BCCI Seek Dhoni Help: অবশেষে মহেন্দ্র সিং ধোনির শরণাপন্ন হচ্ছে বিসিসিআই। স্টিফেন ফ্লেমিংকে টিম ইন্ডিয়ার কোচ করতে ধোনি-নামক মহাস্ত্র প্রয়োগ করতে চলেছেন জয় শাহরা। দ্রাবিড়ের কোচিংয়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপের পরেই। আর দ্রাবিড় বোর্ডকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর জাতীয় দলের কোচ হতে আগ্রহী নন। পুনরায় আবেদনও করবেন না।
দ্রাবিড়ের মনোভাব চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেই বোর্ড কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল কোচ খোঁজার জন্য। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রথম জানিয়েছিল, বিসিসিআই পছন্দের তালিকায় একদম শীর্ষে রয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংস কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং। তবে কিউই কোচের চিন্তার বিষয় ছিল ২০২৭ পর্যন্ত কোচিংয়ের মেয়াদ পর্ব।
বোর্ডের সঙ্গে ফ্লেমিংয়ের প্রাথমিক যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তিনি এই বিষয়টি খোলসা করেছিলেন। এরপরেই বোর্ড তড়িঘড়ি একাধিক দেশি, বিদেশি কোচের সঙ্গে আলোচনা সেরে রাখে। এই তালিকায় জাস্টিন ল্যাঙ্গার, রিকি পন্টিং থেকে মাহেলা জয়াবর্ধনে যেমন রয়েছেন তেমন গৌতম গম্ভীর, আশিস নেহরার ওপরেও রয়েছে বোর্ডের নজর।
তবে ঘটনা হল, ফ্লেমিং এখনও বোর্ডের শীর্ষ বাছাই। বোর্ড ব্ল্যাকক্যাপসদের প্রাক্তন অধিনায়ককে এখনই না পাওয়ার আশা ছাড়ছে না। আর বোর্ড সেইজন্যই হাতিয়ার করতে চলেছে মহেন্দ্র সিং ধোনি নামক অস্ত্রকে। ধোনিকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচকে রাজি করানোর।
সিএসকের কোচ হওয়ার পরে ফ্লেমিং দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন। বিগব্যাশে মেলবোর্ন স্টার্স-এ চার বছর কোচিং করিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় টি২০ লিগে জো'বার্গ সুপার কিংসের কোচ হয়েছেন। এমনকি মেজর লিগ ক্রিকেটের টেক্সাস সুপার কিংসের কোচ হিসেবে দেখা গিয়েছে। দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিই সিএসকের সিস্টার ফ্র্যাঞ্চাইজি। এছাড়াও হান্ড্রেড লিগে সাদার্ন ব্রেভ-এর হেড কোচ হয়েছেন। জুলাইয়ে একই সঙ্গে মেজর লিগ ক্রিকেট এবং হান্ড্রেড হওয়ায় দুই টুর্নামেন্টেই ব্যস্ত সময় কাটাবেন তিনি।
ঘটনা হল, দুনিয়া জুড়ে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ হলেও পরিবারের সঙ্গে নিয়ম করে সময় কাটাতে পারেন তিনি। তবে ভারতের কোচ হলে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে তাঁকে। সেই কারণেই তিনি প্রাথমিকভাবে নিমরাজি।
হিন্দুস্তান টাইমস-কে বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, "ফ্লেমিং আমাদের না বলেননি। চুক্তির মেয়াদ পর্ব নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তবে এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। এমনকি গতবার রাহুল দ্রাবিড়ও প্রাথমিকভাবে রাজি ছিলেন না। ওঁকে রাজি করাতে হয়েছে। আর ফ্লেমিংকে পাওয়ার ক্ষেত্রে ধোনির থেকে ভালো আর কে হতে পারেন?"
ধোনির সঙ্গে ফ্লেমিংয়ের বিশেষ হৃদ্যতা রয়েছে। আইপিএলের শুরুর সময় থেকে দুজনে ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ-ক্যাপ্টেনের ভূমিকা পালন করেছেন। এই জুটিই সিএসকেকে পাঁচটা আইপিএল খেতাব এনে দিয়েছে। দুজনে এতটাই ঘনিষ্ঠ যে সিএসকে যখন নিষিদ্ধ হয়, তখন রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টস ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ-অধিনায়ক হন দুজনে।
বোর্ডের শীর্ষকর্তারা মনে করছেন, যদি কেউ ফ্লেমিংকে রাজি করাতে পারেন, সেটা একমাত্র ধোনি। আইপিএলের সময় আলোচনা করা মোটেই ঠিক ছিল না। তবে এখন সেই আলোচনা শুরু করার সময় এসেছে।
কেন ফ্লেমিং-ই?
রোহিত-কোহলি কেরিয়ারের শেষের দিকে। নতুন ক্রিকেটাররা উঠে আসছেন। এই সন্ধিক্ষণে বোর্ডের তরফে অভিজ্ঞ কোচের উপর ভরসা রাখা হচ্ছে। ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে আনা, দলে পজিটিভ পরিবেশ বজায় রাখা, সিএসকেকে দীর্ঘদিন সাফল্য এনে দেওয়া- স্টিফেন ফ্লেমিংয়ে মুগ্ধ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
স্টিফেন ফ্লেমিংয়ে বোর্ডের নজরে চমকের কিছু নেই। সাফল্যের সঙ্গে সিএসকেকে দীর্ঘদিন কোচিং করানো ফ্লেমিংয়ে মুগ্ধতার অভাব নেই বোর্ডের অন্দরমহলে। খেলোয়াড়ি জীবনে চতুর অধিনায়ক ছিলেন। কোচ হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে দীর্ঘদিন একই মন্ত্রে এক দলকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। দুবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, পাঁচবার দলকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন। আইপিএলে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিতে সবথেকে বেশি সময় কোচিং করানোর নজির তাঁর দখলে। ক্রিকেটারদের থেকে সেরাটা বের করে আনার আনার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। শিভম দুবেকেই তিনি যেমন আইপিএলে অন্য চেহারায় হাজির করিয়েছেন। এছাড়াও সিএসকে স্কোয়াডে থাকা একাধিক ঘরোয়া ক্রিকেটারও উপকৃত হয়েছেন ফ্লেমিংয়ের কোচিংয়ে।
জানা যাচ্ছে দলের সিনিয়র তারকাদেরও এরকম হাই প্রোফাইল কোচের প্রতি আস্থা রয়েছে। সিনিয়রদের প্রস্থানের পর নতুন প্রজন্মের তারকারা দলের কোর টিম গঠন করবেন আগামী তিন বছরের মধ্যেই। এই সময়েই ফ্লেমিংকে আনতে চাইছেন বিসিসিআই কর্তারা।