ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট সি কে নায়ডু ট্রফি। এই বছর অনুর্ধ্ব ২৫ সি কে নায়ডু টুর্নামেন্ট আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে দিল্লিতে। সেই টুর্নামেন্টে এবার বাংলা দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর যুবক সুমন দাস।
এক অজ পাড়া গাঁয়ের যুবক সুমন বাংলা দলের হয়ে দিল্লির ক্রিকেট ময়দান মাতাবে, জেনে বেজায় খুশি তাঁর কোচ , বাবা মা এবং প্রতিবেশীরা।
জামালপুর ব্লকের চকদিঘী পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত
গ্রাম গুড়েঘর। সেই গ্রামের বাসিন্দা ২২ বছরের সুমন দাস। তাঁর বাবা বিপিনকৃষ্ণ দাস হুগলির দশঘরায় ছোটখাট একটি গহনার দোকান চালান। মা সুমিতা দাস সাধারণ গৃহবধূ। সুমনের পড়াশুনা হরিপাল পানিশ্যাওলা ইন্দিরা স্মৃতি বিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন: প্ৰথম ম্যাচেই KKR-এর সামনে CSK, IPL-এ নাইটদের কোন ম্যাচ কবে-কোথায়! জানুন
পরবর্তী সময়ে সিবিএসসি বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তিনি। বড় দাদা শান্তনু বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক সুমনের। জীবনের শুরু থেকেই আইডল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে সুমন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই পৌছে যায় জামালপুর নিবাসী ইস্টার্ন রেলের প্রাক্তন ক্রিকেটার অমল দাসের কাছে। অভিজ্ঞ কোচের হাত ধরেই সে জামালপুরের সেলিমাবাদের মাঠে ক্রিকেটের অনুশীলন নেওয়া শুরু করে।
বাবার সঙ্গে গর্বিত পুত্র সুমন। (ছবি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়)
কিছুদিন কোচিং দেওয়ার পরেই অমল দাস তাঁর ছাত্র সুমনের প্রতিভা নিয়ে নিঃসংশয় হন। উপযুক্ত তালিম পেলে সুমন যে ক্রিকেটের ময়দান দাপিয়ে বেড়াতে পারবে তা বুঝতে ভুল করেন নি অমল বাবু। সুমনকে মাজাঘষা করে পেস বোলার হিসাবে গড়ে তোলার অনেকটাই কৃতিত্ব অমলবাবুর। তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েই জেলা ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাজিমাত করতে শুরু করেন সুমন।
এবার সেই সুমনই বাংলা দলের জার্সিতে রাজধানীর ময়দানে সি কে নায়ডু মাতাতে চলেছেন।
আত্মপ্রত্যয়ী সুমন রবিবার সন্ধ্যাতেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তার আগে রবিবার দুপুরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি বলেন, "আমার স্বপ্ন বড় ক্রিকেটার হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের অন্যতম কাণ্ডারী আমার কোচ অমল দাস। উনি আমায় হাতে ধরে সফল পেস বোলার হওয়ার অনেক টিপস শিখিয়েছেন।"
আরও পড়ুন: কপিলের ঐতিহাসিক ৪৩৪ উইকেটের কীর্তিতে হাত অশ্বিনের! বিশাল রেকর্ডে বিরাট জয়ের পথে ভারত
"অমল বাবুর কোচিংয়েই পাকাপাকি ভাবে বর্ধমানের নামজাদা ক্লাব শিবাজী সংঘের হয়ে খেলার সূযোগ পেয়েছিলাম। মাঝে কিছু দিন প্রশিক্ষণের মাঠ নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় অমলবাবুর পরামর্শে কোচিং নিতে হয় ইস্টার্ন রেলের প্রাক্তন কোচ প্রদীপ মণ্ডলের চন্দননগরে ক্রিকেট এ্যাকাডেমিতে। প্রদীপ বাবুও তাঁর সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে আমায় বোলিং ও ব্যাটিংয়ের নানা বিষয় হাতে ধরে শিখিয়েছেন। কিছুদিন আগে কাস্টমসের হয়ে মহামেডান স্পোর্টিং এর বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ৩৪ রান দিয়ে ৬ টি উইকেট পাই । তার পরেই শনিবার জানতে পারি আমি বাংলা ক্রিকেট দলের (সি এ বি) হয় সি কে নায়ডু টুর্ণামেন্টে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। সেখানে ১ মে পর্যন্ত টুর্নামেন্ট চলবে।"
সুমন আরও জানিয়েছেন, আগামী দিনে রঞ্জি ট্রফি ও ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলার স্বপ্ন তার রয়েছে। সুমনের বাবা-মা জানিয়েছেন, বড় ক্রিকেটার হয়ে তাঁদের ছেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক, এটা তাঁরাও চান। ঈশ্বরের কাছেও সেই প্রার্থনাই তাঁরা রাখছেন।