চলতি দলবদলের বাজারে এটিকে মোহনবাগান দেশের বেশ কিছু সেরা তরুণ তুর্কিকে সই করিয়েছে। এমন দল নিয়ে ট্রফি জেতার বাইরে কোনও কীর্তিই কৃতিত্ব বলে গ্রাহ্য হবে না। আশিক কুরুনিয়ান, আশিস রাই, বিশাল কাইথ, লালরিনলিয়ানা হামতে- একের পর এক তরুণ তুর্কির ঠিকানা এবার সবুজ মেরুন শিবিরে।
হুয়ান ফেরান্দোর সিস্টেমে ফুলব্যাকের বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এফসি গোয়ার কোচিংয়ের সময়েই ফেরান্দোর ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়াস ছিল জোড়া ফুলব্যাক। তাই দুই প্রান্ত বরাবর মুভ করার ক্ষেত্রে আশিস রাই এবার এটিকে মোহনবাগানের অন্যতম সেরা সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
আরও পড়ুন: শনিবারই হয়ে গেল ISL-এর হাইপ্রোফাইল চুক্তি! আতলেতিকোর তারকাকে সই করালো মুম্বই
হায়দরাবাদ এফসির প্ৰথমবার লিগ জয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম কারিগর ছিলেন আশিস রাই। ডান প্রান্তে আশিস রাই। বাঁ প্রান্তে আকাশ মিশ্রের পার্টনারশিপ ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল আইএসএলের বাঘা বাঘা দলের।
হায়দরাবাদের হেড কোচ মানোলো মার্কুয়েজ আরও বেশি আক্রমণাত্মক পজিশনে দুই ফুল ব্যাককে রেখে রণকৌশল সাজাতেন। এই সিস্টেমে খেলে আশিস রাই আইএসএলের অন্যতম সেরা ফুলব্যাক পজিশনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বল পজেশনের সময় দ্রুত ওভারল্যাপে উঠতেন আশিস-আকাশ, তেমনই একই গতিতে দ্রুত প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময়ে নীচে নেমে আসতে পারেন।
গত মরশুমে এই সিস্টেমে খেলেই উল্কাগতিতে উত্থান ঘটেছে আশিসের। ২০২০-২১ মরশুমে ইন্ডিয়ান এরোজের প্রাক্তন এই তারকা নিজের প্রতিভার পূর্ণ সুবিচার করতে পারেননি। স্কোয়াডে স্থিতিশীলতা না থাকায় সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে মানোলোর কোচিংয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন আশিস।
আরও পড়ুন: স্ত্রী-র ছবি পোস্ট করে ATKMB-কে কটাক্ষ! বেঙ্গালুরুতে চুক্তি করেই স্বমেজাজে রয় কৃষ্ণ
২৩ বছরের এই তারকা গত মরশুমে চারটে বড় সুযোগ তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে তিনটি এসিস্টও রয়েছে। গত মরশুমে নিজামের শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি গোটা টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি ক্রস (৩৬৩টি) তুলেছিল প্রতিপক্ষের বক্সে। এর মধ্যে আশিস রাই একাই তুলেছেন ৬০টি ক্রস। এছাড়াও তাঁর নামের পাশে ৭৬টি ট্যাকল, ২৭টি গোলমুখী শট প্রতিহত করণ, ৩৭টি ক্লিয়ারেন্স, ৩৮টি ব্লক রয়েছে।
প্রবীর দাসকে ছেড়ে দিয়ে চলতি গরমের উইন্ডোতে তাঁর জায়গায় আশিস রাইকে সই করিয়েছে মেরিনার্স শিবির। সেই সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি থেকে আশিক কুরুনিয়ানকেও তুলে নিয়েছে এটিকে মোহনবাগান। ২৫ বছরের আশিককে লেফট ব্যাক পজিশনে রেখে দল সাজাবেন।
বাগানের স্প্যানিশ কোচ প্রতিপক্ষ অর্ধে আক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ট্রাডিশনাল ভাবেই ফুলব্যাকদের ব্যবহার করেন। আশিক এবং আশিসের জুটি এবার লিগের অন্যতম সেরা হয়ে উঠতে পারে। দুজনের গতি এবং স্কিল বারবার বিপক্ষের এটাকিং থার্ডে আক্রমণ তুলে নিয়ে যেতে যাবে।
আশিস যাঁর জায়গায় খেলবেন সেই প্রবীর দাস টেকনিক্যালি কিছুটা রক্ষণাত্মক ঘরানার। গত মরশুমে ম্যাচ পিছু প্রবীরের কি পাসের সংখ্যা ছিল মাত্র .২। রাইয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১.১। বল পায়ে রেখে আক্রমণ শানানোর ক্ষেত্রে আশিসের জুড়ি মেলা ভার। প্রবীরের গত সিজনে ম্যাচ পিছু পাসের সংখ্যা ছিল ২৬.৫টি। বল পজেশন নিজের দখলে রেখে আশিসের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৬৩.৪টি।
একইভাবে প্রবীরের থেকেও ট্যাকলে এগিয়ে আশিস। ম্যাচ পিছু প্রবীরের ট্যাকলের সংখ্যা ছিল .৮টি। আশিস প্রত্যেক ম্যাচে ট্যাকল করেছেন ৩.১টি। হায়দরাবাদ এফসি গত সিজনে সফলভাবে ফুলব্যাকদের ব্যবহার করে বাজিমাত করেছে। আশিস হায়দরাবাদ এফসির সেই ফর্মই ধরে রাখবেন মেরিনার্সদের জার্সিতে, এমনটাই প্রত্যাশা আপাতত ফেরান্দোর।