Advertisment

কাঁধে ইঞ্জেকশন নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে 'ঐতিহাসিক উপহার'! শতবর্ষে ক্লাবই ভুলল সেই নায়ককে

তিন বছর আগে শেষবার পেশাদারি ফুটবলে খেলেছিলেন পোল্যান্ডের চতুর্থ ডিভিশনের একটি ক্লাবের হয়ে। তারপর বিদায় জানিয়েছেন ফুটবল মাঠকে। বর্তমানে ফিফার কোচিং লাইসেন্স করতে ব্যস্ত নাইজেরীয় তারকা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Asean Cup

আশিয়ান কাপ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত (ফেসবুক)

সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ইন্দোনেশিয়ার চ্যাম্পিয়ন ক্লাব পেত্রোকিমিয়া পুত্রা। সেই ম্যাচেরই শেষের দিকে কাঁধে জোরালো ধাক্কা। তারপরেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। সেই দুপুরের যন্ত্রণা যেন এখনও চোখে মুখে লেগে। ফাইনালে সতীর্থরা নামতেই বারণ করেছিলেন। তবে ইঞ্জেকশন পুশ করে সবুজ মাঠে নেমেছিলেন তিনি। গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন মাইক ওকোরো। বিদেশের মাটিতে আশিয়ান কাপের ঐতিহাসিক জয়ের নেপথ্য নায়ককে অবশ্য আর মনেও রাখে না ক্লাব। ধুমধাম করে শতবর্ষ উদযাপন সারা ফেলেছে দেশের ফুটবলে। অতিথি-অভ্যাগতদের তালিকায় অনেক ভারি ভারি নাম! তবে ক্লাব বিলকুল ভুলে গিয়েছে তার হিরোকেই।

Advertisment

বৃহষ্পতিবার সকালেই হোয়্যাটসঅ্যাপ কলে মাইক ওকোরোর কণ্ঠ ভেসে আসে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা থেকে। "সুভাষ ভৌমিক আমাকে ক্লাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে খেলার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি কথা রেখেছিলাম। ইঞ্জেকশন পুশ করে সেবারে মাঠে নেমেছিলাম। গোল করে কোচকে ভরসাও দিয়েছিলাম।" একটু থেমে বিষণ্ণ গলায় নাইজেরীয় সুপারস্টার বলে দেন মনের কথা, "ক্লাবের জন্য সবকিছু করেছিলাম। ক্লাবই আমাদের ভুলে গিয়েছে।" নিজের দীর্ঘ ফুটবল কেরিয়ারে বহুবার ইনজুরির কবলে পড়েছেন। কিন্তু প্রিয় ক্লাবের কাছ থেকে এই যন্ত্রণা যেন ছাপিয়ে গিয়েছে অতীতের সমস্ত চোট-আঘাতকেই।

আরও পড়ুন বুন্দেশলিগার মিডফিল্ডার এবার কলকাতায়, স্প্যানিশ কোচের প্রধান অস্ত্র তিনি

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওকোরো বলছিলেন, "ইস্টবেঙ্গলে খুব বেশিদিন খেলিনি আমি। তবে ওদের ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছিলাম। এখনও সমর্থকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।" ক্লাবের কাছ থেকে পাওয়া যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছেন প্রবাসী ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা। ৪ তারিখে লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ক্লাবের পতাকা উত্তোলন করা হবে। সেখানে প্রিয় ক্লাবের পতাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওকোরোকে। ক্লাব-বিরহ মুছে দিয়েছে সমর্থকদের আবেগ, ভালবাসা।

douglas, okoro and gilmer ইস্টবেঙ্গলের তিন তারকা- ওকোরো, ডগলাস এবং গিলমার (ফেসবুক)

ভারতীয় ফুটবলে শেষ খেলেছেন বছর দশেক আগে। জেসিটির হয়ে। দীর্ঘদিন ভারতেও আসেননি। তবে এদেশের প্রতি টান এখনও শিরায় শিরায়। আশিয়ান কাপ জয়ের নায়ক বলছিলেন, "ভারতে না থাকলেও, ওদেশ আমার সেকেন্ড হোম। কলকাতায় আমার বহু বন্ধু-বান্ধব রয়েছেন। ক্লাবের সতীর্থদের মধ্যে মুসা, ডগলাস, চন্দনের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে। সুভাষ ভৌমিক, নীতু দা-র সঙ্গে কথা হয় মাঝেমধ্যেই। এই বছরের শেষে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওখানে রি-ইউনিয়ন গোছের কিছু একটা করার পরিকল্পনা ছিল। শতবর্ষে আমন্ত্রণ পেলে ভাল লাগত। সকলের সঙ্গে দেখা হত। সেটাই তো হল না।" ফের একবার বিষণ্ণতা ভর করে বছর ৩৭-এর তারকার গলায়।

okoro ওকোরোর ঝটকায় প্রতিপক্ষ বেকায়দায় (ফেসবুক)

যদিও, ক্লাবের শীর্ষ কর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তের আশ্বাস, ক্লাবের শতবর্ষ অনুষ্ঠান দু-বছর ধরে চলবে। সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। ক্লাব সবাইয়ের অবদানই মনে রেখেছে।

mike okoro মাইক ওকোরো থাকছেন পতাকা উত্তোলনো (নিজস্ব চিত্র)

যদিও এই স্তোকবাক্যে থামাতে পারছে না ওকোরোর শোক। তিন বছর আগে শেষবার পেশাদারি ফুটবলে খেলেছিলেন পোল্যান্ডের চতুর্থ ডিভিশনের একটি ক্লাবের হয়ে। তারপর বিদায় জানিয়েছেন ফুটবল মাঠকে। বর্তমানে ফিফার কোচিং লাইসেন্স করতে ব্যস্ত নাইজেরীয় তারকা। যুক্ত রয়েছেন একটি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গেও। তার মধ্যেই পুরনো দিনের স্মৃতি ভিড় করে তাঁর মনে। ক্লাবের ব্যথা তাই আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ওকোরো-র গলায় ভরা অভিমান, "অনেককেই ডাকা হয়েছে শুনলাম, তারা ক্লাবকে কটা ট্রফি দিয়েছেন? ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে। ক্লাবের হয়ে এত্ত কিছু করলাম। আর আজকে আমরাই কিনা ডাক পেলাম না।" নিঃশব্দেই বিড়বিড় করেন, অঙ্ক মেলাতে পারেন না যে!

East Bengal Kolkata Football
Advertisment