রবিবারের ডার্বিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের ঝোলানো বিশালাকায় অভিনব 'টিফো' নিয়ে গত রাত থেকেই উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। বিশেষত টিফোর বিষয়বস্তু নিয়ে আপাতত আলোড়িত বঙ্গসমাজ। সবকটিতেই দেখা যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-বিরোধী বার্তা।
'রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়', ছিল একটি টিফোর বক্তব্য। উল্লেখ্য, রবিবারের ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন ৬৩,৭৫৬ জন দর্শক। লড়াই শেষের ফলাফল, সবুজ-মেরুন ২, লাল-হলুদ ১।
'টিফো' তৈরি করতে গত ২০ দিন ধরে নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন ইস্ট বেঙ্গল (ইবি) আলট্রা নামক এক ফ্যান ক্লাবের প্রায় ৩০ জন সদস্য। তাঁদের একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "ইস্ট বেঙ্গলের অধিকাংশ সমর্থকই বাংলাদেশি উদ্বাস্তু বা তাঁদের বংশধর, যাঁদের ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর বাধ্যত নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে এপারে চলে আসতে হয়। এখনও বারবার আমাদের শুনতে হয় যে এনআরসি-র কাগজ প্রথম দেখাতে হবে আমাদেরকেই। এ নিয়ে চলে 'সাইবার বুলিইং (cyber bullying)', আমাদের 'বাংলাদেশি' হিসেবে অভিহিত করে বলা হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে।"
তিনি আরও বলেন, "এই ব্যানার হলো আমাদের জবাব, এবং যারা আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের কাছে আমাদের শক্তির বার্তা। আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রশংসা করেছে মোহনবাগান ফ্যানেরাও, সবারই মন ছুঁয়েছে আমাদের বক্তব্য।"
অবশ্য শুধু এই বার্তাই নয়, তাঁদের বক্তব্য স্পষ্টতর করতে এনআরসি-সিএএ'র বিরোধিতায় নারায়ণ দেবনাথের অমর সৃষ্টি বাঁটুল দি গ্রেটকেও ময়দানে নামান সমর্থকরা। তফাৎ এটুকুই যে এক্ষেত্রে বাঁটুল হয়ে গেছে 'বাঙাল দি গ্রেট', এবং এনআরসি-সিএএ'র হাত থেকে উদ্ধার করতে তার বাহুবল সমেত অবতীর্ণ হচ্ছে মাঠে। ব্যানারে লেখা, 'পালা, পালা, পালা এনআরসি আসছে'। আরেকটি ব্যানারে লেখা: 'কিরে বাঙাল, এনআরসি আসছে, যা পালা'।
ভারতীয় ফুটবলের দুই বৃহত্তম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে এমন মনের মিল বড় একটা দেখা যায় না। কিন্তু রবিবার মোহনবাগান গ্যালারিতেও দেখা যায় বিশাল ব্যানার, 'আমরা যখন ছিলাম, তখন কাগজ ছিল না', অথবা, 'পলাশীর প্রান্তরে সূর্যাস্তের পর চোখে চোখ রেখে লড়াই শিখিয়েছি আমরাই'। বলা বাহুল্য, মোহনবাগান সমর্থকদের অধিকাংশই এপার বাংলার বাসিন্দা।
ক্রীড়া প্রাঙ্গণে প্রতিবাদের ঘটনা অবশ্য ভারতে এই প্রথম নয়। সদ্যসমাপ্ত ভারত-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কিছু দর্শকের পরনে 'No NRC, No NPR, No CAA' লেখা টি-শার্ট।
রবিবারের ম্যাচে গ্যালারিতে এই সম্প্রীতি অবশ্য মাঠে প্রভাব ফেলে নি বিশেষ। বহু প্রতীক্ষিত ডার্বিতে আই-লীগ জমানার শেষ দুটি ম্যাচের একটিতে ইস্ট বেঙ্গলকে ২-১ হারিয়ে দেয় মোহনবাগান। আগামী মরসুম থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লীগের ফ্র্যাঞ্চাইজি এটিকে-র অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে মোহনবাগান।
আই-লীগের পরবর্তী কলকাতা ডার্বি, অর্থাৎ দু'দলের শেষ ডার্বি, ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।