এ যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে চন্দননগরে। চন্দননগর এককালে ফরাসি উপনিবেশ ছিল। তাই সেখানকার মানুষজন আজও ফরাসিদের ভুলতে পারেন না। আজ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাই মেসি নয় এমবাপেকেই বাজী ধরছেন তাঁরা। ফ্রান্সের সমর্থনে পাড়ার মোড়ে মোড়ে শুধু ফ্ল্যাগ ফেস্টুন নয় রীতিমতো নিষ্ঠাসহকারে যজ্ঞ হয়ে গেল চন্দননগর ফটকগোড়ায়। চন্দননগর স্টেশন রোডের ব্যবসায়ীরা এদিন দুপুরে পুরোহিত ডেকে হিন্দুমতে এমবাপের সমর্থনে যজ্ঞ করলেন। আজ চন্দননগরের রঙ নীল-সাদা-লাল। সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো উপনিবেশ আজকেও গলা ফাটাবে গ্রিজম্যান এমবাপেদের জন্য।
Advertisment
গতকাল থেকেই হঠাৎ করে চন্দননগরের দর্জিদের কাজ বেড়ে গেছে নীল সাদা লালের অর্ডারে। বাড়ির থেকেও বড় বড় সাইজের ফরাসি পতাকায় মুড়ে দেওয়া হচ্ছে গলি, রাজপথ, আকাশ। তারপর আবার হিন্দুদের কায়দায় হচ্ছে মহাযজ্ঞ। আর, সেই মহাযজ্ঞ অবশ্যই ফ্রান্সের কল্যাণে। মেসি-মার্টিনেজদের বাধা কাটানোর চেষ্টা চলছে কাঠ ঘষে।
বিশ্বকাপ থাকবে মিষ্টিমুখ হবে না, তাই আবার কখনও হয় নাকি? তাই চন্দননগরেও বিশ্বকাপের ছাঁচে এমব্যাপের মিষ্টি তৈরি হয়েছে। পুরনিগমের মেয়র নিজে উদ্যোগ নিয়ে জায়ান্ট স্ক্রিন বসাচ্ছেন রবীন্দ্রভবনের সামনে। খালি ফ্রান্সের জেতার অপেক্ষায় বসে আছে চন্দননগরবাসী। তারপর? রাতভর সেলিব্রেশন হবে। জানিয়েই রেখেছেন তারা।
আজও চন্দননগরের সঙ্গে নানা সূত্রে আত্মীয়তা আছে ফ্রান্সের। এখানকার বহু স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে ইউরোপীয় ছাপ, তা সাক্ষ্য দেয় সেই আত্মীয়তার কথা। শুধু তাই নয়, ফ্রান্স থেকে চন্দনগরে নানা সময়ে প্রতিনিধিরা এসেছেন। একসময়ের উপনিবেশের ভালো-মন্দের খোঁজ নিয়েছেন। সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন চন্দননগরের উন্নয়নে।
শুধু কী তাই, পূর্বপুরুষদের থেকে চন্দননগরের ব্যাপারে শুনেছেন ইউরোপের বর্তমানে প্রজন্মের অনেক ফরাসি নাগরিকই। তাঁদের অনেকেই আবার নানাভাবে যোগাযোগ রাখেন চন্দননগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে এই বন্ধন যেন ঘুচে যাওয়ার নয়। আর, সেই কারণেই আজও চন্দননগরবাসী ফ্রান্সের জয়ের সঙ্গে নিজেদের জয়কে মিলিয়ে ধরতে ভালোবাসেন।