সাক্ষাৎকারের জন্য হুমকি দিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহাকে। অভিযুক্ত সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বড় শাস্তি দিতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। জানা যাচ্ছে দু বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে টক শো হোস্ট বোরিয়া মজুমদারকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বোর্ডের এক সূত্র জানিয়েছেন, "ভারতীয় বোর্ডের সমস্ত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে জানানো হবে, বোরিয়া মজুমদারকে যেন স্টেডিয়ামে প্রবেশ না করতে দেওয়া হয়। হোম ম্যাচে ওঁকে মিডিয়া এক্রিডিটেশন দেওয়া হবে না। আইসিসির কাছেও চিঠি লিখে ওঁকে ব্ল্যাকলিস্টে পাঠানোট বন্দোবস্ত করা হবে। ক্রিকেটারদের নির্দেশ দেওয়া হবে যাতে কেউ ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে।"
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ৩৭ বছরের তারকা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা টুইটার পোস্টে লেখেন, "ভারতীয় ক্রিকেটে এত অবদান সত্ত্বেও এমনটা আমাকে ফেস করতে হয় স্বনামধন্য সাংবাদিকের কাছ থেকে। সাংবাদিকতা এই পর্যায়ে নেমে এসেছে।"
নিজের টুইটার বক্তব্যের সঙ্গেই ঋদ্ধিমান হোয়াটসএপ চ্যাটের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেই চ্যাট বোরিয়া মজুমদারকে হুমকির সুরে লিখতে দেখা গিয়েছে, "তুমি ফোন করলে না। আর কখনও তোমার সাক্ষাৎকার নেব না। অপমান সহজে হজম করি না। এটা আমার মনে থাকবে।"
এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আনার পরেই ক্রিকেট দুনিয়ার অকুন্ঠ সমর্থন পেয়ে যান ঋদ্ধিমান সাহা। জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী সৌরভকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ঘটনা খতিয়ে দেখসর জন্য বোর্ডের তরফে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা। যেখানে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমল, বোর্ডের এপেক্স কাউন্সিলের মেম্বার প্রভতেজ ভাটিয়া এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্লা।
সেই কমিটির কাছে হাজির হয়ে ঋদ্ধিমান সাহা জানান, তাঁকে কীভাবে হুমকি দেন বোরিয়া মজুমদার। যদিও অভিযুক্ত বোরিয়া মজুমদার পাল্টা ঋদ্ধিমানের বিরুদ্ধে হোয়াটসএপের স্ক্রিনশট বিকৃতির অভিযোগ আনেন। সেই ঘটনাও বোরিয়া বোর্ড নিযুক্ত কমিটির কাছে দাখিল করেন।
এরপরেই ময়দানে অবতীর্ণ হন ক্রিকেট টক শো-র সঞ্চালক বোরিয়া মজুমদার। তিনি সরাসরি টুইটারে ভিডিও পোস্ট করে জানান, তাঁর হোয়াটসএপ চ্যাটের বিকৃত করে সমবেদনা কুড়োনোর চেষ্টা করেছেন তারকা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
ঋদ্ধিমান সাহার হোয়াটসএপ পর্ব খতিয়ে দেখছেন বোর্ডের সহ সভাপতি রাজীব শুক্লা, কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমল এবং বোর্ডের এপেক্স কাউন্সিল মেম্বার প্রভতেজ সিং ভাটিয়া। সেই তদন্ত কমিটির কাছে সওয়াল-জবাব পর্বের পরে ঋদ্ধিমান সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, "যা জানি, সমস্ত কিছুই বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছি। সমস্ত তথ্য দিয়েছি। এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। বোর্ডের তরফে বলা হয়েছে, মিটিংয়ের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে মুখ না খুলতে।" ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋদ্ধিমান সাহা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক হিসাবে বোরিয়া মজুমদারের নাম জানিয়েছেন। যিনি একটি ক্রিকেট শো 'ব্যাকস্টেজ উইথ বোরিয়া' সঞ্চালনা করেন।
বোরিয়া মজুমদারের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঋদ্ধিমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে চলেছেন তিনি। "ঋদ্ধিমানের নামে মানহানির মামলা দায়ের করছি। ও আমার স্ক্রিনশট অবৈধভাবে বিকৃত করেছে। এদিনই বোর্ডকে আমি সমস্ত তথ্য পাঠিয়েছি। বোর্ডের সকলকে ইমেলের মাধ্যমে গোটা ঘটনা জানিয়েছি। এছাড়াও টুইট করে নিজের তরফের বক্তব্য জানিয়েছি।"
ঘটনার সূত্রপাত গত মাসে ফেব্রুয়ারির ১৯-এ। ঋদ্ধিমান সাহা নিজের হোয়াটসএপ চ্যাটের স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে এনে হৈচৈ ফেলে দেন। ক্যাপশনে লেখা ছিল, "ভারতীয় ক্রিকেটে এত অবদানের পরেও তথাকথিত শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকের কাছ থেকে এরকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। সাংবাদিক কোন পর্যায়ে নেমে গিয়েছে!"
ঋদ্ধিমানের সেই শেয়ার করা স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক হুমকির সুরে বলছেন, "তুমি ফোন করলে না। আর কোনওদিন তোমার সাক্ষাৎকার নেব না। অপমান খুব সহজে নিই না। আমার এটা মনে থাকবে।" হুমকির ভাষা প্রয়োগ দেখার পরে ঋদ্ধিমানের পাশে দাঁড়ান একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার, জাতীয় দলের প্রাক্তন হয়ে যাওয়া হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও। তবে জনসমক্ষে সেই সাংবাদিকের নাম জানাননি রবি শাস্ত্রী।