অলিম্পিক হবে, না হবে না! এমনই দোদুল্যমান গোটা বিশ্ব। অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে টালবাহানা চলছেই। সব বাধা কাটিয়ে সূর্যোদয়ের দেশের বিমানে চড়লেও এখন থেকেই আঁধারে ডুবে গিয়েছেন প্রণতি নায়েক। বাংলার গর্বের কিশোরী যে এবারই অলিম্পিকে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন। জিমন্যাস্টিকে তাঁকে ঘিরে পদকের স্বপ্ন দেখছে গোটা দেশ তবে সঙ্গী হচ্ছেন না শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা তাঁকে সন্তানসম স্নেহে আগলে রাখা কোচ মিনারা বেগম।
নামেই কোচ! আসলে প্রণতির 'ফ্রেন্ড, ফিলোজফার এন্ড গাইড' মিনারা বেগম-ই। পোশাকি কোচের আড়ালে সযত্নে লুকিয়ে রাখেন স্নেহময়ী দিদি সত্তাকে। প্রণতির সঙ্গেই এবার জাপানে যাওয়া হচ্ছে না তাঁর। কেন? ফেডারেশনের তরফে প্রণতির কোচ হিসেবে পাঠানো হচ্ছে সাইয়ের নতুন এক কোচকে। সেখানে ঠাঁই হয়নি মিনারার। এ যেন মাঠে নামার আগেই পার্টনারশিপ ভেঙে দেওয়া। আর এমন খবর পেয়েই ভেঙে পড়েছেন মিনারা খাতুন। সংবাদ মাধ্যমে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "আমাকে বঞ্চিত করা হল!"
আরো পড়ুন: করোনা আক্রান্ত নাইট তারকাকে নিয়মিত ফোন! শাহরুখকে নিয়ে আবেগে ভাসছেন বরুণ চক্রবর্তী
পিংলার প্রণতি আর মিনারা বেগম যেন সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় জিমন্যাস্টিকে। মিনারার কোচিংয়েই একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি চড়েছেন প্রণতি। ২০১৯-এ জার্মানির স্টুটগার্টে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে দুরন্ত ফলাফল করেন প্রণতি। সেই রেজাল্টের ভিত্তিতেই অলিম্পিকে খেলার ছাড়পত্র আদায় করেন নেন বঙ্গকন্যা। তারও আগে মঙ্গোলিয়ায় সিনিয়র এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টেই স্বপ্নের মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছিল ক্রীড়াবিশ্ব। উদযাপনের আতিশয্যে দৌড়ে এসে নিজের ব্রোঞ্জ পদক ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন কোচ মিনারার গলায়।
সেই মিনারাই এবার উঠবেন না টোকিও গামী বিমানে। গলায় যন্ত্রণার পাহাড় চাপিয়ে মিনারা বেগম বলেছেন, "যে কোনও কোচ এবং খেলোয়াড়ের একটাই স্বপ্ন থাকে। তা হল অলিম্পিক। আজ অলিম্পিক যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন এবং সাই আমার প্রতি অবিচার করল। আমাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না অলিম্পিকে। ১৬ বছর ধরে প্রণতিকে আমি তৈরি করেছি। আমার হাতে গড়া মেয়েটা আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পদক জিতল, অলিম্পিকের ছাড়পত্র পেল। এখন আমার জায়গায় যাচ্ছে অন্য কেউ। এতো অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।"
সাইয়ের কোচ ছিলেন দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক। তবে দু-বছর আগে ২০১৯-এ কোচের পদ থেকে অবসর নেন তিনি। অবসর নেওয়ার কারণেই কি তাঁকে রাখা হয়নি প্রণতির কোচ হিসেবে? এমন যুক্তি অবশ্য তিনি মানছেন না। সটান জানিয়ে দিয়েছেন, "চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। কোচিং থেকে তো নয়। আর অবসর নেওয়াটাই যদি কারণ হয়, তাহলে আমাকে মঙ্গোলিয়া, জার্মানিতে পাঠানো হল কেন? তখন তো আমি রিটায়ার করে ফেলেছি সাই থেকে। ক্যাম্পও করেছি। ওরা স্থির করেছে অন্য কাউকে পাঠাবে, সেই মতোই আমি বাদ।"
আরো পড়ুন: যোগ্যতা থাকলেও সুযোগ পাননি! প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে বিস্ফোরণ যুবরাজের
প্রণতি যখন টোকিওয় বিশ্বের দর্শককে সাক্ষী করে ভেলকি দেখবেন, তখন হয়ত বাড়িতে বসেই ছাত্রীর খেলা দেখতে হবে তাঁকে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মূল্যবান পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হতে হবে তারকা জিমন্যাস্টকে। বাংলা কি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দ্রোনাচার্যকেও হারিয়ে ফেলবে না! আক্ষেপ চেপে রেখে বাংলার বঞ্চনার প্রতিধ্বনিই যেন নিনারার গলায়, "কয়েকমাস প্রশিক্ষণ দিয়েই কি কোনও কোচ একজন জিমন্যাস্টকে অলিম্পিকের জন্য তৈরি করতে পারে? সব ক্রেডিট আমার। ১৬ বছর ধরে পরিশ্রম করেছি। অলিম্পিকে কোচ হিসেবে গেলে দ্রোণাচার্য পুরস্কার পাওয়া যায়। আমি সেই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বঞ্চিত হবে বাংলাই।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন