করোনায় জেরবার গোটা বিশ্ব। ক্রীড়া মহলেও আছড়ে পড়ছে করোনার থাবা। একাধিক মেগা টুর্নামেন্ট হয় বাতিল নাহয় স্থগিত রাখতে হয়েছে।
ক্রিকেটে সমস্যা আরো জোরালো। একাধিক দেশের ক্রিকেট বোর্ড খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেউলিয়া হওয়ার মুখে। আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে বিশ্বের প্রত্যেক ক্রিকেট বোর্ডই ধনীতম ক্রিকেট সংস্থা বিসিসিআইয়ের মুখাপেক্ষী।
জিম্বাবোয়ে, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্টইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলো ভারতের সঙ্গে ম্যাচ খেলে আর্থিক বিষয়ে লাভবান হয়ে থাকে। তবে করোনার অতিমারী সেই তালিকায় এনে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ার মত উচ্চবিত্তদেরও। ইতিমধ্যেই আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে বিসিসিআইয়ের কাছে বছর শেষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিসিসিআইয়ের অন্যতম শীর্ষ কর্তা অরুণ ধুমল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়ে , "পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলে বোর্ড পুরো পরিকল্পনা করে ফেলবে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনা চিন্তা চলছে, যেমন- সামনেই জিম্বাবোয়ে সিরিজ। সেই সিরিজ নাও হতে পারে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ওদের সঙ্গে আবার খেলার চেষ্টা করবো। এতে টিভি সম্প্রচারের স্বত্ব থেকে উপকৃত হবে জিম্বাবোয়ে। পাশাপাশি অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছেও প্রস্তাব রাখা হবে অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার জন্য। এটা অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা যে কোনো দেশ হতে পারে।"
ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে যে অদলবদল হতে পারে। সেই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন ধুমল। তিনি জানিয়েছেন, "এফটিপি সূচি বদলানোর সম্ভবনা রয়েছে। করোনা ভাইরাস পুরোপুরি মুক্ত হলে তবেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। অন্য বোর্ডগুলোকে কীভাবে সাহায্য করা হবে তখনই ঠিক হবে।"
করোনা পরবর্তী সময়ে ভারত যে বিশ্বক্রিকেটে নেতৃত্ব দিতে চলেছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, "কঠিন সময়ে আমরা সকলের কাছে বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করতে চাই। আইসিসি বৈঠকে জয় শাহ একটি খসড়া পেশ করেছিল। সেটি প্রশংসিত হয়। করোনার পরে পরিস্থিতি মোটেই এক থাকবে না। প্রত্যেকেই ক্ষতি করবে। সংখ্যা তখনই জানা যাবে। সচিব জয় শাহ ইতিমধ্যেই আইসিসিতে জানিয়েছেন প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়েও বিসিসিআই আগামীদিনে এগোতে চায়। আমরা ক্রিকেটের অর্থনীতি বুঝি। করোনার পরে আমরা প্রত্যেক বোর্ডকেই সাহায্য করব যাতে ওরা আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।"
করোনা সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য খেলার মতই ক্রিকেট অর্থনীতিতে বড়সড় আঘাত হেনেছে। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত আইসিসি ইভেন্ট বাতিল হলে প্রত্যেক দেশের ক্রিকেট বোর্ড ৭-৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি করবে। তবে টুর্নামেন্টের আয়োজক হওয়ায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা বেশি। এমন অবস্থার কথা বিবেচনা করেই ভারত সিরিজ খেলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। যাতে ভারত সিরিজ খেলে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।
আইসিসির বর্তমান সূচি অনুযায়ী বিশ্বকাপের পরেই অস্ট্রেলিয়ায় বিরুদ্ধে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ভারতের। তবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্যই অতিরিক্ত আরো একটি টেস্ট খেলার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই অস্ট্রেলিয়ার তরফে বিসিসিআইয়ের কাছে এই আর্জি রাখা হয়।
ঘটনা হল, বর্তমানে টিম ইন্ডিয়া ইংল্যান্ড বাদে অন্য কোনো দেশের সঙ্গেই পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে না। বিসিসিআই যদিও এই অতিরিক্ত টেস্টের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সবুজ সংকেত দেয়নি।
এদিকে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কার্যনির্বাহী কেভিন রবার্টস জানালেন, সূচি অনুযায়ী টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের মরিয়া তাঁরা। ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে, ক্লোজড ডোরেও বিশ্বকাপ আয়োজন করা হতে পারে।
ক্রিকেট সম্প্রচারের জন্য চ্যানেল সেভেন ও ফক্স স্পোর্টসের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ১.২ বিলিয়ন চুক্তি রয়েছে। এমন অবস্থায় ক্রিকেট সূচিতে ব্যাঘাত ঘটলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে চলতি মরশুমে। ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ক্রিকেট সিরিজ আয়োজনের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের কাছেও পে কাটের আর্জি জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই।