Advertisment

শচীনের-কোহলির ফ্যান টিম কাহিল, ক্ষমা চাইলেন সুব্রত পালের কাছে!

আইএসএল-এর পঞ্চম মরসুমে জামশেদপুর এফসি সবাইকে চমকে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ফুটবলার টিম কাহিলকে দলে নিয়ে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tim-Cahill-with-Subrata-and-Coach-Cesar.

সুব্রত পাল, সিজার ফেরান্দোো ও টিম কাহিল

গত মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অভিষেক করেছিল জামশেদপুর এফসি।কোয়ালিফাই করতে না-পারলেও, পাঁচে শেষ করা জামশেদপুরের পারফরম্যান্স চোখে পড়েছিল সেবার। আইএসএল-এর পঞ্চম মরসুমে তাঁরা সবাইকে চমকে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ফুটবলার টিম কাহিলকে দলে নিয়ে। সে দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবার খেলবেন ভারতে। চারবার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। রাশিয়ায় বিশ্বকাপ খেলে আসা বছর আটত্রিশের ফরোয়ার্ড দেশের জার্সিতে গোলের হাফসেঞ্চুরি করেছেন। আইএসএল ফাইভে তিনিই সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল ফুটবলার।

Advertisment

শনিবার কলকাতায় ছিল আইএসএল মিডিয়া ডে। কাহিল এসেছিলেন জামশেদপুরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে। কাহিলের সঙ্গে ছিলেন জামশেদপুরের কোচ সিজার ফেরান্দো ও গোলকিপার সুব্রত পাল। কাহিলের দেশ ফুটবলের জন্য নয়। বাইশ গজে তারা বিশ্ব শাসন করেছে। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। কাহিল ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও পছন্দ করেন খুব। এদিন বললেন, “আমি ক্রিকেট ভালবাসি। নিঃসন্দেহে শচীন তেন্ডুলকর আমার সর্বকালের প্রিয় ক্রিকেটার। কিন্তু এখন আমি বিরাট কোহলিকেও খুব পছন্দ করি। কোহলির গল্পটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। ও আজ যেভাবে এ জায়গায় এসেছে। সেটা তারিফ করার মতো।”

আরও পড়ুন: এবার এটিকে-তে কারা খেলছেন? কী বললেন নতুন কোচ কোপেল!

Tim Cahill at press meet সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত পাল, সিজার ফেরান্দো ও টিম কাহিল (ছবির ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)

কোহলিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করেন কাহিল। তাঁর কারণটাও বললেন তিনিই। কাহিল জানালেন, “ও কঠোর পরিশ্রম করে। ওর দায়বদ্ধতাও মুগ্ধ করে। ভীষণ নম্র একজন মানুষ। আমার সবচেয়ে ভাল লাগে যে, ভারতীয়দের অনেক কিছু দেয়। ও দৃষ্টান্ত। আমি ওকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ফলো করি।”অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ ও ব্রেট লি-র সঙ্গে কাহিলের সম্পর্ক দুর্দান্ত। বন্ধুর মতোই বলা যায়। ভারতে আসার আগে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছেন কাহিল। এছাড়াও আইএসএল-এ খেলে যাওয়া বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গেও তিনি সলাপরমর্শ নিয়েছেন বলে জানান কাহিল। কাহিল বললেন যে, তাঁরা শুধু ভারতের সুখ্যাতিই করেননি। কাহিলের কাছে এই বার্তাই গিয়েছে যে, এই  দেশের ফুটবল প্রতিভাও মুগ্ধ করার মতো। কাহিল এদিন এও বললেন যে, তিনি শুধু মার্কি ফুটবলার হয়েই জামশেদপুরে থাকবেন না। অন্য ভূমিকাতেও আসবেন।

কাহিলের থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, বয়সটা টুর্নামেন্টে কোনও ফ্যাক্টর হবে কি না! কারণ জামশেদপুরে অনেক তরুণ ফুটবলার রয়েছে। কাহিল মজা করেই বললেন, “প্র্যাকটিসে আসুন বুঝে যাবেন। অন্যদিকে এবার আইএসএল শুরু হবে চলতি মাসে। আর চলবে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত। ছ’মাস ব্যাপী টুর্নামেন্ট খেলতে কোনও সমস্যা নেই কাহিলের। তাঁর সংযোজন, “আমি বছরে ৩০-৪০টা ম্যাচ খেল অভ্য়স্ত। আমার কাছে এই টুর্নামেন্ট লম্বা নয়, বরং ছোট। এখানে তো প্রতি মরসুমে মাত্র ১৮টা ম্য়াচ খেলতে হবে। তাও আবার মাঝে বিরতি আছে।”

