গল্পটা ঠিক সিনেমার মতো। যদিও 'গল্প হলেও সত্যি'। আমরা সবাই কিছু না কিছু স্বপ্ন দেখেছি শৈশবে। বড় হওয়ার যুদ্ধে সে সব ফিকে হয়ে গিয়েছে কালে কালে। এই মেয়ের গল্পটা একটু অন্যরকম। পাঁচ বছর বয়সে প্রথম স্বপ্ন দেখার শুরু। কিশলয়ের পাতায় হিলারি আর তেনজিং-এর গল্প পড়ে আর পাঁচটা শিশুর মতোই পিয়ালি ভেবে নিয়েছিল, বড় হলে হিমালয়ের বুকে দাপিয়ে বেড়াবে। রোদ্দুর হতে চাওয়া অমলকান্তিদের মত ছাপাঘানার অন্ধকার ঘরে বাকী জীবনটা কাটাতে হয়নি ২৮ বছরের পিয়ালি এবার পা রাখতে চলেছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে।
চন্দন নগরের বাসিন্দা পিয়ালি বসাক (২৮) অংক নিয়ে স্নাতক পাশ করে এখন এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। দিন চারেকের মধ্যেই রওনা দিচ্ছেন কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে। সেখানে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলবে অ্যাক্লেমাটাইজেশন প্রক্রিয়া। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পা রাখবেন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিন্দুতে। এখানেই শেষ নয়, একই অভিযানে এভারেস্টের সঙ্গে লোৎসে শৃঙ্গ জয়ের পরিকল্পনাও রয়েছে পিয়ালির।
আরও পড়ুন, আমার দুর্গা: মনীষা পৈলান
স্বপ্নের কাছাকাছি থাকতে পারার লড়াইটা খুব মসৃণ ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবনতির কারণে পর্বতারোহণের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হবে এই আশঙ্কা থেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে নেপালে পাড়ি দেওয়া। "লোকমুখে শোনা, যে নেপালে গাইড, পোর্টার এর কাজও করা যায়, তাই আমি ভেবেছিলাম ওখানে গেলে রোজগার হবে, বাবা মা কে সাহায্য করতে পারব আর আমার হিমালয় চড়াও হবে এই ভেবে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাস আমার পরীক্ষার রেজাল্ট, যত সার্টিফিকেট, প্রিয় বই, আঁকার খাতা, পেনসিল, রং নিয়ে আমি একা একাই দার্জিলিং-মানেভঞ্জন হয়ে কালিপোখরি আর সান্দাকফুর মাঝামাঝি একটা ঘন জঙ্গল অর্থাৎ সিঙ্গালিলা forest এর ভেতর দিয়ে নেপাল এর ইলাম পৌঁছাই। স্থানীয় সেনারা বুঝতে পেরে বাড়িতে খবর দেন। ততোক্ষণে সংবাদপত্রে আমায় নিয়ে নিরুদ্দেশের খবর ছাপানো হয়ে গিয়েছে"।
গত বছর সেপ্টেম্বরেই প্রথম বাঙালি এবং দেশের প্রথম অসামরিক ভারতীয় হিসেবে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলু জয় করেন পিয়ালি। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৮ সালে পর্বতারোহণে বেসিক কোর্স। তারপর ২০১০ এ অ্যাডভান্স কোর্স করা। আঠাশ বছরের পিয়ালির অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে মুলকিলা-১০, মাউন্ট তিঞ্চেংকাং এর মতো শৃঙ্গ আরোহণ। রাজ্য সরকারের ডব্লিউবিএমএএসএফ -এর পক্ষ থেকে মহিলাদের দল নিয়ে আয়জিত অভিযানেরও অংশ ছিলেন পিয়ালি। ২০১৩ সালে ক্লাউড বার্স্টের জন্য সফল হয়নি ভাগীরথী-২ অভিযান।
এভারেস্ট এবং লোৎসে অভিযানের খরচ আকাশছোঁয়া। ২৩ লক্ষ টাকার অনেকটাই এখনও জোগাড় হওয়া বাকি। তবে পিয়ালি আশা রাখছেন অভিযানের খরচ উঠে যাবে খুব শিগগির। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "২০১০ সালে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে অ্যাডভান্স কোর্স করার পর থেকেই আমি নিজেকে এভারেস্ট অভিযানের জন্য শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেছি, শুধু অর্থের অভাবেই এতদিন অপেক্ষা করতে হল"। অভিযান সফল হবে, আশাবাদী তিনি। সেক্ষেত্রে পিয়ালিই হবেন এপাড় বাংলার সবচেয়ে কনিষ্ঠ এভারেস্টজয়ী।