বিশ্বকাপে শোচনীয় পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ জিততে এসে ভারতে শেষদিক থেকে তিননম্বর হয়েছে বাংলাদেশ। মাত্র দুটো ম্যাচ জিততে পেরেছে 'হেভিওয়েট' বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপ না জিততে পারলেও টুর্নামেন্ট শেষ হতেই আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। তাঁদের প্রিয় টাইগার সমর্থকদের জন্য। ভারতের ফাইনাল হারে গোটা দেশ জুড়ে অকাল ঈদ পালন করা হয়েছে। চলেছে মিষ্টি বিতরণ। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরেও অস্ট্রেলিয়ার জয় সেলিব্রেশন করা হয়েছে।
এরপরেই ভারতের একাংশ থেকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর দাবি উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বৈরিতার আবহেই আইপিএলের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি রিটেন করেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বিশ্ববিখ্যাত সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাসকে রিলিজ করে দিয়েছে কেকেআর। এমনকি দিল্লি ক্যাপিটালস-ও বাতিল করেছে কাটার-খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমানকে।
এরপরেই বাংলাদেশ আপাতত চাপে পড়ে গেল অন্য এক কারণে। বাংলাদেশ দল আপাতত স্পনসরহীন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে বাধ্য হল। অক্টোবর পর্যন্ত 'দারাজ'-এর সঙ্গে চুক্তি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্থার। ২০২১ থেকে ২০২৩-এ পর্যন্ত দারাজ-এর সঙ্গে সেই চুক্তি শেষ হওয়ার কথা নভেম্বরে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে চুক্তি নবীকরণ করতে আর আগ্রহী নয় সংস্থাটি। তাই পুরো টার্ম শেষ হওয়ার আগেই মাঝপথে সরে দাঁড়িয়েছে দারাজ। এতে অথৈ জলে পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
আগে থেকেই দারাজ-এর চুক্তিতে অনীহার বিষয়টি জানতেন বিসিবি কর্তারা। তবে এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলের জন্য কোনও টাইটেল স্পনসর জোগাড় করতে পারেনি বাংলাদেশ বোর্ড। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হতশ্রী পারফরম্যান্স-এর জন্যই কোনও সংস্থা চুক্তি করতে রাজি হচ্ছে না। এর আগে ভারতীয় স্পনসর সাহারা, এমনকি বাংলাদেশের-ই টেলিকম সংস্থা রবি-ও স্পনসর ছিল একটা সময়ে। যে রবিতে আবার ভারতীয় টেলি-জায়ান্ট এয়ারটেলের বিনিয়োগ ছিল। এমনকি বিদেশি সংস্থা অধিকৃত দারাজ গ্রুপ-ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পনসর হতে রাজি হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। বিদেশি সংস্থার ওপর বরাবর-ই স্পনসরের ক্ষেত্রে নির্ভরশীল বাংলাদেশ ক্রিকেট।
তবে বারবার প্রত্যাশা মত পারফর্ম করতে না পারায় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি হাত গুটিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর বিনিয়োগ করা থেকে। এতেই চাপে পড়ে গিয়েছে বিসিবি।
যদিও একাধিক বাংলাদেশি প্রচারমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ফ্লাই এমিরেটস-এর সঙ্গে স্পনসরশিপ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে বিসিবির। তবে এই চুক্তির বিষয়ে সন্দিহান পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট মহল-ই।
মঙ্গলবার থেকেই বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে। এই সিরিজ চলাকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিতে স্পনসর-এর লোগো থাকবে না। ম্যাচের একদিন আগেও বাংলাদেশি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে যান স্পনসর-হীন জার্সি ছাড়াই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চরম অপেশাদারিত্বের নিদর্শন হিসাবেই দেখা হচ্ছে ক্রিকেট মহলে।
আগামী দিনে কোনও কোম্পানিকে স্পনসর হওয়ার জন্য রাজি করাতে পারবেন বিসিবি কর্তারা। সেটাই নজর থাকবে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের। নাহলে আর্থিক দুরবস্থায় ধুঁকতে হবে দেশের ক্রিকেট পরিকাঠামোকে।