Advertisment

নিলামের ফুটবল টুর্নামেন্ট করা বারাসতের এই ক্লাবের স্বপ্ন নিজেদের অ্যাকাডেমি

কখনও শুনেছেন কি, পাড়ায় ফুটবল প্রতিযোগিতায় দল বেছে নেওয়া হচ্ছে নিলামের মাধ্যমে? যেমনটা ক্রিকেটে আইপিএল-এ হয়? এখানে রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচে নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেই টুর্নামেন্টে বল গড়ায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mss football match at Barasat Express Photo Shashi Ghosh

ছবি: শশী ঘোষ।

পূর্ব বারাসত আদর্শ বিদ্যাপীঠের গা লাগোয়া এমএসএস (মনোরঞ্জন স্মৃতি সংঘ) ক্লাব শুধু বারাসতই নয়, সমগ্র উত্তর ২৪ পরগণাতেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, গোটা রাজ্যেই তো প্রচুর ক্লাব রয়েছে, তাহলে কেন কথা হচ্ছে এমএসএসকে নিয়ে? মিডিয়ায় খবর হওয়ার মতো এমন কী কারণ রয়েছে?

Advertisment

গত পাঁচ বছর ধরেই এমএসএস স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখে একটু অন্যরকম ভাবে। দেশের ৭২ তম স্বাধীনতা দিবসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফি-বছর এই দিনে এমএসএস ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। পড়ে মনে হতে পারে, এ আর এমন কী ব্যাপার! স্বাধীনতা দিবসে পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল টুর্নামেন্ট বা ছোট বার বসিয়ে খেলা তো কলকাতা তথা এই রাজ্যের চেনা চিত্র। তাহলে কেন এমএসএস বাকিদের থেকে আলাদা?

আরও পড়ুন: ২৫ বছর ধরে ম্যাচের টিকিট জমাচ্ছেন এই মোহনবাগানি

কখনও শুনেছেন কি, পাড়ায় কোনও ফুটবল প্রতিযোগিতায় দল বেছে নেওয়া হচ্ছে নিলামের মাধ্যমে? যেমনটা ক্রিকেটে আইপিএল-এ হয়। হয়তো শোনেননি। ঠিকই পড়েছেন, এখানে রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচে নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেই টুর্নামেন্টে বল গড়ায়। ফারাক একটাই। পয়সার পরিবর্তে নিলামে থাকে পয়েন্ট।

MSS championship Express Photo Shashi Ghoshmss chm-5468-002 গোলের লক্ষ্যে। ছবি: শশী ঘোষ

ম্যাচের দু’দিন আগে এমএসএস-এর ব্যানার-ফ্লেক্সে সাজে ক্লাবের বাঁধানো বিরাট মঞ্চ, দেখে নাটমন্দির মনে হতেই পারে। কিন্তু সেখানেই হয়ে এমএসএস-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সুনীল ছেত্রী, রবিন সিংয়ের কাটআউটের মধ্যে দিয়ে খেলে যায় এলইডি লাইটের কারসাজি। টেবিলে বসা দলের মালিকদের সামনে থাকে ল্যাপটপ। মঞ্চের বিশাল এলসিডি-তে ভেসে ওঠে খেলোয়াড়দের প্রোফাইল। নিলাম সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকেন ক্লাবেরই অভিজ্ঞ সদস্য। দেখে মনে হবে না, কলকাতা থেকে সোয়া এক ঘণ্টার দূরত্বের কোনও ক্লাবের নিলামজনিত অন্দরসজ্জা এটা। বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলের নিলামকেও হার মানাবে। এবার ছিল ক্লাব জার্সিতে র‌্যাম্প শো-র আয়োজনও। চোখ ধাঁধানো আয়োজন একেবারে।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার, নিলামের জন্য সফটওয়্যার বানানো থেকে শুরু করে দলের জার্সি তৈরি ও ডিজাইনিংয়ের মতো প্রতিটি বিভাগেই প্রশিক্ষিত দল রয়েছে এমএসএস-এর। এতটাই পেশাদার এই ক্লাব। ৪,০০০ টাকা এন্ট্রি-ফি দিয়ে ক্লাবগুলোকে নাম নথিভুক্ত করতে হয়ে। এর ওপর মেডিক্যাল ও খেলোয়াড়দের ড্রিঙ্কসের বন্দোবস্তও সুনিশ্চিত করতে হয় ক্লাবগুলোকেই। কোনও ক্লাব যদি সেসবের দায়িত্ব নিতে না পারে, এমএসএসকে বরাত দিলে তারাই সবটা করে দেয় অর্থের বিনিময়ে। এমনকি খেলোয়াড়দের জার্সি আর মালিকদের ড্রেস কোডের মধ্যেও ফারাক থাকাটা বাঞ্ছনীয়। এবছর স্পনসর পেতেও এমএসএসকে ভাবতে পর্যন্ত হয়নি। টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা দেখেই স্পনসরদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছেন ক্লাবের কর্তা রাকেশ রায়।

