তুষার ভাদুড়ি
গোপন ক্যামেরার সামনে প্রাক্তন ক্রিকেটার রবিন মরিস শোনাচ্ছেন ক্রিকেটের অন্ধকার অধ্যায়ের কথা। বাইশ গজের অজানা অপকর্মের কথা বলছেন অবলীলায়। তাঁর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি, গতবছর শ্রীলঙ্কার গাল্লে তে ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট ম্যাচটি 'ফিক্স' করা হয়েছিল। ৩০৪ রানে ভারতের জেতা এই ম্যাচে পিচ কিউরেটরকে তাঁদের নির্দেশমত পিচ বানানোর জন্য টাকা দিয়েছিলেন মরিস এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা।
মরিসরা আরও চান, এ-লিস্টে যেসব ক্রিকেটাররা খেলেন না, তাঁদের নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE) একটি চারদলীয় টুর্নামেন্ট করতে। স্পট-ফিক্সিং আর বেটিংয়ের জন্যই আয়োজিত হবে এই দশ-দিন ব্যাপী টুর্নামেন্ট, দুবাই ক্রিকেট কাউন্সিলের অধীনে। নিজেদের একটা টি-২০ লিগ করার পরিকল্পনাও রয়েছে মরিসদের।
ম্যাচ-ফিক্সিং সংক্রান্ত এই ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে কাতারি টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার স্টিং অপারেশনে। এতটাই চাঞ্চল্যকর তথ্য, যে নড়েচড়ে বসেছে স্বয়ং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা, যারা বাধ্য হয়েই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন, ভারতে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ে জড়িত দু’জন অস্ট্রেলীয়, তিনজন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার?
মরিসের সহকারি গৌরব রাজকুমার সেই স্টিং অপারেশনে বলছেন, “পুরো নিয়ন্ত্রণটাই আমরা চাই। খেলোয়াড়রা আমাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবে।” এখানেই শেষ নয়, মরিস চেয়েছিলেন দুজন স্বল্প পরিচিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের মাধ্যমে দরপত্র জমা দিতে। তাঁরা রাজিও হয়ে যান। পাশাপাশি মরিস সাফ বলেন, "আমার কাছে এরকম ৩০ জন ক্রিকেটার আছে, তারা শুধু আমার কথা শুনেই খেলবে।” মরিস এও বলেন যে, একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার এখানে অ্যাপিয়ারেন্স ফি-র থেকে ৪০ গুণ বেশি পাবেন। মাত্র ১০ দিনেই প্রচুর প্রচুর অর্থ উপার্জনের রাস্তা এটা।
গাল্লের পিচ প্রসঙ্গে রাজকুমার বলেছেন, “মনের মতো পিচ বানানোর জন্য কিউরেটররা ২৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এটা তাঁদের আট বছরের একত্রিত বেতনের সমান।” গাল্লের সহকারি ম্যানেজার ও গ্রাউন্ডসম্যান থরঙ্গা ইন্ডিকা ক্যামেরায় বলেছেন, আইসিসি-র অফিসিয়ালরা আসার আগেই পিচ বানানোর ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হয়। কিন্তু তারপরেও পিচে প্রভাব খাটানো সম্ভব বলেই দাবি তাঁর। সেক্ষেত্রে বিশেষ একরকমের ব্রাশে অতিরিক্ত চাপ দিয়েই পিচের ক্ষতিসাধন করা যায়। যদিও পরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সিইও অ্যাশলে ডি সিলভা জানান যে, ইন্ডিকা কিউরেটর নন, শুধুই সহকারি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। প্রশাসনিক দিকটার দেখভাল করেন তিনি।
আল জাজিরার রিপোর্টে উঠে এসেছে পাকিস্তানের ক্রিকেটার হাসান রাজার নামও। মরিস ও হাসান দুজনেই ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে মুম্বই চ্যাম্পসের হয়ে খেলেছিলেন। রাজাও ম্যাচ-ফিক্সিংয়ে জড়িত বলেই মনে করা হচ্ছে।পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে যে তাদের দুনীর্তি দমন শাখা পুরো বিষয়টা তদন্ত করে দেখছে। হাসান পাকিস্তানের হয়ে সাতটি টেস্ট ও ১৬টি ওয়ান ডে খেলেছেন। শেষবার ২০০৫-এ মাঠে নামেন তিনি।