Advertisment

লেজেন্ডস ম্যাচে আয়োজকরাই স্টার, টিম লিস্ট থেকে জল, সবই স্বপ্ন সেখানে

আয়োজকদের চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব ম্যাচের দিনও অব্যাহত। আয়োজন শব্দটার থেকে তাঁরা কয়েকশো যোজন দূরেই বাস করেন। এই ম্যাচ উপলক্ষ্যে একাধিকবার প্রেস কনফারেন্সের সময় ও ভেন্যু বদলেরও নজির রয়েছে ফুটবল নেক্সট ফাউন্ডেশনের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
FCB VS MB match Express Photo Shashi Ghosh

গোলের পর বার্সেলোনার উচ্ছ্বাস। ছবি-শশী ঘোষ

পেলে থেকে দিয়েগো মারাদোনা, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার থেকে লেভ ইয়াশিন। ইউসেবিও থেকে লিওনেল মেসি। তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।ফুটবল গ্রহের সব নক্ষত্ররা নেমে এসেছেন কলকাতায়। সাক্ষী থেকেছে তিলোত্তমা। ভারতীয় ফুটবলের মক্কা আবেগে ভেসেছে এই সব কিংবদন্তিদের নিয়ে। চলমান ইতিহাসকে আঁকড়ে ভালবাসার ডালি সাজিয়ে দিয়েছে শহর।

Advertisment

সময়ের পথ ধরে বেশ কিছুটা পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে, খোদ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বায়ার্ন মিউনিখের জার্মান মহাতারকা অলিভার কান খেলেছেন তাঁর ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। তারিখটা ছিল ২০০৮-এর ২৭ মে। এরপর ২০১০-এ বার্য়ানের অল স্টার টিম খেল গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল অল স্টারের বিরুদ্ধে।

ঠিক আট বছর পর ফের এই কলকাতায় এল বার্সেলোনার মতো ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্লাব। নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের আরও একটা রেড লেটার ডে। ইতিহাসের পাতায় আরও একটা গৌরবময় অধ্যায়। বার্সেলোনার প্রাক্তন ফুটবলাররা সারা পৃথিবী জুড়ে খেলে বেড়ান। তাঁদের বলা হয় বার্সেলোনা লেজেন্ডস। এই ফুটবলারদের বিরুদ্ধেই শুক্রবার নেমেছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তনরা। এই ম্যাচের জন্যই সুব্রত ভট্টাচার্যের কোচিংয়ে তৈরি হয়েছিল বাগান লেজেন্ডস টিম।

আরও পড়ুন: সম্মানের স্বার্থে টাকা ফেরালেন মোহনবাগানের লেজেন্ডরা

যে বার্সা টিমটা বাগানের বিরুদ্ধে খেলতে চলেছে তাঁদের নাম আর প্রোফাইল মিডিয়ার দৌলতে অনেক আগেই সকলের জানা হয়ে গিয়েছিল। সত্যি বলতে, এই দলে সে অর্থে ছিল না কোনও আকর্ষণ। একটা রোনাল্ডিনহো থাকলেও নাহয় কথা ছিল। তারকা বলতে হাভিয়ের সাবিওলা, হুলিয়ানো বেলেত্তি ও এডমিলসন। আইএসএল খেলে যাওয়ার সুবাদে হোফ্রে মাতেউ ও সিমাও সাব্রোসাকেও চেনেন অনেকে। প্রথম দিন থেকে একটা প্রশ্নই উঠেছিল, তারকাহীন বার্সা টিমকে দেখার জন্য কেন মানুষ টাকা খরচ করবেন? টিকিটের দাম যেখানে রাখা হয়েছিল ২৫০ ও ৫০০। যা অতিরিক্ত বলেই মনে হয়েছিল।

ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগেও যুবভারতীর গ্যালারিতে ছিল শ্মশানের নীরবতা। অনেকই শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, গ্যালারি ভরবে তো? কিন্তু কোনও এক জাদুবলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গ্যালারি গমগম করতে শুরু করে দিল। হাজার পঁচিশ মানুষের সমর্থন নিয়েই খেলল বার্সা। মোহনবাগানের নামে জয়ধ্বনির সঙ্গে ছিল অত্যন্ত পরিচিত মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ওয়েভ করা।

FCB VS MB match Express Photo Shashi Ghosh মোহনবাগান ও বার্সেলোনার ফটো সেশন। ছবি: শশী ঘোষ

এই ম্যাচের উদ্বোধনীতে ছিল না কোনও চমক। বিধায়ক সুজিত বসু ও প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের করমর্দন আর ফটো সেশনের পরেই কিক-অফ। কথা ছিল, বার্সার প্রাক্তন ফুটবলাররা কলকাতা লিগ জয়ী মোহনবাগান ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেবেন। কিন্তু কথা কথা হয়েই থেকে গেল। বাস্তবে অত্যন্ত ফ্যাকাশে, ম্যাড়মেড়ে উদ্বোধন। সন্ধ্যে সাতটার ম্যাচ শুরু হল পাক্কা ১৩ মিনিট পর। এরপর বিভ্রান্তির পালা। সাত নম্বর জার্সি পরে দু’জন নেমেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে। সাবিওলা ও সিমাও। ১৫ নম্বর জার্সি পরে এডমিলসন ছাড়াও খেললেন আরও এক। এমনকি দলের প্রথম এগারোতে  দু’জন ন'নম্বর জার্সিধারী।

