১৪ মে থেকে ২২মে (ISF জিমনাসিয়াড) বিশ্ব স্কুল স্পোর্টসের আসর বসছে ফ্রান্সে। ভারতবর্ষ থেকে ১৩ জন প্রতিযোগী এতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। বাংলা থেকেও একজন আর্টিস্টিক জিমনাস্টিকসে কপালে শিকে ছিঁড়েছে। হুগলি জেলার চুঁচুড়ার চকবাজার তিন নং সোনাটুলির বাসিন্দা জয়ন্ত মালিকের মেয়ে জয়িতা মালিক আপাতত স্বপ্নের প্রহর গুনছেন।
জয়িতা হুগলী গার্লস স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা জয়ন্ত মালিক পেশায় মেলায় প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রির কাজ করেন। পাশাপাশি চকবাজার পোস্ট অফিসের দৈনিক মজদুরিও করেন।
আরও পড়ুন: দেহসৌষ্ঠবে বেনজির কীর্তি মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর, সেরার সেরা নজিরে গর্বিত করলেন রাজ্যকে
জয়ন্ত বাবু তার স্ত্রীর গহনা বন্ধক দিয়েছেন। আত্মীয় এবং পরিচিতদের থেকে ঋণও করে ফেলেছেন বিস্তর। মেয়ের স্বপ্নেই তাঁরা যে দিনযাপন করছেন।
চার বছর বয়স থেকেই কন্যা জয়িতার খেলাধুলায় ঝোঁক রয়েছে, তা বুঝেই তাঁকে জিমনাস্টিকসে ভর্তি করেছিলেন জয়ন্ত বাবু।মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে নিজের কাজের অসুবিধা হয়েছে তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি।
এতে টেনেটুনে সংসার চালাতে বিস্তর অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তবুও নিজের দায়িত্বে অবিচল তিনি। জয়িতার মা সুমিতা মালিক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকার কাজ করেন। তিনি বলেছেন, "মেয়েকে ছোটোবেলা থেকেই খেলায় উৎসাহ দিয়েছেন ওর বাবা। ভোর চারটেয় উঠে মেয়েকে সাইকেল করে বাঁশবেড়িয়ায় অনুশীলন করতে নিয়ে যান। বিকালেও একই ব্যাপার। দুবেলা অনুশীলনে যাতে খামতি না থাকে তার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাবা। ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মেয়ে সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু আড়াই লাখ টাকা যোগার করতে হিমসিম খেতে হয়েছে আমাদের। যেটুকু গহনা ছিল তা ব্যাঙ্কে বন্ধক দিয়ে ঋণ করেছি। কিছু ধার দেনাও হয়েছে। তবে এখনও কেউ সাহায্য করেনি।"
আরও পড়ুন: আমার বলে দাঁড়াতেই পারত না কোহলি! বিষ্ফোরক মন্তব্যে বিতর্কের ঢেউ শোয়েবের
পিতা জয়ন্ত মালিক বলেন, "আমি নিজে পোলিও আক্রান্ত হয়েছিলাম। তাই ছেলে মেয়ে দুজনকেই খেলাধূলা করাচ্ছি। যাতে ওরা বড় হয়ে নাম করতে পারে। মেলায় খেলনা বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোর সঙ্গে বাড়তি খরচও করতে হচ্ছে। মেয়ের পাসপোর্ট হয়ে গিয়েছে। ভিসার আবেদনও করা হয়েছে। আড়াই লাখ টাকা কোনওরকম জমা দিয়েছি। আরো কিছু টাকা লাগবে। জানিনা কি করে সামলাবো। তবে চাই মেয়ে ফ্রান্সে ভালো ফল করুক।"
দীপা কর্মকারের একনিষ্ঠ ভক্ত জয়িতা জানান, কঠোর অনুশীলন করেছেন তিনি। মা বাবার কষ্ট নিয়েই সম্যক ধারণা রয়েছে। সেরাটা দিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে বদ্ধপরিকর তিনি। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে জোরকদমে অনুশীলন।