"পাহাড়ের কোনও ভরসা নেই...এখানে কখনও বৃষ্টি তো কখনও রোদ।" একটি বাক্যে পাহাড়ের আবহাওয়ার চরিত্রের বর্ণনা দিয়ে দেন ম্যাকলিওডগঞ্জের ট্যাক্সি চালক ইন্দর ঠাকুর।
অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দার মতোই ক্রিকেট-পাগল ইন্দর, আবার ঘোরতর কুসংস্কারাচ্ছন্নও বটে। ধরমশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠেয় ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ম্যাচ যাতে বৃষ্টিতে ধুয়ে না যায়, তার জন্য একমনে প্রার্থনা করছেন তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার বিরক্তি এখনও ভুলতে পারেননি ইন্দর।
আরও পড়ুন: তৃতীয় দিন পার, এগিয়ে সৌরাষ্ট্র, অভিমন্যুর আউট ঘিরে তীব্রতর হচ্ছে বিতর্ক
"ওই ম্যাচটা হয় নি কেন জানেন?" প্রশ্ন তাঁর। পরক্ষণেই নিজেই উত্তর দেন, কারণ হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (HPCA)-এর কর্তারা ম্যাচের আগে ইন্দ্রু নাগের মন্দিরে পুজো দেন নি। এই মন্দিরের নামকরণ হয়েছে নাগ দেবতার নামে, এবং এটি একটি অধিত্যকার উপরে অবস্থিত, যা এখন পরিণত হয়েছে প্যারাগ্লাইডিং সাইটে। স্থানীয় দেবতা ইন্দ্রু নাগের জনপ্রিয়তা এই অঞ্চলে প্রবল, এবং তাঁর অধিকাংশ ভক্তেরই বিশ্বাস, কোনও শুভকাজের আগে তাঁর পুজো দিলে সাফল্য অনিবার্য।
সম্ভবত এই কারণেই এবার আর গতবারের 'ভুল' করেন নি HPCA কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহেই পুজো দিয়ে এসেছেন মন্দিরে। HPCA সেক্রেটারি সুমিত শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "হ্যাঁ, আমাদের কিছু আধিকারিক গত সপ্তাহে ইন্দ্রু নাগের মন্দিরে পুজো দেন। গতবার এখানে বৃষ্টিতে খেলা ভেস্তে যাওয়ার পর এবারে আর কোনও খামতি রাখতে চাই নি আমরা।"
আরও পড়ুন: আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান
এই ইন্দ্রু নাগ সম্পর্কে আরেকটি মনোজ্ঞ কাহিনি প্রায়ই বলে থাকেন স্থানীয়রা। বস্তুত, এই কাহিনি এখন লোকগাথায় পরিণত হওয়ার পথে। এই স্টেডিয়ামে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ - ভারত বনাম ইংল্যান্ডের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক - অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। ম্যাচের কয়েকদিন আগে দেবতার মন্দিরে পুজো দিতে ছোটেন অ্যাসোসিয়েশন কর্তারা। এবং নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় ম্যাচ। কিন্তু গল্পটা হলো যে স্টেডিয়ামের পরিধি বাদ দিয়ে নাকি মুষলধারে বৃষ্টি হয় সেদিন, ভেসে যায় ধরমশালা, এবং ধরমকোট ও ম্যাকলিওডগঞ্জের বেশ কিছু অংশ। অন্তত এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
HPCA আধিকারিকদের মাথাব্যথার কারণ আছে যথেষ্ট। এই ধরনের এলোমেলো আবহাওয়ার ফলে সিরিজের সূচী তৈরি করতে ভালোমতো বেগ পাচ্ছে বিসিসিআই, বিশেষত যখন ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সিরিজের সময়সীমা। কিন্তু ইন্দরের মতোই বাকি স্থানীয় বাসিন্দাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পুজো যখন একবার দেওয়া হয়ে গেছে, তখন বাকিটা ঠিক দেখে নেবেন 'ইন্দ্রু নাগ' ঠাকুর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন