Advertisment

ছিপছিপে তরুণের ব্যাটে এত্ত জোর! অজি বধে পদ্মাপাড়ের নায়ক আফিফ যেন রূপকথা

বাংলাদেশের হয়ে নজর কেড়েছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পারফর্ম করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব (তারকার ফেসবুক)

- Rabiul Islam Biddut

Advertisment

করোনায় গোটা বাংলাদেশ বিধ্বস্ত। হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু-মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। টানা লকডাউনেও করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। গৃহবন্দি অবস্থায় লোকজন হাঁপিয়ে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খেলা গৌণ হতে বাধ্য। কিন্তু এই দুঃসময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি যেন আনন্দের উপলক্ষ এনে দিল। করোনার দুঃসময়ে গোটা দেশে আনন্দের হিল্লোল এনে দিলেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের তারকারা।

দুই সিনিয়র তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম নেই। দুই স্থপতির অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ দল কেমন করে এ নিয়ে শঙ্কা ছিলই। মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজেলউড-অ্যাডাম জাম্পাদের কিভাবে সামলাবে তরুণেরা? দলে অভিজ্ঞ বলতে যে কেবল সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ এবং মুস্তাফিজুর রহমান! বাকি সবাই তো তরুণ। তারুণ্যের দীপ্তি থাকলেও অভিজ্ঞতায় যে অনেকটাই পিছিয়ে।

আরও পড়ুন: এক টেস্ট খেলেই বিদায়! ইডেনে বিকাশের যন্ত্রণার শরিক হবেন শচীন-সৌরভও

অতীতে একাধিকবার তরুণরা বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার মত প্রবল পরাক্রমশালী দলের বিপক্ষে তাঁরা যে রূপকথা গড়তে পারবেন, এমন আশাও অনেকে করেননি। তবে মাঠে বল গড়াতেই অতীত ব্যর্থতার নিদর্শন মুছে তরুণেরা নিজেদের ছাপ রাখতে শুরু করেছেন। সিরিজ জয় এখনো বাকি। তবে প্রথম দুই ম্যাচেই বাংলাদেশর তরুণ ক্রিকেটাররা অন্তত বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁদের ওপরে নির্দ্বিধায় ভরসা রাখা যায়।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মাঠ বমিতে ভাসালেন অজি তারকা! ওগড়ানো ভিডিওয় চরম চাঞ্চল্য, দেখুন

publive-image
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি২০-তে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল (আফিফ হোসেন ফেসবুক)

তারুণ্যের দীপ্তিতে সিরিজের প্ৰথম দুই ম্যাচেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন হ্যাংলা-পাতলা গড়নের ছোটখাটো আফিফ হোসেন ধ্রুব। দূর থেকে দেখে মনে হয় ছেলেটা দূর্বল প্রকৃতির। একটু ধাক্কা দিলেই পরে যাবেন!এই দূর্বল প্রকৃতির ছেলেটাই মানসিকভাবে যে এত দৃঢ় কে জানত! কে স্টার্ক, কে হ্যাজেলউড, কে জাম্পা-কোনও হেলদেলই নেই! বল দেখা আর সেই অনুযায়ী উইলোর চলন- ক্রিকেটের এমন সরল দর্শনে বিশ্বাস করেই রাতারাতি ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেছেন আফিফ।

আরও পড়ুন: ইডেনে স্বপ্নপূরণের আমন্ত্রণ, অপেক্ষায় সৌরভের প্রিয় শান্ত

যাইহোক, দলটার নাম যখন অস্ট্রেলিয়া, সেই দলের বিরুদ্ধে এমন নির্ভার ব্যাটিং কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নটা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র তরফে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে। সাকিব-মুশফিকের মত আফিফও এই বিকেএসপিতে অর্ধযুগ ধরে ক্রিকেটের পাঠ নিয়েছেন। যে কারণে লম্বা সময় আফিফকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন নাজমুল আবেদীন।

তিনি বলছিলেন, “ও (আফিফ) বোধহয় বাংলাদেশ দলে হাতেগোনা দু-একজনের মধ্যে একজন যে মাঠের যে কোনো প্রান্তে শট হাঁকাতে পারে। যদিও রোগপাতলা হলেও পাওয়ার হিটিং-ই ওঁর ব্যাটিংয়ের মূল বৈশিষ্ট্য। ও চাইলেই বিভিন্ন জায়গায় শট খেলতে পারে, বিগ হিট করতে পারে। তবে দূর্ভাগ্যজনকভাবে ওকে সবসময় এমন একটা জায়গায় খেলতে হয়েছে যেখানে ও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কখনও পায়নি।”

publive-image
বিকেএসপি-র ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম (রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