সারা পৃথিবী ঘুরে ফুটবল খেলেছেন কাহিল। প্রিমিয়র লিগ থেকে শুরু করে চিনা সুপার লিগ। কিন্তু কেন তিনি আইএসএল বেছে নিলেন। কাহিলের বললেন যে, জামশেদপুরের পেশাদারিত্ব দেখে তিনি মুগ্ধ। এদিন কাহিল নিজের ক্লাবের ভূয়সী প্রশংসা করে জানালেন, “জামশেদপুরের পেশাদারিত্বই আলাদা। এখানকার অ্যাকাডেমি থেকে শুরু করে ট্রেনিংয়ের মাঠ। সবই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের নিজস্ব কমপ্লেক্স, ট্রেনিং পিচ ও জিম আছে। সুইমিং পুল হচ্ছে। আমরা সবাই মাসের পর মাস এক অ্যাকাডেমিতে থাকছি, খেলছি, খাওয়া-দাওয়া থেকে সময় কাটানো সব একসঙ্গে। একটা পরিবারের মতো হয়ে গেছি আমরা। এটাই তো চেয়েছিলাম।”

আরও পড়ুন: দেখুন ভিডিও: ফুটবলের ডাকে বাঙালি আসবেই, বললেন সৌরভ

টিম কাহিল টিম কাহিল

কাহিলের মতে জামশেদপুর ভবিষ্য়তে ভারতীয় ফুটবলের পথপ্রদর্শক হতে পারে। তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিয়েছে। বিদেশি ও ভারতীয় ফুটবলারদের মিশেলে দুর্দান্ত একটা দল তৈরি হয়েছে। টাটা ফুটবল অ্য়াকাডেমি থেকেও ফুটবলাররা উঠে এসেছে। যারা এবার আইএসএল খেলবে। কাহিলের এখন একমাত্র লক্ষ্য দেশের তরুণ প্রতিভাদের জাতীয় দলে খেলার যোগ্য করে তোলা। তিনি বললেন, ক্রিকেটের মতোই আইএসএল দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সুতরাং ক্লাবের মাধ্যমে সঠিক বার্তা দেওয়াও হবে তাঁদের অন্যতম একটা দিক।

এদিন কাহিল একটু স্মৃতিচারণাতেও ফিরে গেলেন। যে সুব্রত পাল আজ তাঁর সতীর্থ, সাত বছর আগে তিনিই ছিলেন কাহিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ২০১১ সালে এশিয়া কাপে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। সেবার কাহিলেরে জোড়া গোলে অস্ট্রেলিয়া ৪-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। সেই ম্য়াচের কথা কাহিল বা সুব্রত কেউই ভোলেননি। কাহিল বললেন, “সুব্রত আমি গোল করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী (হেসে)। কিন্তু আমি অত্য়ন্ত ভাগ্যবান ভারতের সঙ্গে খেলতে পারায়। অত্যন্ত স্মরণীয় ম্যাচ ছিল ওটা। খেলার পর আমরা জার্সি বদলাবদলি করেছিলাম। ছবিও তুলেছিলাম। আমার দারুণ সব স্মৃতি রয়েছে ওই ম্য়াচের সঙ্গে। আজও ভুলিনি। আসলে সম্মানটাই আসল।”

অন্যদিকে ভারতের গরম আবহাওয়াতে খেলাটাও সমস্যা নয় বলে মত কাহিলের। তিনি বললেন, “দেখুন আমি এশিয়াতে প্রচুর ফুটবল খেলেছি। দুবাই, ওমান বলুন বা বাংলাদেশ। ফলে এই গরমের সঙ্গে আমি অভ্যস্ত। এটা কোনও সমস্যার নয় আমার কাছে।” অন্যদিকে জামশেদপুরের অনেক ফুটবলার অভিযোগ করেছেন যে, তাঁদের অ্যাওয়ে ম্যাচ থাকলে বিমান ধরার জন্য রাঁচি যেতে হয়। জামশেদপুর থেকে ট্রেনে বা বাসে করে তিন ঘণ্টা সফর করার পর ফের বিমান ধরে খেলতে যাওয়াটা তাঁদের কাছে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু কাহিল বললেন, তাঁরা পেশাদার। তাঁদের কাছে এটা কোনও ইস্যুই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই তিনি ট্রেনে বা বাসে চেপে খেলতে গিয়েছেন। কাহিলের অভ্যাস রয়েছে।

Advertisment