দলের কয়েকজন বাদে কেউই সেভাবে পরিচিত নন, কাজেই চেনা দায় হয়ে উঠেছিল। তার ওপর আয়োজকরা কোনও টিম লিস্ট দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেননি। আইএফএ-র এক আধিকারিকের থেকে পাওয়া টিম লিস্টের ছবি তুলে সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। এমনকি সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম জলের সরবরাহও ছিল না। প্রেসবক্সের বাইরে একটি ডিসপেনসার রাখা হয়েছিল। সেখানে জল ফুরিয়ে যাওয়ার পর রিফিল করার কথা ভাবেননি কেউ। হাই-টি সেখানে দিবাস্বপ্ন। আয়োজকদের চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব ম্যাচের দিনও অব্যাহত। আয়োজন শব্দটার থেকে তাঁরা কয়েকশো যোজন দূরেই বাস করেন। এই ইভেন্ট উপলক্ষ্যে অতীতে একাধিকবার প্রেস কনফারেন্সের সময় ও ভেন্যু বদলেরও নজির রয়েছে ফুটবল নেক্সট ফাউন্ডেশনের।

আরও পড়ুন: বার্সা লেজেন্ডদের কলকাতা অভিষেকে সাংবাদিক হেনস্থা

এই ম্যাচে বাগানকে হাফ ডজন গোল দিল বার্সা। গোটা ম্যাচে মাত্র দু’টো সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। যেগুলি কাজে লাগাতে তারা ব্যর্থ হয়। কিছুটা হলেও মান রাখলেন রহিম নবি। প্রথমার্ধেই বার্সেলোনার বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটুর জন্য গোল পাননি। লড়লেন অসীম বিশ্বাসও। তে-কাঠির নিচে অনবদ্য দেখাল কল্যাণ চৌবেকে। এডমিলসনের একটা দুরন্ত শট সেভ করেন জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক। অসীম, রহিমরা এবারও কলকাতা লিগ খেলেছেন। কাজেই তাঁরা দলের 'তরুণ' মুখ। সন্দীপ নন্দীও পুরোপুরি ফুটবলকে বিদায় জানাননি। ফলে এঁদের সঙ্গে নিয়েও সুব্রতর ছ’গোলে হারটা মানা যায় না। যেখানে বার্সার অনেকেই ছিলেন চল্লিশোর্ধ।

Javier Saviola সাবিওলাকে আটকানোর প্রচেষ্টায় মোহনবাগান। ছবি: শশী ঘোষ।

বাগানের ক্যাপ্টেনস আর্মব্যান্ড ছিল অলোক দাসের হাতে। বাসুদেব মণ্ডল, ষষ্ঠী দুলে, দীপেন্দু বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান, অনীক ঘোষ ও অমিত ঘোষরাও খেললেন এই ম্যাচে। বার্সার ফুটবলারদের মধ্যে এডমিলসন সাবিওলার জন্যই যুবভারতী গলা ফাটিয়েছিল। সাবিওলাকে প্রাক্তন মানতে এখনও অসুবিধা হয়। তাঁর মধ্যে এখনও সেই পুরনো ম্যাজিক আছে। অন্যদিকে এডমিলসনের উইং দিয়ে দৌড় আর বক্সের মধ্যে বিদ্যুত গতিতে ঢুকে পড়ার ঝাঁঝ রয়েছে। বোঝা যায় তাঁর রক্তে জিঙ্গা আছে।

এদিন প্রাক্তন রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার স্টার সাবিওলাই গোলের খাতা খোলেন বার্সার হয়ে। সাত মিনিটের মধ্যে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। এরপর ২৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করেন রজার গার্সিয়া। লেডেন্ডস টিমে এটি তাঁর অভিষেক ম্যাচ ছিল। ৪৩ মিনিটে পেদ্রো লান্ডির গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করে বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ ও ৮৬ মিনিটে জোড়া গোল করেন প্রাক্তন লিভারপুল ও ফুলহ্যামের খেলোয়াড় জারি লিটম্যানেন। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময় বাগানের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন হোফ্রে।

CB VS MB match Express Photo Shashi Ghosh গোলের দিকে আগুয়ান হাভিয়ের সাবিওলা। ছবি: শশী ঘোষ

ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বার্সার কোচ অ্যালবার্ট ফেরার বলেন, এটিই তাঁদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। এর আগে কখনও এত দর্শকের সামনে তাঁরা খেলেননি। মোহনবাগানের প্রশংসাও করেন তিনি। জানান, “মোহনবাগান হারলেও ভালো খেলেছে। ওদের অর্ধে যখন বল ছিল, ওরা তখন ভাল খেলেছে। গরমের জন্য একটু সমস্যা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মজা করেই খেলি আমরা।” ফেরারের বার্সা এই নিয়ে ন'ম্যাচে ছ'টা জয় পেল। তিনি জানিয়েছেন, খেলোয়াড়রা নিয়মিত খেলেই এই ফিটনেস ধরে রেখেছেন।

Barcelona Mohun Bagan
Advertisment