আরও পড়ুন: নেতা সৌরভের প্রথম প্রতিপক্ষই অভিষেক টেস্টে নামা বাংলাদেশ, কোথায় এখন তাঁরা

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয় নম্বরে নেমে সবসময় বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কমই থাকে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ১৭ বলে অপরাজিত ২৩ রান করে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রেখেছিলেন আফিফ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩১ বলে অপরাজিত ৩৭ করে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন।

publive-image
জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে জয়ের পরে সাকিব সহ গোটা বাংলাদেশ জাতীয় দল (আফিফ হোসেন ফেসবুক)

নাজমুল আবেদীন বলছিলেন, “টি-টোয়েন্টিতে এমনিতেও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ খুবই কম। তারপরেও দুটো ম্যাচে ও খুব সংগঠিতভাবে খেলার চেষ্টা করেছে। এই জায়গাটিতে প্রথমদিকে কিছুটা ঘাটতি ছিল। এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে জিম্বাবোয়ে সিরিজের পর থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাটা দেখতে পাচ্ছি এবং তার ফলও দেখলাম। এখন দেখতে হবে এই সাফল্যগুলো ওকে কিভাবে অনুপ্রেরণা জোগায় আগামীদিনে।”

আরও পড়ুন: ভারতের কাছে হেরে তিন মাস ঘুমোননি মুশফিকুর, দিল্লি দখলের পরে জানালেন বাবা

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দুটো ম্যাচে যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন তাতেই বোঝা গিয়েছিল আফিফের আত্মবিশ্বাস কতটা প্রবল। এই প্রসঙ্গে নাজমুল আবেদীনের বক্তব্য, “ওর অভিজ্ঞতা অনেক কম। তবে নিজের সক্ষমতায় ও খুব আত্মবিশ্বাসী। এটা প্রমাণ করে যে সবসময় বয়স বিবেচ্য নয়। শচীন টেন্ডুলকারেরও অনেক কম বয়সে অভিষেক হয়েছিল। ওকে পৃথিবীর দ্রুততম বোলারদের বিরুদ্ধে খেলতে হয়েছিল। সুতরাং বয়স বিষয় না। কারো মধ্যে দক্ষতা থাকলে সে পারবে। আমার মনে হয় আফিফের মধ্যেও সেই দক্ষতা রয়েছে। যে কারণে ও খুব স্বাভাবিকভাবেই খেলেছে। ও শুধু বল খেলেছে অন্য কোনোদিকে মনোযোগ ছিল না। অন্য বোলারদের যেভাবে খেলে সেভাবেই খেলেছে।”

তবুও একটা জায়গায় শঙ্কা থেকেই যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকেই প্রতিশ্রুতি জাগিয়ে এসেছেন আবার হারিয়েও গিয়েছেন। সেটা মনে করিয়ে দিতেই বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা বললেন, “এগুলো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। ওর দক্ষতা রয়েছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই দক্ষতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে রাখতে হয় তাহলে খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে হবে। এই জায়গায় কেউ আপোষ করলে আন্তর্জাতিক স্তরের কোনো খেলাতেই টিকে থাকা সম্ভব নয়।”

এই প্রসঙ্গে নাজমুল আবেদীন শচীন তেন্ডুলকারের বন্ধু বিনোদ কাম্বলিকে টেনে আনেন। তিনি বলছিলেন, “শচীনের মত একইরকম প্রতিভা ছিল বিনোদ কাম্বলির। কিন্তু খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে শৃঙ্খলিত জীবন আপনি কীভাবে বজায় রাখবেন। আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেট খেলাটা কতটা কঠিন সেটা আমরা বুঝি। কেউ যদি শতভাগ চেষ্টা করেন তাতেও হয়তো সাফল্য পাবেন না। তাহলে বোঝা যায় এটা কত কঠিন একটা জায়গা। শৃঙ্খলার মধ্যে থাকলে তার বাকি সবকিছু ঠিক থাকবে। আফিফ শৃঙ্খলার নাগপাশে থাকলে লম্বা সময় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারবে। আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ওঁর নামডাক ছড়িয়ে পড়বে।”

সেটা হলে অবশ্যই বাংলাদেশেরই লাভ। একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফিফ ধ্রুব তারার মতই জ্বলজ্বল করবেন সেই প্রত্যাশা তো সকল বাংলাদেশির-ই।

Bangladesh Australia Bangladesh Cricket Cricket News Sports News
Advertisment