পেলে প্রয়াত হয়েছেন, রেখে গিয়েছেন কলকাতা-স্মৃতি। সেই স্মৃতিতে এখনও ডুবে কলকাতা। সত্তরের দশকে পেলের কসমসের ম্যাচের নস্টালজিয়ায় ভাসেন আপামর ফুটবল প্রেমীরা। পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে সিএবি। ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচই হয়ে দাঁড়াবে পেলের শ্রদ্ধার্ঘ্যমঞ্চ।
পেলের জন্য বঙ্গ ক্রিকেট সংস্থার এই সম্মান-যজ্ঞে লেগে গেল বিতর্কের ছোঁয়াচ। তা-ও আবার ম্যাচ শুরুর ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে। পেলেকে শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চে আমন্ত্রিতই নন মোহনবাগানের সেই মিথ হয়ে যাওয়া দল। মানস ভট্টাচার্য, সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, শ্যাম থাপা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলে দিলেন, তাঁরা কেউই আমন্ত্রিত নন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রিত। সিএবির যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস জানিয়েছেন, ম্যাচের ইনিংস ব্রেকে লেজার শোয়ের বন্দোবস্ত করা হবে। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ইডেনের ঘন্টা বাজিয়ে ম্যাচের সূচনা করবেন।
তবে গোটা আয়োজনে বিতর্কের ছিটে রয়ে গেল পেলের কসমস বনাম মোহনবাগান ঐতিহাসিক ম্যাচের সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা আমন্ত্রিত না থাকায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ক্ষোভ উগরে দিলেন গৌতম সরকার। ভারতের বেকেনবাওয়ার অপমানের স্রোত গায়ে মেখে বলে দিলেন, "কে আমন্ত্রণ করল না করল, তাতে কিছুই যায় আসে না। আমি পেলের সঙ্গে খেলেছি। এর থেকে বড় আর কী হতে পারে! কসমস ক্লাবে আমার ছবি রয়েছে। ভারত তো বটেই দুনিয়া আমাকে চেনে।"
শ্যাম থাপা বর্তমানে কলকাতার বাইরে। তিনিও পুরো বিষয় শুনে অবাক। ভারতীয় ফুটবলে বাইসাইকেল কিকের জনক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বিস্মিত হয়ে বলে দিলেন, "আমি কলকাতার বাইরে রয়েছি। তবে কোনও আমন্ত্রণপত্র পাইনি ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের জন্য। পেলেকে সম্মান জানানোটা খুব ভালো উদ্যোগ। তবে যাঁরা পেলের বিরুদ্ধে খেলল তাঁরাই আমন্ত্রিত না হওয়াটা দুর্ভাগ্যের এবং দুঃখের।"
সন্ধ্যায় মোহনবাগান ক্লাবেই ছিলেন সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া কিংবদন্তি মানস ভট্টাচার্য। তিনি কোনও রাখঢাক না করেই বললেন, "শ্যাম দা, বাবলু দারাও (সুব্রত ভট্টাচার্য) জানেন না এই ম্যাচের আমন্ত্রণের বিষয়ে। আজ সকালে অনেকক্ষণ কথা হল চৌধুরি দার (প্রদীপ চৌধুরি) সঙ্গে। উনিও কিছু জানেন না। ঘটনা হল, যাঁরা আয়োজক তাঁরা যেন ভুলে না যান ম্যাচটা কিন্তু মোহনবাগান খেলেছিল। সিএবির উচিত ছিল কোনও উদ্যোগ নেওয়ার আগে মোহনবাগান ক্লাবকে বিষয়টি অবহিত করা। তবে ক্লাবের অফিসিয়ালরাই কিছু জানেন না। খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারছি আমরা নাকি আমন্ত্রিত। তবে এরকম কোনও আমন্ত্রণ আসেনি।"
বিরাট কোহলি গুয়াহাটিতে রেকর্ড গড়া শতরান করে হাজির হচ্ছেন কলকাতায়। রোহিত, শুভমান গিলের ব্যাটে রানের বন্যা বয়ে গিয়েছে। উমরান মালিক যত দিন যাচ্ছে ততই ধারালো হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেন শানাকাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াই ছাড়ার বান্দা নন তিনি। আগামী দিনে লোভনীয় আইপিএল চুক্তির সম্ভাব্য প্রাপক হিসাবে উঠে আসছে দাশুন শানাকার নাম। তবে এসব ক্রিকেটীয় লড়াইকে পিছনে ফেলে আপাতত শিরোনামে মাঠের বাইরেই যুদ্ধে। যে যুদ্ধে একদিকে সিএবি, অন্যদিকে, মোহনবাগানের কিংবদন্তিরা। ক্রিকেটের মহারণে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। আর সেই যজ্ঞেই কিনা আমন্ত্রণ নেই পুরোহিতের!