কলকাতা লিগ দেখে ফেলেছে বেশ কিছু বিশ্বমানের গোল। এর মধ্যে এরিয়ানের জার্সিতে সৈকত সরকারের দুর্ধর্ষ বাইসাইকেল কিকে গোল কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলার ফুটবল। সেই গোলের ভিডিও-ই এবার ফিফার বর্ষসেরা গোলের (পুসকাস আওয়ার্ড) জন্য ফিফার পাঠাচ্ছে আইএফএ। ২০০৯-এ ফেরেঙ্ক পুসকাসের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার চালু করে ফিফা। দুনিয়ার বর্ষসেরা গোলকে সম্মান জানানো জন্য এই পুরস্কার চালু হয়েছিল। প্ৰথম বছরেই এই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পোর্তোর বিরুদ্ধে লং রেঞ্জার কিকের সৌজন্যে রোনাল্ডো বর্ষসেরা গোলের পুরস্কার জেতেন প্ৰথমবারে।
সেই পুরস্কারের মনোনয়নের জন্যই এবার উদ্যোগ নিল আইএফএ। ফেডারেশনের সুপারিশ পত্র সমেত ফিফায় পাঠানো হয়েছে এই গোলের ভিডিও। বঙ্গ ফুটবলের সচিব অনির্বাণ দত্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানিয়েছেন, "সমস্ত গোলের ভিডিও আমরা সংগ্রহ করে দর্শকদের সামনে দেখার ব্যবস্থা করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গোলের ভিডিও দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। এর পরেই আমরা ভাবতে থাকি, পুসকাজ পুরস্কারের জন্য কেন এই ভিডিও পাঠানো হবে না? আমরা পুসকাস পুরস্কৃত সমস্ত গোল দেখার পর ফিফায় সৈকতের গোলের ভিডিও পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই।"
আরও পড়ুন: মোহনবাগান ছাড়লেন জাতীয় দলে খেলা তারকা! ISL কাঁপাবেন নক্ষত্রখচিত ক্লাবে
সৈকতের কাছে এর থেকে বড় পাওনা আর কিছুই হতে পারে না। দীর্ঘদিন মাঠে, অনুশীলনে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন। পাটুলির কাঠতলায় ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন। কেরিয়ারের শুরু থেকেই দর্শনীয় গোলের প্রতি ঝোঁক ছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে রেলওয়ে এফসির লেফট উইঙ্গার জানাচ্ছেন, "কোচের তত্ত্বাবধানে অনুশীলনে এরকম আক্রোবায়োটিক শট নেওয়ার চেষ্টা করতাম। ওই ম্যাচে বল একদম পারফেক্ট পজিশনে ছিল। একদম নিখুঁতভাবে বলের সংযোগ লেগেছিল।" ক্যালকাটা কাস্টমসের বিপক্ষে রাকেশ কর্মকার একদম পিনপয়েন্ট ক্রস বাড়িয়েছিলেন। নিখুঁত সংযোগে সেই বলই সৈকত পাঠিয়ে দেন জালে। রেলওয়ে সেই ম্যাচে ১-২ গোলে হেরে গেলেও সৈকতের ৭৫ মিনিটে বক্সের ঠিক ওপর থেকে করা গোল সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।
২০১৭-য় সৈকত নাম লিখিয়েছিলেন প্ৰথম ডিভিশনের বালি প্রতিভায়। তারপর খিদিরপুর এফসি, রেনবো এফসি, রিয়েল কাশ্মীর, ক্যালকাটা কাস্টমসের হয়ে খেলেছেন।
বাবা মালির কাজ করেন। ১৪ বছর বয়স থেকে সৈকতের ফুটবলে পায়েখড়ি হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে সৈকত জানাচ্ছিলেন, "সেই সময় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। ফুটবলে কোচিং নেওয়ার জন্য বাবা বেশ পরিশ্রম করে অর্থ জোগাড় করেন। তিনি সবসময় চাইতেন আমি ফুটবল খেলি। এবং অর্থ যাতে কোনওভাবে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেটা বরাবর তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।"
জলাটান ইব্রাহিমোভিচের বড় ফ্যান তিনি। সুইডিশ তারকার দুর্ধর্ষ সমস্ত অতিমানবিক গোলের ভিডিও ইউটিউবে বারবার চালিয়ে দেখেছেন। নিজের স্কিল আরও ঝকঝকে করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। সৈকত জানান, "আমার বর্তমান কোচ দীপক চক্রবর্তীও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তবে রোনাল্ডো, ইব্রাহিমোভিচদের গোলের ভিডিও বরাবর আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ওঁদের পর্যায়ের গোল করতে পেরে বেশ লাগছে।"
সৈকতের গোলের ভিডিও এখন ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে ভাইরাল। অল্পবিস্তর পরিচিতিও হয়েছে সৈকতের। আপাতত তাঁর লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে খেলা। "মানুষ আমার গোলের ভিডিও প্রশংসা করছেন। আশা করি, কোনও আইএসএল দলে খেলার সুযোগ পাব। তবে সেইজন্য আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।"
রিয়েল কাশ্মীরের হয়ে আইলিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আগামী সিজনেও আইলিগের কোনও ক্লাবে দেখা যেতে পারে সৈকতকে। চলতি সিএফএল-এ তিনি আপাতত দুর্ধর্ষ ছন্দে রয়েছে। হ্যাটট্রিক সমেত এখনই তাঁর নামের পাশে চার গোল। পুলিশ এসসির বিপক্ষে কল্যাণীর মাঠে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সৈকত।
Read the full article in ENGLISH