দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ওটিস গিবসন তাঁর শিষ্য়দের নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেপটাউনের টেবিল মাউন্টেনে গিয়েছিলেন।পাহাড়ি পথ ট্রেক করেই গিয়েছিলেন ফাফ দু প্লেসিরা। গিবসনের কাছে এটা ছিল আসন্ন বিশ্বকাপ অভিযানের প্রতীক। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ট্রেকিং করার সময় মোট ১১ বার থেমেছিল। কারণ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার আগে তাদের ১১টি ম্যাচ রয়েছে। পর্বতশৃঙ্গে পা রাখার পর গিবসন ফাফের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, "আমরা একসঙ্গে বিশেষ কিছু করতে চলেছি।" তাঁর প্রতিটা কথা শেষ হওয়ার পর সকলে একসঙ্গে 'প্রোটিয়াজ' বলে চিৎকার করে উঠছিল। এরপর একে অপরকে আলিঙ্গন করেছিল। কিন্তু পাহাড় থেকে নামার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পতন অব্যাহত।
ফাফ তাঁর তরুণ সতীর্থদের চাঙ্গা করতে বা তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে কোনও ফাঁক রাখেনি। তিনি বলেছিলেন, "যদি খুব খারাপও কিছু হয়, আমরা হেরেও যাই, জানবে পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে না। চার বছর আগে আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন এই কথাগুলো কেউ বলেনি। কিন্তু আট বছর আগে দলকে এই কথাটা বলেছিলাম আমি।" দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার গ্যারি কার্স্টেনের মতে দলটায় ''হীনমন্যতা'' কাজ করছে। এসএ ক্রিকেট ম্যাগাজিনে তিনি বলেছেন, "আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি, ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ হিসেবে অতীতে আমরা হীনমন্যতায় ভুগেছি। আমরা জানতাম মৃত্যুর সঙ্গে লড়ব। কিন্তু যখন আদিপত্য কায়েম করার সময় এসেছিল তখন কিন্তু আমরা সেরা খেলাটা খেলতে পারিনি।" তাঁর মতে ১৯৯৯-তে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের ধাক্কা সামলাতে দলটার আরও চার বছর সময় লেগে গিয়েছিল। মনোবিদ প্যাডি আপটন অতীতে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর মতে এই দেশটার একটা কঠিন পৌরুষের মেকি ব্যাপার রয়েছে। তিনি একটি সংবাদপত্রে বলছেন, "এই দলটা দেখায় যে তারা ভীষণ কঠিন। কিন্তু সেটা অভিনয়। বাস্তবে এটাই তাদের চাপে ফেলে দেয়।"
আরও পড়ুন: টুর্নামেন্টের শুরুতেই কোহলিকে বানানো হল ‘রাজা’, আপত্তি বাকি বিশ্বের
এবার ফাফেদের সমস্যা অন্য জায়গায়। এখানে জেতা-হারার সমীকরণটা দাঁড়িয়ে রয়েছে মানসিকতায়। ইংল্যান্ডের মতো দলের কাছে হারের জন্য় তারা মানসিক ভাবে ভঙ্গুর হয়ে যায়নি, তাদের শেষ করে দিয়েছে চোট-আঘাতের সমস্য়া। বিশ্বকাপের আগেই তাদের ফাস্টবোলার অ্যানরিচ নর্টজে ছিটকে যান। টুর্নামেন্টের প্রায় শুরুতেই ডেইল স্টেইন বেরিয়ে গেলেন। প্রথম দু'ম্যাচ খেলতে না-পারা পেসারকে তৃতীয় ম্যাচে পাওয়ার আশায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেটাও হলো না। কাঁধের চোটের জন্য তাঁঁর আর নামাই হল না মাঠে। জীবনের শেষ বিশ্বকাপ খেলার জন্য় মুখিয়ে ছিলেন তিনি।
অন্যদিকে হাশিম আমলা শেষ কয়েক বছর ধরেই লড়াই করছেন ফর্মে ফেরার জন্য়। জোফ্রা আর্চারের বাউন্সার হেলমেটে লাগার পর বসতেও হয়েছিল তাঁকে। লুঙ্গি এনগিডিরও চোট। দেখতে গেলে মিনি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে দলটা। বাংলাদেশের পর ফের ভারতের বিরুদ্ধেও রান তাড়া করার ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হল প্রোটিয়া বাহিনীকে। টপ অর্ডার প্রায় একাই ভেঙে দিলেন বুমরা। কুইন্টন ডি কক ফিরে যাওয়ার পর কেউ আর দায়িত্ব নিতে পারলেন না দলের। অলরাউন্ডার আন্দিলে ফেহলুকোয়াও ও ক্রিস মরিস এবং রাবাদা অবদান রেখেছেন ঠিকই। কিন্তু আরও একটু বেশি কিছু করার প্রয়োজন ছিল তাঁদের। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডিংও ছিল অত্যন্ত হতশ্রী। রাবাদার আগুনে বোলিংয়ের সামনে শুরুতে রীতিমত লড়তে হয়েছিল রোহিত শর্মাকে। সেসময়ই তাঁর ক্যাচ মিস করেন ফাফ। এমনকী ডেভিড মিলারও তাঁর ক্যাচ হাতছাড়া করেন। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা হতাশা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।
Read full stori in English