/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/07/3dbc5de5-fbc7-4ecd-a9fc-3bcb530b7984.jpg)
দলবদলের সবচেয়ে বড় চমক! ফের ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে বাইচুং ভুটিয়া
নতুন মরসুমেই ফের একবার ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে দেখা যাবে বাইচুং ভুটিয়াকে। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারকে অনেকদিন আগেই আলবিদা বললেও বাইচুং কিন্ত ক্লাব ফুটবলকে কখনই গুডবাই বলেননি। ফলে আবারও লাল-হলুদা জার্সিতে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিকিমিজ স্নাইপার। বৃহস্পতিবার লাল-হলুদ তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের সর্বকালের অন্য়তম সেরা স্ট্রাইকার ও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
ইস্টবেঙ্গল এই মুহূর্তে মেতেছে প্রাক শতবর্ষ উদযাপনে। ক্লাবের সেন্টিনারি সেলিব্রেশন চলবে আগামী দু'বছর। সেই উপলক্ষ্য়ে এদিন ছিল ইস্টবেঙ্গলের প্রথম সরকারি 'মিট দ্য় প্রেস' অনুষ্ঠান। ক্লাবের কর্মকর্তা থেকে একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারও সভ্য়সমর্থকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান এক অন্য় মাত্রা নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান: দেখে নেওয়া যাক স্মরণীয় পাঁচ ডার্বি
এদিনই জানিয়ে দেওয়া হয়, চলতি মাসের শেষ থেকে পরের মাস পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবস ও শতবর্ষ উদযাপনের কী কী কর্মসূচি রয়েছে। এদিন কর্মসমিতির সদস্য ও ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার জানান যে, বাইচুং ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলেই তাঁর কেরিয়ারে ইতি টানতে চান। তাঁর এই ঘোষণাতে ক্লাব তাঁবুর আবহাওয়াটাই বদলে গিয়েছিল। কিন্তু দেবব্রত বাবুই জানান যে, বাইচুং মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য়ই মাঠে নামবেন। তারপর তিনি উঠে যাবেন। তবে সেটা আসন্ন ডুরান্ড কাপে না কলকাতা লিগে হতে চলেছে সে ব্য়াপারে কিছুই জানাননি ময়দানের নীতু।
পরে বাইচুং সাংবাদিকদের বলেন যে, শতর্বষে অন্তত শেষবার ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলতে চান তিনি। ক্লাবের ১০০ বছরটা এভাবেই স্মরণীয় করতে চান পাহাড়ি বিছে। বাইচুং কিন্তু এখনও রীতিমতো ফিট। খেলার মধ্য়েই আছেন। তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আরও একটা মরসুম কি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে পারবেন তিন? সিকিমের তিনকিতামের বাসিন্দা হাসতে হাসতে বলেন, "শুনুন, আমার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। আমার ছেলের বয়স এখন নয়। ওর সঙ্গেই ওয়ান-টু-ওয়ানে পারি না, তো কীভাবে আরও একটা মরসুম খেলব। তবে এখনও পর্যন্ত কবে খেলব সেই নিয়ে কোনও চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়নি। ইস্টবেঙ্গলের কোচের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথা বলার পরেই জানা যাবে। এখনও বিষয়টা কথাবার্তার পর্যায় রয়েছে। তবে হ্য়াঁ, এই ইচ্ছেটা অনেকদিন ধরেই ছিল, এটা বলতেই পারেন।"
বাইচুং সেই ১৬-১৭ বছর বয়সে সিকিম ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। ওখানে সাব জুনিয়র জাতীয় ক্য়াম্প থেকে ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব-১৬ ট্রায়ালে সুযোগ পান তিনি। লাল-হলুদের দুই কিংবদন্তি সুরজিত সেনগুপ্ত ও ভাস্কর গঙ্গোপাধ্য়ায় তাঁকে স্পট করেছিলেন। কলকাতায় আসার পর আর বাইচুংকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দফায় দফায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে প্রায় ১০ বছর দাপিয়ে ফুটবল খেলেছিলেন বাইচুং। এদিনের অনুষ্ঠানে বাইচুং বলেই ফেললেন, পরিবারকে ছেড়ে ওই ছোট বয়সে চলে আসার জন্য় চোখের জল ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে এসে এতবড় একটা পরিবার পাবেন তা তিনি আশাও করেননি। তাঁর প্রথম কোচ শ্য়ামল ঘোষ থেকে পিকে বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেই বাইচুং জানান, তাঁরা না থাকলে তিনি এই জায়গায় আসতে পারতেন না।
বাইচুং আরও বললেন যে, তাঁর কেরিয়ারের সেরা দুটো মুহূর্ত বলতে এখনও তাঁর চোখের সামনে ভেসে ওঠে ১৯৯৭-এর ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালের কথা। সেবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্ট-মোহন ডার্বি দেখতে এসেছিলেন ১ লক্ষ ৩১ হাজার দর্শক৷ যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড৷ বাইচুং বললেন, "ইস্টবেঙ্গলের মতো ফ্য়ান সারা পৃথিবীতে নেই। একথা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। আর ওদিন আমি হ্য়াটট্রিক করেছি বলে বলছি না, লাখ লাখ ফ্য়ান বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, ভারতীয় ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান কোন জায়গায় রয়েছে।"
১৯৯৭-এর ১৩ জুলাই ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। বাইচুং ভুটিয়ার হ্যাটট্রিকে মোহনবাগানকে ৪-১ হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল৷ মোহনবাগানের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন চিমা ওকোরি৷ সেসময় নতুন ডায়মন্ড সিস্টেম নিয়ে অমল দত্ত পরীক্ষা নীরিক্ষা করছিলেন। বিপক্ষের বক্সে আক্রমণের ঝড় তুলছিলেন বাগানের ফুটবলাররা। এমনকী অমল দত্ত ম্যাচের আগে থেকেই মাইন্ড গেমও শুরু করে দিয়েছিলেন। বাইচুংকে ‘চুং চুং’ বলেও ডেকেছিলেন তিনি।
যদিও লাল হলুদ কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় এসব নিয়ে কোনও মাথাই ঘামাননি। ম্যান ম্যানেজমেন্টের মাস্টার ছিলেন তিনি। দলের পারফরম্যান্সে আগুন জ্বালাতে জানতেন ধুরন্ধর পিকে। যুযুধান দুই কোচের মস্তিষ্কের লড়াইয়ে শেষ হাসি তিনিই হেসেছিলেন। ওই ম্য়াচের পরে বাইচুং ইস্ট সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে যান। এই ম্য়াচের পাশাপাশি বাইচুং ভুলতে পারেননি আশিয়ান কাপ জিতে বিমানবন্দরে ফেরার ঘটনা। স্মৃতির সরণীতে হেঁটে বাইচুং বললেন," সেদিন বিমান বন্দরে হাজার হাজার ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আমাদের জন্য় এসেছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সল্টলেক যেতে মিনিট চল্লিশের মতো সময় লাগে। সেদিন পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। আজও ভুলতে পারিনি।" এবছর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব 'আইডেন্টিফাইং অ্য়ান্ড নারচারিং দ্য় আইকন'-এর পুরস্কার তুলে দিচ্ছে বাইচুংয়ের হাতে। ভাবি প্রাপক বলছেন, "এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না।