তারকা ক্রিকেটার সহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদদের নীরবতার দিকে ইঙ্গিত করে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক বিজয়ী ভিনেশ ফোগাট জানিয়ে দিলেন, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের পক্ষে দাঁড়ানোর 'তাদের সাহস নেই' দেখে তিনি 'ব্যথা পেয়েছেন।' অলিম্পিক পদক বিজয়ী সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়ার সাথে ভিনেশ, রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে চালু থাকা কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ, অবস্থান বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন।
বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আইডিয়া এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে বক্তৃতায় (সম্পাদিত প্রতিলিপি সোমবার, মে ১ এ প্রদর্শিত হবে), ভিনেশ বলেছেন, “পুরো দেশ ক্রিকেটের পূজা করে কিন্তু একজন ক্রিকেটারও কথা বলছে না এই ইস্যুতে। আমরা বলছি না যে আপনি আমাদের পক্ষে কথা বলুন। তবে অন্তত একটি নিরপেক্ষ থাকার বার্তা তো দেওয়াই যায়। স্রেফ এটুকু বলুক যে কোনও পক্ষের জন্য ন্যায়বিচার হওয়া উচিত। এটাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে… ক্রিকেটার হোক, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হোক, অ্যাথলেটিক্স হোক, বক্সিং হোক…"
তিনি 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনের ঘটনা তুলে ধরেছেন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই গোটা বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াবিদদের এক করে দিয়েছিল। “এটা এমন নয় যে আমাদের দেশে বড় অ্যাথলিট নেই। এখানে ক্রিকেটাররা রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় ক্রিকেটাররা তো ওঁদের সমর্থন দেখিয়েছিল। আমরা কি সেই সমর্থন পাওয়ার এতটুকুও যোগ্য নই," জিজ্ঞাসা করছেন তিনি।
ভিনেশ বলেছিলেন, তিনি এবং বজরং খোলা চিঠি লিখেছিলেন আগেই। ভিডিও-ও পোস্ট করে ক্রীড়াবিদদের কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। “কিন্তু তবে বুঝতে পারছি না ওঁরা এত ভয় পায় কীসে! হয়ত এই ঘটনা ওঁদের স্পনসরশিপ এবং ব্র্যান্ড অনুমোদনের চুক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। হয়তো এই কারণেই তারা প্রতিবাদকারী ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু এটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে,” জানালেন তিনি।
"আমরা কিছু জিতলে আপনি আমাদের অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে আসেন। এমনকি ক্রিকেটাররাও টুইট করেন আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে। অভি ক্যায়া হো গয়া? (এখন কি হয়েছে?) আপনি কি সিস্টেমকে এত ভয় পান? নাকি ওখানেও কিছু ঘোটালা হচ্ছে” তাঁর সংযোজন।
'সিস্টেম পরিষ্কার করার' নৈতিক দায়িত্ব দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদদেরও। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক বিজয়ী বলেছেন, 'সমস্ত ক্রীড়াবিদ এখানে প্রতিবাদে বসে থাকলে পুরো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়বে' এবং যারা এটি চালাচ্ছে তারা 'শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাতে পারবে না।'
"কিন্তু বড় বড় ক্রীড়াবিদরা যদি নীরব থাকেন, তাহলে কিছু লাভ হবে কি? প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশনের সমস্যা রয়েছে। অনেক ক্রীড়াবিদও আমার বন্ধু। তবে কোনও ভান করা উচিত নয়। আমি ওঁদের ম্যাচ খেলতে যাই, ওঁরাও আমাদের জন্য আসে, আমরা একসঙ্গে ছবি তুলি। পদক জেতার জন্য পরস্পরকে অভিনন্দন জানাই। ক্রীড়াবিদদের সোশ্যাল মিডিয়ার বুদ্বুদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং বাস্তবে এই সহৃদয়তা প্রকাশ করতে হবে। ব্যক্তিগত লাভের বাইরে পুরোটা ওঁদের দেখা উচিত এবং নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করা উচিত ওঁদের” তিনি বলেছিলেন।
"লগ কেহতে হ্যায় রেসলার কা দিমাগ ঘুতনো মে হোতা হ্যায় (লোকে বলে কুস্তিগীরদের মন ঠিক জায়গায় নেই)। কিন্তু আমি বলব আমাদের দিল (হৃদয়), দিমাগ (মন)… সবই ঠিক জায়গায় আছে। অন্যান্য ক্রীড়াবিদদের তাদের মন কোথায় তা পরীক্ষা করতে হবে। দিল তো উনকে পাস হ্যায় হি না (তাদের হৃদয় নেই),” তিনি বলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন যে যে ক্রীড়াবিদদের এখন নিজেকে শোনানোর "সাহস" নেই তাদের ভবিষ্যতে পদক জিতলে তাদের "অভিনন্দন" করা উচিত নয়।
"আপনি ফটো রাখেন, আপনি ব্র্যান্ডিং করেন… আপনি কি একটি পোস্ট করতে পারছেন না যে আমাদের জন্য ন্যায়বিচার হওয়া উচিত। এটাই আমাদের অনুরোধ, "তিনি বলেছিলেন। "যদি আমরা লড়াইয়ের এই সময়ে তাদের সমর্থনের যোগ্য না হই, তাহলে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় যদি আমরা আগামীকাল পদক জিতি, তখন আমাদের অভিনন্দন জানাতে আসবেন না। তখন বলবেন না যে আপনি আমাদের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস ছিল। কারণ আপনি তা করেননি - এই কারণে আপনি এখন আমাদের সন্দেহ করছেন, "তিনি বলেছিলেন।
রাজনীতিবিদ এবং খাপ নেতারা যন্তর মন্তরে প্রতিবাদের জায়গায় যাওয়ার পথে, কুস্তিগীররা ক্রীড়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কার্যত সমর্থন-ই পাননি।
বৃহস্পতিবার, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক কপিল দেব তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে তিন কুস্তিগীরের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "তারা কি কখনও ন্যায়বিচার পাবে?"
একদিন আগে অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী অভিনব বিন্দ্রা লেখেন, “যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমার হৃদয় আকুল হয়ে ওঠছে। ওঁদের উদ্বেগ মেটানোর জন্য যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি পোস্ট করেছেন।
এই বার্তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, অলিম্পিয়ান জ্বলা গুট্টা এবং শিব কেশবনও তাদের সমর্থন জানান। কিন্তু বাকিরা এখনও পর্যন্ত স্পিকটি নট।
ভারতের শীর্ষ কুস্তিগীররা রবিবার থেকে রাজধানীর যন্তর মন্তরে ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর চেয়ে বিক্ষোভ করছেন। একজন নাবালক সহ সাতজন মহিলা কুস্তিগীর তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং অপরাধমূলক ভয় দেখানোর অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে পৃথক পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছেন।
দিল্লি পুলিশ এফআইআর নথিভুক্ত করছে না জানিয়ে প্রতিবাদী কুস্তিগীররা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন, শীঘ্রই এই বিষয়ে শুনানি হবে।
Read the full article in ENGLISH