Advertisment

'মিরাকল' হল না, মাকালু অভিযানে নিখোঁজ দীপঙ্করের দেহ উদ্ধার

সেভেন সামিট সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ২৩ মে সাত শেরপার  উদ্ধারকারী দল দীপঙ্কর ঘোষের দেহ উদ্ধার করেছে ক্যাম্প ফোরের কাছে। আগামী শনিবারের মধ্যে তাঁর দেহ হেলিকপ্টারে করে কাঠমান্ডুতে নিয়ে আসা হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
dipankar ghosh

মাকালু অভিযানে শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যান দীপঙ্কর ঘোষ।

এই মরসুমে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান কেড়েছে বাংলার দুই পর্বতারোহীর প্রাণ। তবু মাকালু অভিযানে নিখোঁজ হওয়া দীপঙ্করকে ফিরে পাওয়ার আশায় ছিল রাজ্যবাসী। নিখোঁজ হওয়ার পর আটদিন কেটে যাওয়ার পরেও দীপঙ্করকে 'মৃত' ঘোষণা করেনি নেপাল সরকার। তাই যুক্তির বাইরে গিয়েও আশা নিয়েই দীপঙ্করের অপেক্ষায় ছিল বাংলা। কিন্তু না, ফিরছেন না দীপঙ্কর। ফিরছে শুধু  রক্ত-মাংসের নিথর দেহটা।

Advertisment

প্রসঙ্গত, হিমালয়ের কোনও শৃঙ্গ অভিযানের ক্ষেত্রে পর্বতারোহীর দেহ উদ্ধার না হলে নিখোঁজ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে নেপাল সরকার। তবে এক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টা কেটেছিল দিন পাঁচেক আগেই। এতদিনেও দীপঙ্করকে 'মৃত' ঘোষণা না করায় যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেচনার বাইরে গিয়ে 'মিরাকল'-এর আশায় ছিল বাংলা।

সেভেন সামিট সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ২৩ মে সাত শেরপার  উদ্ধারকারী দল দীপঙ্কর ঘোষের দেহ উদ্ধার করেছে ক্যাম্প ফোরের কাছে। আগামী শনিবারের মধ্যে তাঁর দেহ হেলিকপ্টারে করে কাঠমান্ডুতে নিয়ে আসা হবে।

আরও পড়ুন, জনাকীর্ণ এভারেস্ট, শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্ন আগলেই সমতলের পথে পিয়ালি

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকদিন যাবত ছিলেন কাঠমান্ডুতে।

পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম মাকালু শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে ১৬ মে নিখোঁজ হয়ে যান বাংলার এভারেস্টজয়ী দীপঙ্কর ঘোষ। ১৮ মে   বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করে জানিয়েছিলেন তীব্র ঝোড়ো হাওয়া থাকার কারণে হেলিকপ্টারে দীপঙ্করের উদ্ধারকার্য ব্যহত হয়েছে।

দীপঙ্করের অভিযানের আয়োজক সংস্থা সেভেন সামিটের তরফে ১৭ মে জানানো হয়েছিল মাকালু শৃঙ্গ (৮৪৮৫ মিটার) ছুঁয়ে নীচে নামার পথে ৮০০০ মিটার উচ্চতায় ৪ নম্বর ক্যাম্পের কাছাকাছি নিখোঁজ হন দীপঙ্কর (৫২)। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ অভিযাত্রীর দলের এক সদস্য নারায়ন সিং-এর সঙ্গে দীপঙ্কর এবং তাঁর গাইড বৃহস্পতিবার সন্ধের দিকে ৪ নম্বর ক্যাম্পের কাছাকাছি আটকে যান। এজেন্সির তরফে দীপঙ্করের বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে বহু পর্বতারোহী আটকে পড়ায় আগামী ২২ মে’র আগে পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয় বলে জানায় এজেন্সি।

আরও পড়ুন, বিপ্লব-কুন্তলের দেহ উদ্ধার করল শেরপার দল

১৬ মে রাতের পর থেকে দীপঙ্কর ঘোষের সঙ্গে এজেন্সির সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে নামার সময় তাঁর গতি খুব ধীর হয়ে এসেছিল বলে জানা যাচ্ছে। দীপঙ্করের শেরপাও আহত অবস্থায় ছিলেন। নিখোঁজ পর্বতারোহীর শরীরে তুষারক্ষতের আশঙ্কা করছিল এজেন্সি।

অন্যদিকে কাঠমান্ডু পোস্ট তাঁদের প্রতিবেদনে জানায়, শেষবার যেখানে দেখা গিয়েছিল দীপঙ্করকে, উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছে তাঁর খোঁজ পায়নি।

publive-image চো ইউ অভিযানের ছবি। (দীপঙ্কর ঘোষের ফেসবুক থেকে)

গত ৮ এপ্রিল মাকালু অভিযানের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন দীপঙ্কর ঘোষ। গত সেপ্টেম্বরেই তিনি জয় করেন চো ইউ শৃঙ্গ ।  হাওড়ার বেলানগর নিবাসী দীপঙ্কর ঘোষের এটিই ছিল সপ্তম আট হাজারি শৃঙ্গ জয়। এর আগে এভারেস্ট, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মানাসলু এবং ধৌলাগিরি শৃঙ্গ ছুঁয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশের মধ্যে নানা সফল অভিযান করেছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ধৌলাগিরি অভিযানে তুষারক্ষত (ফ্রস্ট বাইট)য় গুরুত্বর জখম হয় দীপঙ্করবাবুর হাতের আঙুল। দু’হাতের ৭টি এবং বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল আংশিক কেটে বাদ দিতে হয়। সেই অবস্থাতেই এক বছর কাটতে না কাটতেই ২০১৮-এর আগস্ট মাসে ফের বেরিয়ে পড়েছিলেন নতুন অভিযানে।

অন্যদিকে চন্দন নগরের পিয়ালি বসাককে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে নেপালের রাজধানীতে। এভারেস্টে ট্র্যাফিক জ্যাম থাকায় শৃঙ্গের ৪৫০ মিটার দূর থেকে সামিট না করেই ফিরে আসতে হয় পিয়ালিকে।সঙ্গে থাকা অক্সিজেন সাপোর্ট ফুরিয়ে আসায় পরের দিন ফের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েও সে সিদ্ধান্ত বদলান ২৮ বছরের পিয়ালি। হাতে সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার জন্য ইতিমধ্যে বাংলার পর্বতারোহী মহলে প্রশংসিত হচ্ছে পিয়ালির বিচক্ষণতা। কারণ পরের সকালেই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছোঁয়ার পথে অথবা শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেরার পথে তিন ভারতীয় পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর এসেছে।

Advertisment