বাবা জাট রেজিমেন্টের জওয়ান। কার্গিল যুদ্ধেও লড়েছেন। চেয়েছিলেন ছেলেও যাতে স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ নিক এনডিএ (জাতীয় ডিফেন্স অ্যাকাডেমি)-তে। তবে ছেলে সেপথে এগোয়নি। বরং ব্যাট-বলের দুনিয়ায় চলে এসেছেন। কার্গিল যুদ্ধের সেনা নেম সিং জুরেলের পুত্র ধ্রুব আপাতত ভারতীয় যুব ক্রিকেটের মুখ।
বছর আঠারোর ধ্রুব মূলত উইকেটকিপার। ব্যাটিংয়ের হাতও ভাল। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেন। সাম্প্রতিককালে তাঁর পারফরম্যান্সে ধ্রুব নির্বাচকদের এতটাই প্রভাবিত করে ফেলেছেন যে পরের মাসেই শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে চলা যুব এশিয়া কাপে ভারতের অধিনায়ক বাছা হয়েছে তাকে। ইংল্যান্ডের হোভে কিছুদিন আগেই তিনদেশীয় যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্রেফ ধ্রুবের দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সে ভর করে। ফাইনালে খেলা ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২৬২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারত দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। তবে সেখান থেকে ভারতের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান স্বয়ং ধ্রুব। তাঁর অপরাজিত ৫৯ রানে ভর করে ভারত ফিনিশিং লাইন পেরোয়।
আগ্রার উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যানকে বলা হচ্ছে, ভারতের ধোনি। স্ট্রাইক রেট বেশ ভাল রেখে ব্যাটিং করেন। উইকেটের পিছনেও বেশ সপ্রতিভ। ব্যাট হাতে ফিনিশ করে আসতে পারেন। ধ্রুব নিজেও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, "দল যখন বিপদে পড়ে তখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাটিং করতে ভাল লাগে।"
আরও পড়ুন মিস্ট্রি স্পিনার অজন্থা মেন্ডিজের অবসর সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকে
কথা না শুনে নিজের কেরিয়ার নিজে বেছে নিলেও ধ্রুব-র কেরিয়ার বাছাই নিয়ে পিতা নেম সিং জুরেল বলে দিয়েছেন, "দেশের সেবা করাটাই আসল। ২০০৮ সালে অবসর নেওয়ার আগে দেশের জন্য় কার্গিল যুদ্ধে লড়েছি। ছেলে ক্রিকেটার হয়ে দেশের সেবা করছে। যদিও ক্ষেত্র আলাদা, তবুও উদ্দেশ্য একই।"
শুরুতে অবশ্য ছেলের ক্রিকেটার হিসেবে সাফল্য পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন নেম সিং। তবে ক্রিকেটের প্রতি ছেলের প্যাশন দেখে আগ্রার স্প্রিংডেল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন ধ্রুবকে। যেখানে পরবেন্দ্র যাদবের কোচিংয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি ধ্রুব-র। চার বছর আগে ধ্রুব-র প্রতিভার প্রথম পরিচয় পান নেম সিং। স্থানীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচে ২১ বলে শতরান হাকিয়েছিলেন ধ্রুব। সেই সময় কোচ ডেকে নেম সিংকে শুভেচ্ছাও জানান। তবে ধ্রুব-র বক্তব্য় চমকে দিয়েছিল পিতাকে। ১৪ বছরের কিশোর গলায় উত্তেজনার লেশমাত্র না এনে বলে দিয়েছিলেন, মাঠ অনেক ছোট ছিল। সেদিন থেকেই নেম সিং বুঝতে পারেন, সাফল্যের মারাত্মক খিদে ধ্রুবকে অনেকদূর পৌঁছে দিতে পারে।
তারপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ধ্রুব আগ্রা ছেড়ে চলে আসেন নয়ডায় ফুলচাঁদ শর্মার ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। তারপরে দিল্লিতে ক্লাব ক্রিকেটে একের পর এক ইনিংসে নিজের জাত চেনানো শুরু। বৈভব মিশ্র টুর্নামেন্টে ৩৬ বলে ৮০! তার দৌলতেই উত্তরপ্রদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ স্কোয়াডে সুযোগ। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এবার যুব জাতীয় দলের অধিনায়কও তিনি। ধোনি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন ধ্রুব। সেই স্বপ্ন সফল করার দায়িত্ব এবার তার-ই।
Read the full article in ENGLISH