আবার বছর তেরো পরে!
শেষবার বাংলা রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে উঠেছিল তেরো বছর আগে। সেটা ২০০৭। এক যুগেরও বেশি অপেক্ষার পর আজ আবার! ধারে-ভারে এগিয়ে থাকা কর্ণাটককেই সেমিফাইনালের দ্বৈরথে ফেভারিট ধরেছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। খাতায়-কলমে বাংলাই বরং ছিল আন্ডারডগ। চুলোয় যাক খাতা-কলম, নিকুচি করেছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের, ওই দেখুন ইডেনের ইলেক্ট্রনিক স্কোরবোর্ডে ঝকমকিয়ে উঠছে অক্ষরগুলো, 'বেঙ্গল ইন রঞ্জি ট্রফি ফাইনালস! কনগ্র্যাচুলেশনস!'
ওই দেখুন বাঁধভাঙা উল্লাসের ফুলকি উড়ছে মাঠে, একে অন্যকে উদ্দাম জড়িয়ে ধরছেন অভিষেক-অর্ণব-ঈশান-অনুষ্টুপ-শাহবাজরা। উল্লাস আজ মানায়। কর্ণাটককে ১৭৪ রানে হারিয়ে রঞ্জি-জয়ের শেষ ল্যাপে বাংলা। ভারতসেরা হওয়ার থেকে এখন স্রেফ এক ধাপ দূরে বঙ্গব্রিগেড। ওই দেখুন 'বি' ব্লকে কয়েকশো স্কুলপড়ুয়া আনন্দে আত্মহারা, সমস্বরে আওয়াজ তুলছে.. 'বেঙ্গল! বেঙ্গল!' আনন্দ আজ মানায়।
জানাই ছিল, আজ সকালের প্রথম দু'ঘন্টা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে মহাগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে। জানাই ছিল, মনীশ-দেবদত্তর জুটিটা প্রথম সেশনেই ভাঙতে ঝাঁপাবে বাংলা। ঝাঁপানো বলে ঝাঁপানো! প্রথম ওভার থেকেই আগুন ছোটাতে শুরু করলেন ঈশান-মুকেশ। প্রথম ইনিংসে কর্ণাটককে ভেঙেছিলেন ঈশান। আজ ছিল মুকেশের পালা। মনীশ পাণ্ডেকে ফেরালেন দুরন্ত আউটসুইঙ্গারে। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ল কিপারের হাতে। ওটাই শেষের শুরু। কর্ণাটকের ছয় এবং সাত নম্বর ব্যাট সিদ্ধার্থ আর শরথকে তুললেন পরপর দুটো বলে। সকালের স্পেলটায় 'আনপ্লেয়েবল' দেখাচ্ছিল মুকেশকে।
একা কুম্ভ হয়ে যিনি লড়ে যাচ্ছিলেন, সেই দেবদত্তকে (৬১) যে ডেলিভারিতে ফেরালেন মুকেশ, সেটা সত্যিই আনপ্লেয়েবল। গুড লেংথ থেকে লাফাল অনেকটা, লাফিয়ে বাঁক নিল সামান্য এবং দেবদত্তের ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে কিপারের তালুবন্দি। বাকিটা নিয়মরক্ষার গল্প। লাঞ্চের আগেই কর্ণাটকের ইনিংসে ঝাঁপি পড়ে গেল ১৭৭-এ। দিনের নায়ক মুকেশের বোলিং ফিগার? ২১-৫-৬১-৬! বাকি উইকেটের মধ্যে দুটো ঈশানের, দুটো আকাশদীপের।
কষ্টেসৃষ্টে জেতা নয়। বিপক্ষকে রীতিমতো দুমড়ে-মুচড়ে জেতা। তবু অনুষ্টুপ-শাহবাজ ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানদের ফর্ম নিয়ে থেকেই গেল অস্বস্তির কাঁটা। বোলিং নিয়ে কিছু বলার নেই। অরুণলাল গতকাল বলেছেন, এই মুহূর্তে ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার পেস-ব্রিগেডই দেশের সেরা। ইডেনের এই পারফরম্যান্সের পর তর্ক চলে না এই দাবি নিয়ে।
ফাইনালে প্রতিপক্ষ? হয় সৌরাষ্ট্র, নয় গুজরাট। যে-ই হোক, বেশি ভাবার মানে হয় না। যারা কর্ণাটককে এই দাপটে গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তারা প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবতে যাবে কোন দুঃখে?
জয় বাংলা!