নিজের সময়ে বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছিলেন। তবে গড়াপেটায় জড়িয়ে সেই কেরিয়ারই শেষ। বিশ্বক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে আর চেনাতে পারেননি। সেই কারণেই হতাশায় একাধিকবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার মহম্মদ আশরাফুল।
ক্রিকেটে কলঙ্কিত হওয়ার সাত বছর পর আশরাফুল ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, "কালের কন্ঠ (বাংলাদেশি সংবাদপত্র) যখন আমার খবর ছাপল তখন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। শুধু সেই সময়েই নয়, আরো বেশ কয়েকবার এমন চেষ্টা করেছিলাম।"
সেই ঘটনার পর আশরাফুল নিজের জামাইবাবুর সঙ্গে আলোচনা সেরেছিলেন। "আত্মহত্যার প্রচেষ্টার পর জামাইবাবু মুজিবুল আলমকে সেই কথা বলেছিলাম। সেই সময় উনি আমায় পরিহাস করে ঠিকই করেছিলেন। তিনি আমাকে আজাহারউদ্দিনের উদাহরন টেনে বলেন, ওর মত গ্রেট ক্রিকেটারও এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। সমর্থক ও ক্রিকেট অনুগামীরা হতাশ হতে পারেন। তবু আমাকে এই লড়াইয়ে সৈনিক হতে হবে।"
আশরাফুল জানালেন, সেই কঠিন সময়ে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারেন এমন চিন্তা করেই বন্ধুরা তাকে চোখের আড়াল করতেন না। "আমি সবসময় ভাবতাম সবাইয়ের সামনে কীভাবে মুখ দেখাবো, এই যন্ত্রণা সয়ে কীভাবে বাঁচব, সামাজিকভাবে আমাকে, আমার পরিবারকে যেভাবে হেয় করা হবে, তা কীভাবে রুখব।" বলছিলেন আশরাফুল।
নির্বাসনের পাঁচ বছর কাটিয়ে ফেলার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রানের পাহাড় গড়ার পরেও যেভাবে ব্রাত্য হতে হয়েছিল আশরাফুলকে, তাও ব্যক্ত করেছেন তারকা ক্রিকেটার। জানিয়েছেন, "আমি জানতাম, জাতীয় দলে ফিরে আসতে হলে আমাকে অসাধ্য সাধন করতে হবে। ২০১৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটা সেঞ্চুরি হাকিয়েছিলাম। টুর্নামেন্টে সেই রেকর্ড এখনও অক্ষত। পারফরম্যান্স করে নিজেকে প্রমাণ করি। তবে আমাকে উপেক্ষিতই থাকতে হয়।"
পাশাপাশি তিনি আরো জানান, "ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই ছিল না। আমি শাস্তি পেয়েছি। তারপর ক্ষমা চেয়েছি ফিরে আসার পর। এখন ওরা যদি আর ক্ষমা না করে, আমার আর করার কিছুই নেই। আমি জানি যে করেছি তার জন্য হয়ত টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকরা কোনোদিন ক্ষমা করবে না।"
বাংলাদেশের অন্যতম সফল এই ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের জার্সিতে ৬১টি টেস্ট, ১৭৭ ওয়ানডে এবং ২৩টি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তিন ফরম্যাটে রান করেছেন যথাক্রমে ২৩৩৭, ৩৪৬৮ এবং ৪৫০। ১২ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে আশরাফুল ওয়ানডে ও টেস্টে যথাক্রমে ৩টে ও ৬টা শতরান হাঁকিয়েছেন।
২০০৫ সালে দুরন্ত রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরান হাঁকান। সেবারেই অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম বারের মত হারায় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলার সময় গড়াপেটায় ধরা পড়েন। তারপরে পাঁচ বছরের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে।