বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে হোঁচট খেল ভারত। এশিয়া কাপের ফাইনাল আগে নিশ্চিত হয়ে গেলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে ভারতের। এমনকি এশিয়া কাপ জিতলেও বাংলাদেশের কাছে হারের দাগ ক্ষতচিহ্ন হয়ে থাকবে। শুভমান গিলের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং, অক্ষর প্যাটেলের লোয়ার অর্ডারে মরিয়া লড়াই সত্ত্বেও ক্লোজ ম্যাচ ফিনিশ করতে পারল না। ভারতের হারের ময়নাতদন্তে যে কারণ উঠে আসছে:
ভারতীয়দের স্পিন খেলার দক্ষতার অভাব: কলম্বোর যে পিচে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ হল তা টিপিক্যাল উপমহাদেশীয় ট্র্যাক। বল ধীরে আসবে। টাইমিংয়ের সমস্যা হবে। বাংলাদেশ মিরপুরে এমন পিচেই খেলে অভ্যস্ত। তাই বিদেশে হোম কন্ডিশনের সুবিধা পেয়ে গেল বাংলাদেশ।
বর্তমানে ভারতের জাতীয় দলের তারকারা স্পিন খেলতে স্বচ্ছন্দ নয়, অতীতের মত। শুক্রবার আরও একবার সেটা প্রমাণ করল টিম ইন্ডিয়া। বাংলাদেশে গিয়ে ভারত নাস্তানাবুদ হয়েছিল। চিপকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সাম্প্রতিক অতীতে খারাপ খেলার নজির রয়েছে। সেই তালিকায় এবার যোগ হল প্রেমদাসার পরাজয়ও।
আরও পড়ুন: গিলের সেঞ্চুরিতেও রক্ষা হল না! স্পিনের ফাঁসে ভারতকে দমবন্ধ করল বাংলাদেশ
বল টার্ন করলেই ভারতীয় ব্যাটারদের অসহায় দেখিয়েছে। ঘূর্ণি পিচে আক্রস দ্য লাইন খেলতে গিয়ে, অথবা বিগ হিট করতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন কেএল রাহুল, ঈশান কিষান, সূর্যকুমার যাদবরা। গিল অবশ্য এই তালিকায় ব্যতিক্রম। দুর্ধর্ষ ফুটওয়ার্ক নিয়ে সহজেই পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্পিন শক্তি:
বর্তমান বাংলাদেশ দলের মূল শক্তি স্পিনাররা। কলম্বোয় হোম কন্ডিশনের সুবিধা পেয়ে তার পুরো সদ্ব্যবহার করল বাংলাদেশ। দলে কোনও রিস্ট স্পিনার নেই। বরং টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা রয়েছে ফিঙ্গার স্পিনারদের ওপর।
থকথকে স্লো পিচ যেন মিরপুর। আর সেই সুযোগের ফায়দা তুলতে দেরি করল না বাংলাদেশিরা। ক্যাপ্টেন সাকিব পিচ পড়তে পেরে ষষ্ঠ ওভারেই নাসুম আহমেদের স্পিন লেলিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয়দের সামনে। সেই সময় ক্রিজে ব্যাটিং করছিলেন কেএল রাহুল, শুভমান গিল। তারপর দুই মেহেদিকে আক্রমণে আনতে দেরি করেনি বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যোগ হল ক্যাপ্টেন সাকিবের অপরিসীম অভিজ্ঞতা। আর এই চার জনের স্পিন ফাঁসের সামনে ভারতীয় ব্যাটিং কার্যত দমবন্ধ হয়ে গেল। সময় যত গড়াল ততই পিচ মন্থর থেকে মন্থরতর হয়ে গেল। সেই পিচেই দাপট দেখিয়ে গেল বাংলাদেশের স্পিনাররা।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে লজ্জার পর আবারও খারাপ খবর! বিশ্বকাপেও দুঃসংবাদ তাড়া করল পাকিস্তানকে
বাংলাদেশের স্লো মিডিয়াম পেসার-দ্বয়:
দুই সিমার নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। অভিষেককারী তানজিম সাকিব এবং অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যে নজর কেড়ে গেলেন সাকিব। বলে গতির অভাব-ই আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিল। তার স্লো মিডিয়াম পেস টাইম করতে সমস্যায় পড়লেন শুভমান গিলের মত তুখোড় ফর্মে থাকা ব্যাটারও। প্ৰথম ওভারেই রোহিত শর্মা এবং তারপর তিলক ভার্মাকে ফিরিয়ে দিয়ে যে ধাক্কা দিয়েছিলেন সাকিব। সেই ধাক্কা আর গোটা ইনিংসে সামলাতে পারেনি ভারত। মুস্তাফিজুর প্ৰথম স্পেলে একটু খরুচে হলেও তা পুষিয়ে দিলেন ডেথ ওভারে। চিরপরিচিত কাটার, স্লোয়ার, কৌণিকভাবে গতির হেরফের ঘটিয়ে ডেথ ওভারে স্পেলে এসেই ভারতের জয়ের সামান্যতম যে সম্ভবনা ছিল, তা নির্মূল করলেন। তানজিম-মুস্তাফিজুর পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন।
ভারতীয় বোলারদের ব্যর্থতা:
বাংলাদেশকে শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন শার্দূল এবং মহম্মদ শামিরা। প্রাথমিক সেই ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল ক্যাপ্টেন সাকিব এবং তৌহিদ হৃদয়ের পার্টনারশিপে ভর করে। দুজনেই হাফসেঞ্চুরি করে যান। মাঝের ওভারে সাকিব-হৃদয়দের যেমন থামাতে পারেননি শার্দূল-অক্ষররা, তেমন লোয়ার অর্ডারও শেষদিকে চ্যালেঞ্জিং স্করে দলকে পৌঁছে দিল। নাসুম আহমেদ (৪৪), মেহেদি হাসান (২৮) লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশকে টেনে দেন। স্কোর আড়াইশোর ওপরে নিয়ে যান। শার্দূল ২ উইকেট নিলেও ওভার পিছু ৬.৫ রান খরচ করে বসেন এই পিচে। অক্ষর প্যাটেল, তিলক ভার্মা, রবীন্দ্র জাদেজাদের মত অভিজ্ঞ স্পিনারদের ইকোনমি রেট ৫-এর বেশি।
কোহলি, হার্দিক, বুমরা, সিরাজ সহ একাধিক প্ৰথম দলের তারকাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশ শিবিরও চোট-আঘাতের ক্লান্তি ও একাধিক কারণে তাসকিন, মুশফিকুর রহিম, শরিফুল ইসলামদের মত নামিদের খেলায়নি। কোহলি-বিহীন এই ভারতীয় দলকে হারালেও বিশ্বকাপের আগে এই জয় বাংলাদেশকে নিঃসন্দেহে উজ্জীবিত করবে।