‘দঙ্গল চলচিত্র দেখে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের রেসলিংয়ে নাম লেখান। আমি এই অভিভাবকদের সান্ত্বনা দিয়ে বলছি যে কুস্তিগীররা ন্যায়বিচার পাবে,' একট্টানাজোর গলায় বলে গেলেন, আন্তর্জাতিক কুস্তিগীর গীতা এবং ববিতার বাবা মহাবীর ফোগাট'। দিল্লির যন্তর মন্তরে টানা ১২ দিন প্রতিবাদ আন্দোলন চালাচ্ছেন কুস্তিগীররা।
সেখান থেকে কয়েক'শো কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার বালালি গ্রামেও আন্দোলনের রেশ গিয়ে পড়েছে। এই গ্রামেই আন্তর্জাতিক কুস্তিগীর গীতা, ববিতা, ভিনেশ এবং রিতুর বাড়ি! ফোগাটদের জরাজীর্ণ বাড়িতেই বাস মহাবীর এবং তার পাঁচ ভাইয়ের। মহাবীর এখনও প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত। বালালি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল পাবলিক স্কুলে তিনি তাঁর ট্রেনিং অ্যাকাডেমি চালান।
যন্তর মন্তরে ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রসঙ্গে গীতা এবং ববিতার বাবা মহাবীর ফোগাট বলেন, “আমি এইমাত্র এক অভিভাবকের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। আমি তাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। দঙ্গল সিনেমা দেখে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের কুস্তিতে উৎসাহিত করেন। আমিও দুই মেয়ের বাবা। আমি এই সব বাবা-মায়ের উদ্বেগটা বুঝতে পারি। তাদের পরিবারকে আমি এই সান্ত্বনা দিই যে কুস্তিগীররা ন্যায়বিচার পাবেই,”।
২০১০ সালে যখন তার মেয়ে গীতা কমনওয়েলথ গেমসে কুস্তিতে স্বর্ণপদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে তখন থেকেই 'গ্রামের ভারতজোড়া খ্যাতি'। মহাবীর বলেন, '"৫০ জন যারা আমার ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নেয় তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ জনই মেয়ে, তার মধ্যে যদিও বালালির কেউ নেই— হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা"। মহাবীরের অ্যাকাডেমির কনিষ্ঠতম কুস্তিগীরদের মধ্যে রয়েছেন ঋদ্ধি, বয়স মাত্র আট এবং তার ভাই জয়দীপ, মাত্র ৬ বছর বয়স। মহাবীরের প্রশ্ন, "বিক্ষোভ সত্ত্বেও ফেডারেশনে নিয়মে পরিবর্তন না হলে মেয়েদের পরিবার কি এরপর তাদের কুস্তিতে পাঠাতে রাজি হবে?
গ্রামের পঞ্চায়েতের প্রধান অমিত কুমার বলেছেন, "বালালির মেয়েরা দেশের হয়ে যারা পদক এনে দেশের সম্মান বাড়িয়েছে আজ তারা দিল্লিতে রাস্তায় নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে, তাদের এই প্রতিবাদ গ্রামে আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ক্ষোভ এই কারণে যে আমাদের গ্রামের মেয়েরা যারা দেশের গৌরব এনেছে তাদের যন্তর মন্তরে কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদে বসে থাকতে হয়েছে। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং ইন্টারভিউ দিচ্ছেন যখন কুস্তিগীররা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন, পুলিশ তাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। আমরা উদ্বিগ্ন এটা ভেবে আমাদের আগামী প্রজন্মের মেয়েরা কুস্তিতে আদৈও কী তাদের আগ্রহ প্রকাশ করবে এই ভেবে"।