ভারতের অভ্যন্তরীণ টি-২০ ক্রিকেট লীগের ওপর ঘনীভূত হচ্ছে বেটিং চক্রের ছায়া। জল এতদূর গড়িয়েছে যে বিসিসিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা বা অ্যান্টি কোরাপশন ইউনিট (ACU) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, প্রয়োজনে এই লীগ বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশও করেছে তারা বোর্ডের কাছে।
বিসিসিআই-এর কাছে জমা দেওয়া একটি গোপন রিপোর্টে ACU জানিয়েছে যে এবছরের মরসুম চলাকালীন তামিল নাড়ু প্রিমিয়ার লীগে (TNPL) টুটি পেট্রিওটস বনাম মাদুরাই প্যান্থারসের ম্যাচে আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট 'Betfair' এ প্রায় ২৪ মিলিয়ন পাউন্ড বা ২২৫ কোটি ভারতীয় টাকার বাজি ধরা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতের একটি রাজ্যস্তরের লীগে এই অস্বাভাবিক পরিমাণ বেটিং দেখে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ে Betfair যে টুটি পেট্রিওটসের কোনও ম্যাচে বেট নেওয়াই বন্ধ করে দেয় তারা। এই রিপোর্টের মূল তথ্যসূত্র এমন দুটি সংস্থা, যারা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে যে কোনও টি-২০ লীগ চলাকালীন যে কোনও টিমের ওপর কত বাজি ধরা হয়েছে, তার ওপর নজর রাখে।
অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ACU প্রধান অজিত সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। গত সপ্তাহে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দুটি TNPL ফ্র্যাঞ্চাইজকে বরখাস্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু এর পরে তামিল নাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এক অধিকর্তা জানান, কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজকে বরখাস্ত করা হয়নি। তবে তিনি এও জানান যে টুটি পেট্রিওটসের দুজন সহ-অংশীদারকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির পরামর্শে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছিল যে তামিল নাড়ু প্রিমিয়ার লীগে অবাধ দুর্নীতি আবিষ্কার করার পর একজন ভারতীয় ক্রিকেটার, একজন নিয়মিত আইপিএল খেলোয়াড় এবং একজন রঞ্জি ট্রফি কোচ সমেত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালায় বিসিসিআই-এর ACU। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক সূত্রের খবর, ম্যাচ ফিক্সার এবং বুকিরা টিমের মালিকের সঙ্গে অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজের দখল নিয়ে "এমনভাবে দল চালাত যাতে বেটিং থেকে প্রচুর লাভ হয়"।
সৌরভ আরও জানিয়েছিলেন যে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির সঙ্গে যুক্ত অন্তত একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে জাতীয় স্তরের এই টি-২০ টুর্নামেন্ট চলাকালীন যোগাযোগ করে কিছু বুকি। কর্ণাটক প্রিমিয়ার লীগের সেই খেলোয়াড় আপাতত 'হোল্ডে' রয়েছেন বলেও জানান সৌরভ।
গত একবছরে বিভিন্ন টি-২০ লীগে দুর্নীতির তদন্তে ব্যস্ত থেকেছে ACU। টি-২০ মুম্বই লীগেও একটি দলের মালিক তাঁকে 'স্পট ফিক্সিং' করার প্ররোচনা দিয়েছেন, মুম্বইয়ের এক খেলোয়াড়ের এই অভিযোগেরও তদন্ত করছে তারা। অতীতে ACU-এর প্রধান অজিত সিং বলেছেন যে ম্যাচ ফিক্সিং রুখতে কর্তৃপক্ষের আইন প্রণয়ন করা উচিত।
সৌরভ বলেছেন যে লীগের পর লীগে দুর্নীতি চলতে থাকলে আরও মজবুত করতে হবে ACU-কে, এবং এও জানিয়েছেন যে আগামী বছর বর্তমান কাঠামোর পর্যালোচনা করা হবে। তাঁর কথায়, "আমরা এর মোকাবিলা করছি, অ্যান্টি-কোরাপশন প্রক্রিয়াটা ঠিক করছি। অ্যান্টি-কোরাপশন বিভাগে সবচেয়ে ভালো লোক দরকার আমাদের, তাকে আরও মজবুত করা দরকার। যদি দুর্নীতি বন্ধ না হয়, যদি আমাদের প্রক্রিয়া কাজ না করে, তবে আগামী বছর অন্য কিছু ভাবব আমরা।"
ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরু ক্রাম ব্রাঞ্চ কর্ণাটক প্রিমিয়ার লীগে সম্ভাব্য দুর্নীতি এবং স্পট ফিক্সিং সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করেছে একাধিক ব্যক্তিকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত নাম হলো কর্ণাটকের প্রাক্তন অধিনায়ক সিএম গৌতমের। গ্রেফতার হন বেলাগাভি প্যান্থারসের মালিক আশফাক আলি থারা, এবং বেশ কিছু বুকি, অন্যান্য খেলোয়াড়, এবং কিছু দলের সহকারী কর্মী।