West Indies tour to Australia Shamar Joseph: মিচেল স্টার্কের গোড়ালি লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা ইয়র্কার আছড়ে পড়েছিল পায়ে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছেড়েছিলেন। ভাবা হয়েছিল গাব্বা টেস্টে হয়ত আর নামতেই পারবেন না শামর জোসেফ (Shamar Joseph)। তবে ম্যাচের পঞ্চম দিনে তিনি যে সটান নেমে পড়বেন না, ইতিহাসে পৌঁছে যাবেন, কে ভেবেছিল। স্রেফ নামলেনই না। একাই ৭ উইকেট নিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করলেন অস্ট্রেলিয়াকে।
প্ৰথম টেস্টে লড়াই করে হারতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে গাব্বায় দ্বিতীয় টেস্টেই রূপকথা ঘটিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ ১-১ করলেন ক্যারিবিয়ানরা। ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতল উইন্ডিজ। শেষবার, ১৯৯৭-এর ফেব্রুয়ারিতে ক্যারিবিয়ানরা পারথে জেবার টেস্ট জেতে সেই ওয়াকার ফাটল ধরা পিচে, সেই সময় জন্মই হয়নি রবিবার ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলা শামর জোসেফের।
শনিবার শামরের স্টার্কের ইয়র্কারে চোট পাওয়ার পর ইনজুরি আপডেট নিয়ে উইন্ডিজদের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়, "সুসংবাদ। স্ক্যানে কোনও চিড় ধরা পড়েনি শামরের গোড়ালিতে। মেডিক্যাল টিম ওঁকে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে রাখবে। আগামীকাল পুনরায় ওঁর অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি আমরা।"
অস্ট্রেলিয়া গতকাল মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। রবিবার সকালে ৯৩/২ স্কোর নিয়ে একসময় ভালো ভাবে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ক্যামেরন গ্রিন এবং স্টিভ স্মিথ নির্দ্বিধায় ব্যাট করে চলেছিলেন। সেই সময়েই মরিয়া হয়ে ক্যারিবিয়ানরা শামরকে নামিয়ে দেয়।
আর নিজের দ্বিতীয় ওভারেই জোসেফ ম্যাচের গতি একেবারে পাল্টে দেন। প্ৰথমে গ্রিনকে ফেরান। তারপরে বিদ্যুৎগতির ইয়র্কারে জোসেফ বোল্ড করেন ট্র্যাভিস হেডকে।
সেখানেই থেমে থাকলেন না তিনি। মিচ মার্শ-ও জোসেফের গতিময় সুইং সামলাতে না পেরে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। অথানেজ প্ৰথমে বল গ্রিপ করতে না পারলেও তৃতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রিভস ক্যাচ সম্পূর্ণ করেন। এর পরে গায়ানার সিমার আলেক্স ক্যারিকে আউট করে ম্যাচের রং পুরোটাই বদলে দেন।
ব্যাট হাতে স্মিথের সঙ্গে পাল্টা ম্যাচ জমানো পার্টনারশিপ উপহার দিচ্ছিলেন মিচেল স্টার্ক। দ্রুত গতিতে ২১ করেও যান তিনি। তবে শামরের গতির সামনে মিস টাইমড পুল শটে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন স্টার্ক। সেই সঙ্গেই নিজের দ্বিতীয় টেস্টে দুই নম্বর পাঁচ উইকেট শিকার নিশ্চিত হয়ে যায় শামরের। ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স টিকলেন মাত্র ৮ বল। জোসেফের ছয় নম্বর উইকেট এল কামিন্স খোঁচা দিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলে বসায়।
ডিনার ব্রেকের পর আলজারি জোসেফ তুলে নেন সদ্য ক্রিজে নামা লিয়নকে। ১৯১/৯ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাচে চরম থ্রিলার হাজির হয়ে যায়। এরপরে শামর জোসেফ জস হ্যাজেলউডের উইকেট উড়িয়ে দিয়ে নিজের সপ্তম উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন।
প্ৰথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১১ তুলেছিল। এর জবাবে অস্ট্রেলিয়া ২৮৯/৯-এ ইনিংস ডিক্লেয়ার করার দেয়। এই ডিক্লেয়ার-ই ম্যাচের ফলাফলে নির্ণায়ক হয়ে গেল হয়ত। যাইহোক, দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৩-এর বেশি তুলতে পারেনি। অজিদের জয়ের জন্য ২১৬ রানের টার্গেট খাড়া করে। বাকিটা পুরোটাই ইতিহাস।
এডিলেডে টেস্ট অভিষেকের প্ৰথম বলেই স্টিভ স্মিথকে আউট করে ক্রিকেট বিশ্বের আলোচনায় উঠে এসেছিলেন শামর জোসেফ। প্ৰথম টেস্টেই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের নজির গড়েছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে ইতিহাস গড়লেন একেবারে ২৭ বছরের পর দেশকে জিতিয়ে।