শেষ দু'বছর তীরে এসে তরী ডুবেছে। অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় ওয়ানডে-র ফাইনালে উঠেও রানার্স ট্রফিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাকে। কিন্তু এবার সব হিসাব বদলে দিলেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক, অঙ্কিত মিশ্র ও ঈশান পোড়েলরা।
রবিবার দেহরাদুনে গুজরাতকে ৬৪ রানে হারিয়ে চ্য়াম্পিয়ন হয়েছে বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দল। আর শেষ তিন বছর এই দলটাকে তিলেতিলে তৈরি করেছেন বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরাশিস লাহিড়ী। শেষ দু’বছরে তাঁর সৌরাশিসের ছেলেরা ওয়ান ডে ও সি কে নাইডু ট্রফির ফাইনাল খেললেও ট্রফি অধরাই থেকে গিয়েছে।
Brilliant #Bengal become #NationalU23 One Day #Champion
All-round Bengal U23 lift Men's U23 One Day Trophy by thrashing Gujarat by 64 runs to conclude their superb run in the tournament today in Dehradun.#CAB pic.twitter.com/Jeq93D6fB3
— CABCricket (@CabCricket) December 1, 2019
সৌরাশিসের কাজটা এবার মোটেই সহজ ছিল না। গতবারের দলটা প্রায় বদলে গিয়েছে। কেউ কেউ চলে গিয়েছিলেন সিনিয়র টিমে। এবার টিমে এসেছে ৮-১০ জন নতুন খেলোয়াড়।কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার রাস্তাতেও অনেক বাঁধা-বিপত্তির মধ্য়ে দিয়ে গিয়েছে বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দল। টিমের ওপেনার অঙ্কুর পাল টুর্নামেন্টের শুরুতেই পিতৃহারা হন। এমনকী সৌরাশিস নিজে ভুগেছেন ডেঙ্গিতে। প্রতিকূলতা পেরিয়েই আজ বাংলা চ্য়াম্পিয়ন। গর্বিত পিতার মতোই খুশি কাজি জুনেইদ সৈফি অ্যান্ড কোং-এর হেডস্য়ার।
আরও পড়ুন-অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য় দল ঘোষণা ভারতের, প্রিয়মের নেতৃত্বে খেলবেন যশস্বীরা
দেহরাদুন থেকে ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কতা হলো সৌরাশিসের। বাংলার এই জয়ের নেপথ্য়ের কারিগর তিনি। কিন্তু কৃতিত্ব নিতে চান না দীর্ঘদিন বাংলাকে বল হাতে সার্ভিস দেওয়া হাওড়ার বাসিন্দা। বলছেন, "আমার ছেলেরা খেলেছে। আমি আর কী করেছি! দিনের শেষে ব্য়াট-বল নিয়ে আমি খেলি না। খেলে ওরাই। সবাই মিলে আমরা জিতেছি।"
এবছর জয়ের ব্য়াপারে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সৌরাশিস। শেষ দু'বছর রানার্স হওয়ার কষ্ট ছিল তাঁর মনে।প্রদীপ্ত-ঈশানদের কোচ এ প্রসঙ্গে বলছেন, "প্রথমবার আমরা ভাল খেলেছিলাম, শেষবার অল্পের জন্য় চ্য়াম্পিয়ন হতে পারিনি। কিন্তু এবার ভেবেই নিয়েছিলাম সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবে না। ট্রফি জয়ের ব্য়াপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আমরা। প্লেয়াররা সত্য়িই ভাল খেলেছে। গুজরাতের ১০৭ রানে প্রথম উইকেট পড়েছিল। সেখান থেকে ২০০ রানের মধ্য়ে আমাদের ছেলেরা ওদের অলআউট করে দিল। অসাধারণ পারফরম্য়ান্স।"
আরও পড়ুন-১ রানে সৈয়দ মুস্তাক আলি জিতল কর্ণাটক, রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারের ভিডিও দেখুন
বাংলার জুনিয়র দলের পারফরম্য়ান্সে উচ্ছ্বসিত বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তিনি নিজেই সৌরাশিসকে ফোন করেন, টেক্সটেও দীর্ঘক্ষণ চ্য়াট হয়েছে তাঁদের। সৌরাশিস এই প্রসঙ্গে বলছেন," দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়) ফোন করেছিল আমাকে। ১০ মিনিট কথা হয়েছে। এরপর চ্য়াটেও কথা বলেছি আমরা। বলছে তোমরা আমার সুপারস্টার। সবচেয়ে বড় কথা দাদি শেষ তিন বছর ধরে দলের প্রতিটা স্ট্র্য়াটেজি জানে। ধারাবাহিকতা দিয়েই আমরা বলেছে দলের চরিত্র বুঝিয়ে দিয়েছি।"
সৌরাশিস খুশি হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ। তাঁর মাথায় এখন আসন্ন সিকে নাইডু ট্রফি। বলছেন, "অবশ্য়ই খুশি হয়েছি আমরা। কিন্তু পার্টি ইজ ওভার। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়া এটা। আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে সিকে নাইডু ট্রফি শুরু হয়ে যাচ্ছে। আমরা আজকেই কলকাতায় ফিরছি। আগামিকাল বিশ্রাম। পরশুদিন থেকেই প্র্যাকটিস শুরু করে দিচ্ছি যাদবপুর ক্য়াম্পাসে। এবার সাদা বল থেকে লাল বলে ফোকাস করতে হবে এবার। প্র্য়াকটিসে থাকছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। অত্য়ন্ত ভাল ভাবে এবং কঠোর অনুশীলন করতে হবে। ন'সপ্তাহে আটটি গেম খেলতে হবে। আমাদের। প্রচুর জায়গায় ঘুরে ঘুরে খেলতে হবে। ফলে সকলকে ফিট থাকতে হবে, মোটিভেটেড করতে হবে।"
সৌরাশিস বলছেন এই দলের অনেকেই ভবিষ্য়তে ভারতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তিনি চাইছেন আগে সবাই মন দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা খেলুক। তারপর পরের ধাপের কথা ভাবুক। সোমবার রাতেই সৌরাশিসদের কলকাতায় পা রাখছেন। তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেওয়ার উদ্য়েগ নিয়েছে সিএবি। পাশাপাশি দলের প্রত্য়েক সদস্য়কে পুরস্কারমূল্য় হিসাবে ৫০ হাজার টাক করে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিসিসিআই সচিব অভিষেক ডালমিয়াও সৌরাশিসকে শেষ তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য় আলাদা করে ধন্য়বাদ জানিয়েছেন।