কুস্তিগীরদের আন্দোলনে উত্তাল দিল্লির রাজপথ। ব্রিজভূষণের গ্রাফতারির দাবিতে অনড় প্রতিবাদী কুস্তিগীররা। শনিবার গভীর রাতে দিল্লিতে অমিত শাহের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন কুস্তিগীররা। মধ্যরাত থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক। বৈঠকে সেভাবে সমাধান সূত্র না মেলায় আজ ফের কুস্তিগীরদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কেন্দ্রীয় ক্রিড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর।
গতকাল এক ট্যুইট বার্তায় কুস্তগীরদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন অনুরাগ ঠাকুর। তিনি লেখেন, ‘সরকার কুস্তিগীরদের সাথে তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। আমি আবারও এর জন্য কুস্তিগীরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি’। তার এই ট্যুইটের পরই তড়িঘড়ি আজ সকালেই তাঁর বাসভবনে পৌঁছান প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের এক প্রতিনিধি দল।
প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের তরফে ‘আলোচনা’র জন্য টোকিও অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া এবং রিও অলিম্পিক পদক বিজয়ী সাক্ষী মালিক সহ ভারতের শীর্ষ কুস্তিগীরদের একটি প্রতিনিধি দল পৌঁছেছেন অনুরাগ ঠাকুরের বাসভবন। তাদের সঙ্গে ছিলেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত। সকাল ১১:১৫ মিনিট নাগাদ শুরু হয় বৈঠক। এদিনের বৈঠকে কুস্তিগীররা কুস্তি সংস্থার "অবাধ ও সুষ্ঠু" নির্বাচনেরও আহ্বান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন কুস্তিগীররা।
ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গ্রেফতারির দাবিতে অনড় প্রতিবাদকারী কুস্তিগীররা। কুস্তিগীররা শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন। অমিত শাহের বাসভবনে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে চলে বৈঠক। কুস্তিগীররা ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে গ্রেফতারের পাশাপাশি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ এবং চার্জশিট পেশের দাবি জানিয়েছেন। আজকের এই বৈঠকেও একই দাবি জানিয়েছেন কুস্তিগীররা। ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে আজকের বৈঠকে কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া এবং সাক্ষী মালিক ডাব্লুএফআই প্রধান ব্রিজ ভূষণের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
ভিনেশ সহ বেশ কয়েকজন মহিলা কুস্তিগীর WFI সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। সকলেই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিতে এক মাস ধরে দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ করেছেন। প্রতিবাদী কুস্তিগীররাও সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হন। যেখানে আদালত তাদের কথা শুনে দিল্লি পুলিশকে নোটিশ দেয়। নোটিশের পরে, পুলিশ দেরি না করে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করে।
সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন মহিলা সম্মান পঞ্চায়েতের দাবিতে সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কুস্তিগীরদের বচসা হয়। আটক করা হয় বেশ কয়েকজন কুস্তিগীরদের। পরে তারা বৃহত্তর প্রতিবাদের ডাক দিয়ে পদকগুলি গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হরিদ্বারে যান। কিন্তু কৃষক নেতাদের অনুরোধে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।এর আগে, ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর কুস্তিগীরদের “তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার” এবং “আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে” সেই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক এবং ভিনেশ ফোগাট সহ প্রায় ৩০ জন কুস্তিগীর যন্তর মন্তরে একটি ধর্নায় বসেছিলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে। ১৯ জানুয়ারি, কুস্তিগীররা ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময়ও তিনি তাদের ব্রিজভূষণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
এর পরে, ২৩ এপ্রিল, কুস্তিগীররা আবার যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেন। ২৪ এপ্রিল, ক্রীড়া মন্ত্রক বলেছিল যে ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ৪৫ দিনের মধ্যে রেসলিং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একটি অ্যাড-হক কমিটি (অস্থায়ী কমিটি) গঠন করবে।৭ মে রেসলিং ফেডারেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, যা বাতিল করেছে ক্রীড়া মন্ত্রক।
২৮ মে, কুস্তিগীররা নতুন সংসদের কাছে একটি মহিলা মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেন। পুলিশ তাদের আটক করে এবং যন্তর মন্তর থেকে তাদের এই আন্দোলন উঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে কুস্তিগীররা হরিদ্বারের গঙ্গায় পদক বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। কুস্তিগীরদের পাশে এসে দাঁড়ান ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত। কুস্তিগীরদের সমর্থনে, কৃষকরা মুজাফফরনগরে এবং হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে ২ জুন একটি খাপ মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করেছিল।
এদিকে, মঙ্গলবার (৬ জুন), দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিজ ভূষণের সহকর্মী এবং তার বাসভবনে কর্মরত ব্যক্তিদের বয়ান রেকর্ড করেছে। কুস্তিগীররা সাফ জানিয়েছেন, ‘ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে’। তবে কেন্দ্রের তরফে এই আশ্বাস সম্পর্কে বুধবার কুস্তিগীররা বলেছেন, ‘সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, তা হল রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান ব্রিজ ভূষণের গ্রেফতারি।
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আবার আলোচনার জন্য কুস্তিগীরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সমস্ত দাবি অস্বীকার করে, ব্রিজ ভূষণ ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কুস্তিগীরদের বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবাদ শেষ করছি না। আমরা দেখব সরকার আমাদের কাছে কী প্রস্তাব দেবে। আমাদের প্রধান দাবি রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান ব্রিজ ভূষণের গ্রেফতারি’। এদিকে প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা দীপেন্দর সিং হুডা প্রতিবাদী কুস্তিগীর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সাথে দেখা করার বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘মেয়েদের ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে আমরা আছি’।