জমজমাট বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে কাতারে। আর তার ঠিক একদিন আগেই ভারতীয় ফুটবলের শোকের ছায়া। চলে গেলেন তিন প্রধানে দাপিয়ে খেলা তারকা বাবু মানি। দীর্ঘদিন লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। শনিবার রাতের দিকে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ময়দানে দাপিয়ে খেলা একসময়ের এই তারকা।
আশির দশকে সেরার সেরা উইঙ্গারকে বেঙ্গালুরু থেকে মহামেডান কর্তা ময়দানে নিয়ে আসেন ১৯৮৩-তে। সেই মরশুমে দুর্ধর্ষ খেলার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপরের বছরেই মোহনবাগানে যোগ দেন বাবু মানি। এরপরে টানা একদশক বাবু মানি কলকাতার তিন প্রধানে চুটিয়ে খেলেছেন।
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে আয়োজক কাতারের U-টার্ন! বিশ্বকাপে কোটি কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কায় ঘুম উড়ল FIFA-র
ময়দানি ফুটবলের অন্যতম।সেরা উইঙ্গার হওয়ায় জাতীয় দলেও সুযোগ পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। চিরিচ মিলোভানের টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলেছেন একের পর এক টুর্নামেন্ট। প্রি-অলিম্পিক্স, প্রি-ওয়ার্ল্ড কাপ, সাফ কাপ, নেহেরু গোল্ড কাপ। মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার বছরেই ১৯৮৪-তে বাবু মানি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৮৭-র সাফ কাপ জয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ এবং ১৯৮৭-র সাউথ এশিয়ান গেমসের গোল্ড মেডালিস্ট দলেও ছিলেন কর্ণাটকি এই তারকা।
শুধু জাতীয় দল নয়, ক্লাব ফুটবলে নজর কাড়া সাফল্য বাবু মানির। ড্রিবলিং এবং কাট করে ভিতরে ঢুকে প্রতিপক্ষ বক্সে হানা দেওয়া হোক বা স্কোরারদের উদ্দেশ্যে নিখুঁত ক্রস বাড়ানো- আদর্শ উইঙ্গার হওয়ার সমস্ত গুনই ছিল বাবু মানির। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে যেমন ত্রিমুকুট জিতেছেন তেমন মোহনবাগানের হয়েও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে জোড়া ফেডারেশন ট্রফি জয়ের কীর্তি। সৈয়দ নৈমুদ্দিনের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলে যখন খেলতেন তখন সতীর্থ হিসাবে পেয়েছিলেন বিকাশ পাঁজি, কৃশানু দের মত সুপারস্টারদের। মহামেডানে খেলার সময় আবার সতীর্থ হিসাবে পেয়েছিলেন জামসেদ নাসিরি, মজিদ বিশকরের মত তারকাদের।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের সবথেকে দামি বিশ্বকাপ এবারই! কাতারে ম্যাচ-টিকিটের দাম শুনলে ঘামতে হবে শীতেও
কর্ণাটক ছেড়ে দীর্ঘদিন কলকাতায় থাকার সূত্রে বাংলার ছেলেই হয়ে গিয়েছিলেন। অবসর নেওয়ার পর কলকাতাতেই আস্তানা গাড়েন। চাকরি করতেন ফুড করপোরেশন অফ ইন্ডিয়ায়। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
ইডেন গার্ডেন্সে শেষবার ডার্বি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪-এ। সেই ডার্বিতে বাবু মানির গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দেয় মোহনবাগান। বাবু মানির মৃত্যুতে যেন কলকাতা ফুটবলের এক অধ্যায়ে ফুলস্টপ পড়ল।