mss football match at Barasat Express Photo Shashi Ghosh চলছে নিলাম। ছবি: শশী ঘোষ

আনটাচেবল টেন, কালিকাপুর টাইগার, রোমান গ্ল্যাডিয়েটর্স, আরিয়ান এফসি, ইন্ডিপেনডেন্ট ওয়ারিয়র্স, কালিকাপুর লায়ন, লায়নহার্টস ইউনাইটেড ও অ্যাডামেন্ট বুলস লড়াইতে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোমান গ্ল্যাডিয়েটর্স। রানার্স কালিকাপুর লায়ন। খোদ কলকাতাতেও এরকম নিলাম করে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় কী না জানা নেই। ক্লাবের উল্টোদিকের চায়ের দোকানে বসেই ক্লাবের সদস্যরা সন্ধেবেলা নিয়ম করে আড্ডা দেন। তখনই একজন এই নিলাম করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় এই অভিনব ফুুটবল টুর্নামেন্ট। এমনটাই জানিয়েছেন রাকেশ।

এই ফুটবল টুর্নামেন্টের হাত ধরেই কলকাতা এবং ভারতের বেশ কিছু নামি ক্লাবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে এমএসএস। কারণ তাদের লক্ষ্য একটাই। কী সেই টার্গেট? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন রাকেশ, “দেখুন বেশ কিছুটা মিডিয়া কভারেজ পেয়েছি আমাদের এই টুর্নামেন্টের। কিন্তু আমাদের এখন একটাই টার্গেট। যেভাবেই হোক আইএফএ-র থেকে অনুমোদন পেয়ে আমরা নার্সারি লিগে দল নামাতে চাই।"

নারায়ণ পালের কোচিংয়ে এখানকার অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে ১৫ দলের ফুটবলাররা কলকাতায় ফুল ফোটাচ্ছে। রেনবো, ইউনাটেড স্পোর্টস ও ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দলে খেলছে ক্লাবের প্রশিক্ষণ নেওয়া খেলোয়াড়রা। সদ্যসমাপ্ত অনূর্ধ্ব-১৯ আইএফএ শিল্ড জয়ী ইস্টবেঙ্গল দলে খেলেছে এই ক্লাবেরই তুষার দাস। রাকেশ বলছেন, “আমাদের জায়গা, জিম, মাঠ সবই আছে। শুধু আমাদের দরকার আর্থিক সঙ্গতি। ভবিষ্যতে এই ক্লাবকে অ্যাকাডেমি বানানোর স্বপ্নই দেখি আমরা। মিনার্ভা অ্যাকাডেমি ও পুণে সিটি-র মতো কলকাতার বাইরের ক্লাবের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। আমরা আশাবাদী ভাল কিছু করতে পারব। তবে সবার আগে আমরা আইএফএ-র অনুমোদনের জন্য ঝাঁপিয়েছি। আজ নিউ ব্যারাকপুরকে সবাই রেনবো অ্যাথলেটিক ক্লাবের নামে চেনে, আমরা চাই আগামি দিনে বারাসতকে যেন সবাই এমএসএস-এর নামে চেনে।”

Football Kolkata Football kolkata street football
Advertisment