/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/india-gold.jpg)
এশিয়ান গেমসে ইতিহাস গড়ে সোনা ভারতের (টুইটার)
এশিয়ান গেমসে প্ৰথমবার ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি। এবং প্রথমবারেই ইতিহাস গড়ে সোনা ভারতের। আর কোচ হিসেবে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে সোনা জিতে কখনও বিশ্বকাপ না জেতার কষ্ট ভুলছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। বহুবার দেশে-বিদেশে টেলএন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন জাতীয় দলকে। তবে প্রাপ্য সম্মান কখনই তিনি পাননি। এমনটাই বক্তব্য ক্রিকেট মহলের। কেরিয়ারে ৮৬ ওয়ানডে খেলেছেন। ৬টা সেঞ্চুরি, ১০ হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে করেছেন ২৩৩৮ রান। তবে কেরিয়ারে কখনই ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। কেরিয়ারের শেষদিকে দুটো বিদেশ সফরে ব্যর্থ হওয়ার পরেই জাতীয় দলে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। চিরতরে বিদায় জানান ক্রিকেটকে এরপরেই।
ওয়ানডে পরিসংখ্যান সেভাবে ঝলমলে না হলেও টেস্টে তিনি মহীরুহ। ১৩৪ টেস্টে ১৭ সেঞ্চুরি, ৫৬ হাফসেঞ্চুরি সমেত করেছেন ৮৭৮১ রান। ক্রিকেট প্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল তাঁকে অন্তত বিদায়ী ম্যাচের সম্মানটুকু দেওয়া হোক। তবে বিদায়বেলা সেভাবে রঙিন মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারেননি। বরাবর দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এনসিএ ডিরেক্টর হোক বা অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব সামলানো হোক- বিপদের মুহূর্তে তিনি বরাবরের ক্রাইসিস ম্যান।
শনিবার এশিয়ান গেমসে ইতিহাস গড়ল ভারত। ইভেন্টের ইতিহাসে সর্বাধিকবার পদক জিতল ভারত। ১০৭টা পদক জিতে সর্বোচ্চ পদকজয়ী দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ফিনিশ করল ভারত। আর শনিবার ভারতের পদক তালিকায় ঐতিহাসিক সোনা এনে দিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। লক্ষ্মণের কোচিংয়ে রুতুরাজ গায়কোয়াডের নেতৃত্বে ভারত যুগ্মভাবে সোনা জিতল। ফাইনালে খেলা ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় দুই দলকেই যুগ্মভাবে সোনাজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘটনা হল, বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেটারদের তালিকায় কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি, শচীন তেন্ডুলকরদের মত মহীরুহদের নাম থাকলেও আপাতত লক্ষ্মণের কেরিয়ারেও বলার মত জায়গা তৈরি হল। এশিয়ান গেমসে প্রথমবার সোনাজয়ী ক্রিকেট দলের কোচ তিনি। এ-ও কি কম পাওনা!
A momentous achievement for India at the Asian Games!
The people of India are thrilled that we have reached a remarkable milestone of 100 medals.
I extend my heartfelt congratulations to our phenomenal athletes whose efforts have led to this historic milestone for India.… pic.twitter.com/CucQ41gYnA— Narendra Modi (@narendramodi) October 7, 2023
২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপে কেন বাদ পড়েন?
