Bangladesh Chess Player Rani Hamid Controversy: বাংলাদেশের বিখ্যাত দাবাড়ু সায়েদা জসিমুন্নেছা খাতুন, যিনি রানি হামিদ নামে অধিক পরিচিত, এই মাসের শুরুতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২১তম ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবা টুর্নামেন্টে (৭-১৪ জুন) অংশ নিতে ভারতে এসেছেন। ভারতে আসা নিয়ে তিনি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গী আশিয়া সুলতানাকে ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় রানি হামিদ অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন।
কী ঘটেছে, কেন দুঃখে কাতর রানি হামিদ?
৩৭ বছর বয়সী আশিয়া সুলতানাকে ভারতের বৈদেশিক আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিস (FRRO) ব্ল্যাকলিস্ট করে রেখেছে। জানা গেছে, গতবার তিনি মেডিকেল ভিসায় ভারত এসে কলকাতায় একটি দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন, যা ভিসার শর্তভঙ্গ করেছে। তাই এবার তাঁকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সেন্টারে রাতভর বসিয়ে রাখা হয় এবং তাঁর লাগেজও দিতে ফেরত দেওয়া হয়নি। পরদিন তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় রানি হামিদ অত্যন্ত হতাশ। টুর্নামেন্ট চলাকালীন তিনি বলেন, “আমি খুব দুঃখিত। যিনি আমার সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে রাতভর ইমিগ্রেশন সেন্টারে বসিয়ে রাখা হয়েছিল এবং লাগেজ নিতে দেওয়া হয়নি। পরদিন তাঁকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কেটে দেশে ফিরতে হয়। এতে আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। আমি খেলার উপর মনোযোগ দিতে পারছি না।”
রানি হামিদের পারফরম্যান্সেও পড়েছে প্রভাব
১৮০০+ রেটিংধারী রানি হামিদ এই দুঃখজনক ঘটনার প্রভাবে ছয় রাউন্ডের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় এবং একটিতে ড্র করতে পেরেছেন, তাও তুলনামূলকভাবে কম রেটিংধারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে। তিনি একা ট্রাভেল করেন না, সবসময় কারও না কারও সঙ্গে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি কখনও একা ভ্রমণ করি না। সে আমার সঙ্গে এসেছিল। এখন আমি একা হয়ে গেছি।”
ভারত-বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হওয়া ৮০ বছর বয়সী রানি হামিদ বলেন, “তাঁর পাসপোর্ট ঠিকঠাক ছিল, সব কাগজপত্র ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ইমিগ্রেশন তাঁকে জানায়, মেডিকেল ভিসায় এসে টুর্নামেন্ট খেলার কারণে সে ব্ল্যাকলিস্ট হয়েছে। সে জানতই না এটি নিয়মবিরোধী। আগে জানলে কখনও আসত না। ভারতের কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনকে বিষয়টি অবহিত করা।”
রানি হামিদের অনুরোধেও মন গলেনি আধিকারিকদের
রানি হামিদ জানান, তিনি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন যেন কিছুটা মানবিকতা দেখানো হয়। তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম, আপনারা চাইলে জরিমানা নিন, ১০০ বা ২০০ ডলার, কিন্তু তাঁকে সাত দিনের জন্য থাকতে দিন, খেলতে দিন। সে কোনও অপরাধী নয়। সে কাউকে মারেনি, কিছু চুরি বা ছিনতাই করেনি। তাঁর একমাত্র ‘অপরাধ’ সে দাবা খেলেছে।”
দিল্লি চেস অ্যাসোসিয়েশনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ রানি হামিদ
এই মানসিক চাপের মধ্যেও রানি হামিদ দিল্লি চেস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজক কমিটির আতিথেয়তা ও সহযোগিতায় সন্তুষ্ট। টুর্নামেন্টটি দিল্লির ছাতরপুরে ‘দ্য টিভোলি’ নামক একটি রিসোর্টে হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রানি হামিদের খেলার ভেন্যু তাঁর হোটেল রুম থেকে পাঁচ মিনিটেরও কম দূরে। তিনি বলেন, “এখানে পরিবেশ খুবই আরামদায়ক। আমি এই স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই খেলতে পারছি। আমি খুব কৃতজ্ঞ আয়োজকদের প্রতি, যাঁরা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ও টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন।”