দেশের প্রথম ফুটবল দল। তাও আবার রূপান্তরকামীদের দিয়ে তৈরি। এমনই অভিনব কান্ড করে দেখালো মণিপুর রাজ্য ফুটবল সংস্থা। আসলে এই দল তৈরির ভাবনা ইয়া অল নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। অলাভজনক এই সংগঠন রূপান্তরকামীদের সামাজিক পরিচিতি ও বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছে। তারাই ১৪ জন রূপান্তরকামী কলেজ ছাত্রদের দিয়ে এই দল গঠন করেছে। প্রত্যেকেই ফুটবল খেলা নিয়ে বেশ প্যাশনেট।
মণিপুরের ঐতিহ্যবাহী আওশানগ উৎসব (দোল) পাঁচদিন ধরে চলে। সেই উৎসব উপলক্ষেই ৮ মার্চ এই দল গঠন করা হয়। অবশ্য তিন বছর আগে রাজ্যের একটি সেভেন আ সাইড টুর্নামেন্টে এই দল আত্মপ্রকাশ করে।
এই দলের স্ট্রাইকার ও সহ অধিনায়ক চাকি হুইদ্রোম ইম্ফলের ধনমঞ্জুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরবিদ্যা নিয়ে মাস্টার্স করছেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, "আমাদের ই মতো ফুটবলারদের দিয়ে তৈরি এই দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে দারুন লাগছে। আমরাই দেশের প্রথম রূপান্তরকামী ফুটবল দল।"
তাঁর সংযোজন, "আমি খেলাধুলা করতে পছন্দ করি। তবে মহিলা হয়ে জন্মগ্রহণ করার জন্য এতদিন মহিলা দলে খেলতে হতো। এই নিয়ে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ ছিলই। ইয়া অল কে ধন্যবাদ আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য।"
ইয়া অলের প্রতিষ্ঠাতা সাদাম হানজবাম জানান, সামাজিক বিধিনিষেধের গন্ডি টপকে এই দল গঠন করার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। রূপান্তরকামীরা বরাবরই সমাজে ব্রাত্য। একাধিক ক্ষেত্রে ছুৎমার্গ রয়েছে এঁদের নিয়ে। বিভেদের এই বেড়া ভাঙার জন্যই প্রথম প্রচেষ্টা চালু হয়েছিল ২০১৮ র মার্চের ইয়োসাং উৎসবে। সেই সময়ে সিক্স আ সাইড একটি প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচে দল গড়া হয়েছিল সামাজিক ভাবে বার্তা দেওয়ার জন্য। যদিও সেই সময় তীব্র বাধার সামনে পড়তে হয়েছিল তাঁদের।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তিনি জানান, "যে সমাজ তৃতীয় লিঙ্গ কে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয় সেখানে এই দল গঠনের কাজ মোটেই সহজ নয়। তবে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি সুপ্রিমকোর্টের রায় অনেক সাহায্য করেছে।"
এখন অবশ্য এই কাজের জন্য পরিবেশ অনেকটাই অনুকূল হয়েছে। রক্ষণশীল মানসিকতা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এতটাই যে রাজ্যের বাইরেও একাধিক জায়গায় ফুটবল খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছে এই দল। তিনি জানান, "বাধা বিপত্তি থাকলেও রূপান্তরকামীদের জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাব। পুরো রাজ্য জুড়ে এই কমিউনিটির জন্য একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ভাবনা রয়েছে।"