করোনাভাইরাসের থাবা যে আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) উপরেও বসতে পারে, সেই সম্ভাবনা কয়েকদিন আগেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্রিজেশ প্যাটেল। আর আজ, বৃহস্পতিবার, পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন সেই বিসিসিআই-এরই কিছু উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
টেলিকনফারেন্স মারফৎ ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছ থেকে এই আধিকারিকরা জানতে চাইলেন, আগামী ২৯ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় আইপিএল-এর উপর স্বাস্থ্যের দিক থেকে কী প্রভাব পড়তে পারে। শেষমেশ তাঁদেরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে প্রশ্ন পেশ করতে বলা হয়।
এক সূত্রের কথায়, "বিসিসিআই-এর কিছু অভ্যন্তরীণ বৈঠক হচ্ছে এ ব্যাপারে, এবং করোনাভাইরাস থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির খতিয়ান নিতে চায় তারা। সমস্ত তথ্য একত্রিত করে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" ওই সূত্র আরও জানায়, "কবে কোথায় ক্রীড়ানুষ্ঠান হবে, তা ক্রীড়া মন্ত্রক স্থির করতে পারে না। সুতরাং বিসিসিআই-কে বলা হয়েছে, তারা যেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সচিব এবং যুগ্ম সচিবের সঙ্গে কথা বলে নেয়।"
আরও পড়ুন: আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের ‘প্রাইজ মানি’ এবার ২০ থেকে কমে ১০ কোটি!
বিসিসিআই ছাড়াও বৃহস্পতিবার ক্রীড়া মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এনআরএআই)। আগামী ১৬ মার্চ থেকে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শুটিং বিশ্বকাপ। তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের খাতিরে ভিসা-সংক্রান্ত যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার, তার ফলে প্রায় এক ডজন দেশ, যাদের মধ্যে রয়েছে শুটিংয়ে পারদর্শী চিন, ইতালি, এবং ইরান, এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বুধবার আরও একটি বড়সড় ধাক্কা খায় এই টুর্নামেন্ট, যখন ইন্টারন্যাশনাল শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিভিন্ন দেশ নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারীদের অর্জিত র্যাঙ্কিং পয়েন্ট গণ্য হবে না।
বিসিসিআই এবং রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন, উভয়েরই সমস্যা মূলত দুটি: যথেষ্ট সংখ্যক বিদেশি খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এবং ভিড় সামলানো। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বিসিসিআই-এর সঙ্গত কারণেই মাথাব্যথা বেশি, কারণ আইপিএল-এর খেলা দেখতে কত হাজার হাজার দর্শক আসেন, তা সকলেরই জানা।
মুশকিল হলো, ভাইরাসের বিস্তার রুখতে যে কোনও বড় সমাবেশ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই সূত্রের কথায়, "লোকে খেলা দেখতে না গেলে আইপিএল-এর আয় এবং গুরুত্ব, দুইই কমবে। সুতরাং বিসিসিআই ভিড় সামলানোর বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত।"
আরও পড়ুন: আইপিএল-এর উপর নির্ভর করছে ধোনির ভবিষ্যৎ, জানিয়ে দিলেন দুই নির্বাচক
ওই সূত্র আরও জানাচ্ছে, বিসিসিআই এবং এনআরএআই-এর সামনে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ করানোর আগে কোয়ারান্টাইনে (quarantine বা সঙ্গরোধ) পাঠানো। "কোনও খেলোয়াড় যদি এমন কোনও দেশ থেকে আসেন যেখানে আপাতত ভিসা দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে কী করণীয়? বা কোনও খেলোয়াড় যদি এমন কোনও দেশ থেকে আসেন যাতে তাঁকে কোয়ারান্টাইনে রাখতে হয়, তাহলে কী করণীয়?"
আইপিএল-এ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলি থেকে আসবেন প্রায় ৬০ জন খেলোয়াড়। এখনও এসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত।
প্রসঙ্গত, আইপিএল-এ করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা এখনও প্রকাশ্যে অস্বীকারই করছে বিসিসিআই। বৃহস্পতিবার প্যাটেল বলেন, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা, অন্যদিকে সৌরভ বলেন বিসিসিআই "এ বিষয়ে কোনও আলোচনাই" করে নি।