পাকিস্তান: ১৪৭/১০
ভারত: ১৪৮/৫
ঠিক দশ মাস আগে এই মরু শহরেই রক্তাক্ত হয়ে ফিরতে হয়েছিল। ভারতকে প্ৰথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের কাছে হেরে কলঙ্কের বোঝা নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছিল। তবে তার শাপমোচন ঘটল বছর ঘোরার আগেই। বিশ্বকাপের হারের জ্বালা মিটিয়ে ভারত রুদ্ধশ্বাস এশীয় কাপের দ্বৈরথে রান তাড়া করতে নেমে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাল ৫ উইকেটে। হাতে দু বল নিয়ে।
আর সেই জয়ে প্রত্যাবর্তনের নায়ক হয়ে আবির্ভাব ঘটল হার্দিক পান্ডিয়ার। প্ৰথমে বল হাতে ৩ উইকেট তুলে নিলেন। তারপরে ব্যাট হাতে ইন্ডিয়ান ইনিংসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে গেলেন ১৭ বলে ৩৩ করে। ঔদ্ধত্যের কলার তুলে ভারতকে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছে দিলেন ছক্কা হাঁকিয়ে।
গত বছর বিশ্বকাপের পর হার্দিক পান্ডিয়ার কেরিয়ার কার্যত খতমই হয়ে গিয়েছিল খাতায় কলমে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও রিটেন করেনি তারকাকে। ফিটনেস ইস্যুতে জেরবার তারকা ফিরে আসার জন্য বেছে নেন আইপিএলকে। গুজরাট টাইটান্সকে ক্যাপ্টেন হয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ব্যাটে-বলে হার্দিক ২.০-কে পেয়ে যারপরনাই উল্লসিত হয়েছিল ক্রিকেট মহল। আইপিএল জিতলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঘুরে দাঁড়ানো বাকি ছিল গুজরাটের সুপারস্টারের। এশীয় কাপের মঞ্চেই যেন সেই প্রত্যাবর্তনের সোনালি বৃত্ত সম্পন্ন হল।
মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এক অনুষ্ঠানে এসে হার্দিককে এক্স ফ্যাক্টর ধরেছিলেন। মহারাজের সেই এক্স ফ্যাক্টরেই এদিন কুপোকাত পাকিস্তান।
প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি রান তাড়া করতে নেমে ভারত শুরুতেই উইকেট হারিয়েছিল। শাহিন আফ্রিদি নেই তো কি, তাঁর দোসর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল নাসিম শাহের। প্ৰথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড রাহুল।
তারপরে কোহলি-রোহিতের জুটিতে ৪৯ উঠলেও দুবাইয়ের স্লো ট্র্যাকে রোহিতকে (১২) কখনই ছন্দে মনে হয়নি। বরং ইনিংসের শুরুতে জীবন পাওয়া বাদ দিলে কোহলি (৩৫) দলকে ভরসা দিচ্ছিলেন বেশ। তবে পরপর দুই তারকা ফিরে যাওয়ায় ভারত ৫৩/৩ হয়ে গিয়ে জটিল খাদে পড়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: IPL-এ চাকরি হারাতে চলেছেন কুম্বলে! বিরাট ঘোষণা আসতে চলেছে শীঘ্রই
মাঝের ওভারে জাদেজা-সূর্যকুমার হাল ধরেন ভারতীয় ইনিংসের। তবে ১৫ তম ওভারে সূর্যকুমারকে ক্লিনবোল্ড করে ম্যাচে ব্যাপক অনিশ্চিয়তা আমদানি করেছিলেন নাসিম শাহ। তবে এরপরে হার্দিক পান্ডিয়ার সেই ভিনি, ভিডি, ভিশি-কাহিনী।
অনিশ্চিত অবস্থা থেকেই ভারতকে জিতিয়ে রাজমুকুট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারকা। শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৪১ রান। ব্যাক অফ দ্য লেংথে টানা বোলিং করে যাচ্ছিলেন পাক পেসাররা।
শেষ ওভারে মহম্মদ নওয়াজের বলে বোল্ড হয়ে ৩৫ করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় জাদেজাকে। শেষ পাঁচ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল সাত রানের। তবে ভারতকে জয়ের জন্য বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখেননি হার্দিক। ওভারের চতুর্থ বলেই মিডল উইকেটে ব্যাক অফ দ্য লেংথের বল মিড উইকেট দিয়ে সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ ফিনিশ করেন হার্দিক।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট খেলতে চায় চিন-ও! বঙ্গ ক্রিকেটের কাছে সরাসরি সাহায্য চাইলেন চিনা কর্তারা
তার আগে পাকিস্তান পুরো ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি। টসে জিতে প্ৰথমে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা। আবেশ খান, ভুবনেশ্বর দুজনেই পাওয়ার প্লে-তে ফখর জামান, বাবর আজমকে ফিরিয়ে দিয়ে চরম স্বস্তি আমদানি করেন ভারতীয় শিবিরে। মাঝের ওভারে হার্দিক-ভুবনেশ্বরের দাপটে খাপ খুলতে পারেনি পাক ব্যাটাররা। মহম্মদ রিজওয়ান ৪২ বলে ৪৩ করে টিমের সর্বোচ্চ স্কোরার। ভুবনেশ্বর ৪ ওভারের কোটায় মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। হার্দিক ২৫ রান খরচ করে নেন ৩ উইকেট। ভারত এদিন সকলকে চমকে দিয়ে ঋষভ পন্থের জায়গায় খেলায় দীনেশ কার্তিককে।
ভারত: রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, জুজবেন্দ্র চাহাল, আবেশ খান, আর্শদীপ সিং