ফিল্ডিংয়ে ততটা ক্ষিপ্র ছিলেন না। এই যুক্তিতে বাদ পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। হঠাৎ করেই দীনেশ মোঙ্গিয়ার নির্বাচন অবাক করেছিল অনেককেই। বিশ্বকাপের আগে মোঙ্গিয়া ব্যাট হাতে বেশ কিছু ম্যাচে রান পেয়েছিলেন। জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ১৫৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতায় ৭১ রান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জর্জটাউনে ৭৪ করেছিলেন। তাছাড়া মোঙ্গিয়া বলও করতে পারতেন। এতেই লক্ষ্মণকে বাদ দিয়ে নির্বাচকরা সরাসরি জায়গা করে দেন মোঙ্গিয়াকে। তবে বিশ্বকাপের আগে ছন্দে ছিলেন লক্ষ্মণও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে পরপর ৯৯, ৬৬, ৭১ করেছিলেন। তবে মোঙ্গিয়া বিশ্বকাপে একদমই জ্বলে উঠতে পারেননি।
এশিয়ান গেমসে ভারতীয় যে দল নির্বাচন করা হয়েছিল সেই দলই ছিল সোনাজয়ের এক নম্বর দাবিদার। সকলেই আইপিএলের তারকা পারফর্মার। তবে চ্যালেঞ্জ মোটেই সহজ ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সকলেই অনভিজ্ঞ। স্কোয়াডের সবথেকে অভিজ্ঞ ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। যাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র ৪০ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। এশিয়ান গেমসে হাংঝৌতে রওনা হওয়ার আগে বেঙ্গালুরুতে লক্ষ্মণের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্প করেছিল। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া হেরেও যায় কর্ণাটক দলের কাছে। তবে বড় মঞ্চেই পারফর্ম করে গেলেন যশস্বী, রিঙ্কু সিংরা।
সিনিয়র টিম ইন্ডিয়ার কোচ হিসেবে বরাবর ব্যস্ত থাকেন রাহুল দ্রাবিড়। এমনও হয়েছে জাতীয় দল দুই জায়গায় একই সময়ে জোড়া আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে। দ্রাবিড়ের অনুপস্থিতিতে কেয়ারটেকার কোচের দায়িত্ব নিতে কখনই দ্বিধাবোধ করেননি লক্ষ্মণ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট থাকার সময় কার্যত নিজের উদ্যোগে রাহুল দ্রাবিড়কে টিম ইন্ডিয়ার কোচ এবং লক্ষ্মণকে এনসিএ হেড কোচ করেন।
এনসিএ'তে ডিরেক্টর কাম হেড কোচ হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন লক্ষ্মণ। কারণ এনসিএ ডিরেক্টর হলে স্বার্থ সংঘাতের ইস্যুতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর পদ ছাড়তে হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির কাজ ত্যাগ করতে হয়েছিল। এনসিএ ডিরেক্টর হওয়া আর্থিকভাবে মোটেই লাভজনক চাকরি ছিল না। তবে জাতীয় দলের স্বার্থে এটুকু স্বার্থত্যাগে রাজি হয়ে যান লক্ষ্মণ।
২০১১-য় বিদেশ সফর ব্যর্থ হয়েছিলেন টানা। ইংল্যান্ডে আট ইনিংসে মাত্র ১৮২ রান করতে পেরেছিলেন। এমনকি তার পরে নিজের অস্ট্রেলিয়া সফরেও ব্যর্থতার স্বাদ পান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বরাবর জ্বলে উঠতেন তিনি। ত্রাস ছিলেন তারকা খচিত অজিদের। ৫/৬ পজিশনে ব্যাটিং করে গিয়েছেন কেরিয়ারের অধিকাংশ সময়। লোয়ার অর্ডারে টেলএন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে ইনিংস গড়েছেন বহুবার। ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক ইনিংস কে-ই বা ভুলতে পারে!
Wonderful to be part of the #AsianGames experience and a great display by the team to add to our country's medals tally. Proud moment to see the Tri-colour go up and hear the national anthem being played. Well done to Ruturaj and the boys! @BCCI #IndiaAtAG22 pic.twitter.com/mcDJJW1amZ
— VVS Laxman (@VVSLaxman281) October 7, 2023
২০১২-য় ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজে লক্ষ্মণের টিম ইন্ডিয়ার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সেই সিরিজে নির্বাচিত হয়েও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে আচমকা অবসর নিয়ে নেন। খেললে ঘরের মাঠ হায়দরাবাদে শেষবারের মত খেলে বিদায় জানানোর মোক্ষম সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। তবে কার্যত নিঃশব্দে সরে দাঁড়ান তিনি।
এবারেও ভারত ২৪ ঘন্টা পরে বিশ্বকাপ অভিযানে নামছে। তার একদিন আগেই কার্যত মিডিয়ার প্রচার ছাড়াই দেশকে এনে দিলেন মহার্ঘ্য ঐতিহাসিক সোনা। লক্ষ্মণের কেরিয়ারের একটা বৃত্ত বোধহয় সমাপ্ত হল।