যবধানে লাল হলুদের হেড স্যার হয়েছিলেন। আরও এক ব্র্যাকেটে দুজনে মিশে যেতে পারতেন। ভাগ্যের পরিহাসে তা আর ঘটেনি। সুভাষ ভৌমিক এবং আর্মান্দো কোলাসো, গুরু-সম্মান থেকে ব্রাত্য হয়েই রয়ে গিয়েছেন এতদিন। ২০১২ সালে দ্রোণাচার্য হিসাবে মনোনয়ন পেয়েও শেষমেশ আর গুরুর সম্মান জোটেনি আর্মান্দো কোলাসো।
সুভাষ ভৌমিকের ক্ষেত্রে দ্রোণাচার্য তো দূর, মনোনয়নও মেলেনি। ইস্টবেঙ্গলের স্মরণ সভায় বহু স্মৃতিচারণের মধ্যেই উঠে এসেছে দ্রোণাচার্য নিয়ে অপ্রাপ্তির বিষয়টি। ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত যেমন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় জানালেন, ফেডারেশনের তরফে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে সুভাষ ভৌমিকের নাম মরণোত্তর দ্রোণাচার্য পুরস্কারের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: সুভাষের নামে প্ৰথম সম্মানই ডার্বি-নায়ক কিয়ানকে! বড় ঘোষণা সবুজ-মেরুনের
এশিয়ান জয়ী, আইলিগ জয়ী কোচকে কেন দ্রোণাচার্য দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে না, সেই প্রশ্নই এবার তুলে দিলেন স্বয়ং আর্মান্দো কোলাসো। যাঁর ঠান্ডায় গলা বসে গিয়েছে। তাই হোয়াটসএপ চ্যাটে জানালেন, "জেনে ভাল লাগছে যে দ্রোণাচার্য-র জন্য ফেডারেশনের তরফে সুভাষ ভৌমিকের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করি উনি পাবেন।"
গত চার দশকে ফুটবল কোচ হিসেবে একমাত্র সৈয়দ নইমুদ্দিন দ্রোণাচার্য হিসাবে সম্মানিত হয়েছিলেন। তাও সেই ১৯৯০-এ। বাকিদের নাম জুড়ে গিয়েছে ব্রাত্যজনদের তালিকায়।
আরও পড়ুন: প্রদীপ ‘গুরু’র যোগ্য শিষ্য সুভাষ!
ডেম্পোকে পাঁচবার আইলিগ জেতানো তো বটেই এএফসির সেমিফাইনালেও প্ৰথম কোনও ভারতীয় দল হিসেবে ডেম্পোকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁর গলায় আক্ষেপ আর হতাশা, "আমার এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল তো বটেই। সেই সঙ্গে এই সম্মানের যোগ্য সুভাষ ভৌমিক এবং সুখবিন্দর-ও। আশা করি এবার থেকে ওঁরা ফুটবল কোচেদেরও সম্মানিত করবেন।"
কোলাসোর সুরেই সুর মেলালেন দেশের একমাত্র দ্রোণাচার্য কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন। ময়দানের প্রিয় ভোম্বলদার সঙ্গে ১৯৭০-এ এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জজয়ী সদস্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন "জানি না কেন দেওয়া হয় নি। তবে কোচ হিসেবে জাতীয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিবেচনা করেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সুভাষেরও আগে জিএম বাশা, অমল দত্ত, পিকেদের এই সম্মান পাওয়া উচিত। জিএম বাশার কোচিংয়ে জাকার্তায় আমরা অনবদ্য খেলেছিলাম।"
আরও পড়ুন: বস, তুমি আজীবন আমার হৃদয়েই থাকবে!
কোলাসোর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে প্রায় দেখা হত প্রয়াত কিংবদন্তির সঙ্গে। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে গোয়ান মহাগুরু জানালেন, "সুভাষ ভৌমিক একজন সহজ-সরল, প্রাণবন্ত কিংবদন্তি ছিলেন। দুরন্ত স্ট্রাইকার তো বটেই একজন দুরন্ত কোচ এবং ব্যক্তি হিসাবেও অসাধারণ ছিলেন। ওঁর সঙ্গে বরাবর আমার হৃদ্যতা ছিল। ডেম্পোতে যা করেছি, তার জন্য বারবার উনি আমাকে প্রশংসা করতেন। ঈশ্বর ওঁর আত্মাকে শান্তি দিন।"
আরও পড়ুন: ৭৫-এর মহাকাব্য থেকে খসল আবেগের পাতা! বন্ধুর বিদায়ে শোকস্তব্ধ সেই ম্যাচের সৈনিকরা
ফুটবলার হোক বা কোচ, এত রামধনুর মত সাফল্য নিয়েই দিনের শেষে না-পাওয়ার আক্ষেপ।দ্রোণাচার্য-পদ্মশ্রী-অর্জুন কোনও কিছুই মেলেনি। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক কী এবার স্বীকৃতির মোড়কে গুণীকে সম্মান জানাবে, প্ৰশ্ন তুলছে ক্রীড়ামহল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন