রবিবাসরীয় ভাগীরথীতে মিলবে বিশ্ব। বহরমপুর থেকে জঙ্গিপুরের ৮১ কিলোমিটার জলপথ দাপাবে স্পেন, থাইল্যান্ড, সুইডেন, আর্জেন্তিনা ও বাংলাদেশ, অবশ্যই ভারতও। এশিয়াডের ভরা বাজারে খোদ এই রাজ্যই সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতার।
আর ঠিক ছ’দিন পরেই, অর্থাৎ আগামী রবিবার, মুর্শিদাবাদ সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতা। সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ইতিমধ্যেই এই ইভেন্টকে জাতীয় ইভেন্টের স্বীকৃতি দিয়েছে। সাঁতারের প্রকৃতি ও ধরণ দেখে তারাই এটাকে ‘ন্যাশনাল ওপেন ওয়াটার সুইমিং কম্পিটিশন’-এর মর্যাদা দিয়েছে। ৮১ কিলোমিটারের সঙ্গেই চলবে ১৯ কিলোমিটার সাঁতারও। সোমবার কলকাতার ক্রীড়া সাংবাদিক তাঁবুতে এই ঘোষণা করে দিলেন আয়োজকরা।
ফারাক্কা ব্রিজের পাশেই আহিরন ব্যারেজ ঘাট, সেখান থেকেই ভোর সাড়ে চারটের সময় জলপথে ৮১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ২৫ জন সাঁতারু (২৩ জন পুরুষ, ২ জন মহিলা)। ওই দিনই দুপুর দেড়টার সময় জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট থেকে শুরু হবে ১৯ কিলোমিটারের প্রতিযোগীতা। অংশ নেবেন ৫৪ জন সাঁতারু (৩৯ জন পুরুষ ও ১৯ জন মহিলা)। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ত্রিপুরা, হরিয়ানা, রাজস্থান, কর্ণাটকও অংশ নিচ্ছে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি রামানুজ মুখোপাধ্যায়
যদিও এই ইভেন্টের মূল আকর্ষণ ৮১ কিলোমিটার সাঁতার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে থাকছেন দু’জন। স্পেন, সুইডেন, আর্জেন্তিনা ও থাইল্যান্ড থেকে একজন করে অংশ নিচ্ছেন এবার। আয়োজকরা এখনও প্রতিযোগিদের নামের তালিকা বা বায়েডেটা দিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু গত দু’বারের এই টুর্নামেন্টের স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন হোসে লুইস লারোসা এবারও আসছেন বলেই জানিয়েছে মুর্শিদাবাদ সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: Asian Games 2018: বন্যায় স্বজন হারিয়েও এশিয়াডে লড়ছেন সজন
এদিন রাজ্য সাঁতার সংস্থার (বেঙ্গল অ্যামেচার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি রামানুজ মুখোপাধ্যায় অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করলেন। তিনিই পুরো ইভেন্টের বর্ণনা দিলেন। তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এটাই যে বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতা (ওয়ার্ল্ড’স লংগেস্ট ন্যাশনাল ওপেন ওয়াটার সুইমিং কম্পিটিশন), তার মান্যতা কোথা থেকে পেলেন? রামানুজবাবু বললেন, "ফিনা-র (ইন্টারন্যশনাল সুইমিং ফেডারেশন) ওয়েবসাইটে গেলেই দেখতে পাবেন, সেখানে ৮১ কিলোমিটারের কোনও উল্লেখ নেই। ফলে এটাই পৃথিবীর দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতা, একথা হলফ করেই বলা যায়।"
বাংলার চার বীরাঙ্গনা সাঁতারু রেশমী শর্মা, সায়নী দাস, তাহরিনা নাসরিন ও অমৃতা দাশও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। ইংলিশ চ্যানেল পার করা চার জলকন্যা অতীতে এই ইভেন্টে অংশ নিয়ে স্থান অধিকার করেছেন। যদিও এবার রেশমীরা জলে নামছেন না, কিন্তু প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে ওদিন হাজির থাকবেন তাঁরা, এমনটাই জানিয়েছেন।
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারী স্বর্ণ পদকের সঙ্গেই পান এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। টুর্নামেন্টের বাজেট ৩০ লক্ষ টাকা। আয়োজনে কোনও খামতি রাখে না মুর্শিদাবাদ সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন। সাঁতারুদের জীবন বিমা থেকে শুরু করে, লাইফ বোট, লাইফ সেভিয়ার, টেকনিক্যাল অফিসিয়াল, মেডিক্যাল টিম, সবই থাকে। কিন্তু এই বিশাল টাকার অঙ্ক নিজেদের ঘর থেকেই খরচ হয়। এমনটাই জানালেন রামানুজবাবুু।
স্বাধীনতার আগে থেকেই ভাগীরথীতে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে শুরু পথচলা, এবছর ৭৫-এ পা দেবে এই ইভেন্ট, অর্থাৎ প্ল্যাটিনাম জুবিলি। কিন্তু এতগুলো বছরেও কোনও স্পনসর নেই, প্রচার নেই, আক্ষেপের সুরে বললেন রামানুজবাবু। তাঁর সংযোজন, “আমরা নিজেদের বিক্রি করতে পারলাম না। ঘরের বউয়ের গয়না বন্ধক রেখেও টুর্নামেন্ট চলছে এতগুলো বছর। কোনও স্পনসর নেই। আর যাই হোক, ভিক্ষা তো করতে পারব না। যদিও এবার রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। দেখা যাক। আপাতত একটাই লক্ষ্য। আমরা চাই ফিনার স্বীকৃতি।"